আজ দাফন

এরশাদকে শ্রদ্ধা, জাপার ঐক্য চান কর্মীরা

সোমবার সকাল থেকেই সারাদেশ থেকে শত শত নেতাকর্মী জড়ো হন দলীয় চেয়ারম্যানকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। এ সময় তারা আবেগাপস্নুত হয়ে পড়েন

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মরদেহ সোমবার জানাজার জন্য জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে নেয়া হলে দলীয় নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেন -যাযাদি
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা। সোমবার সারা দেশ থেকেই দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হন রাজধানীর কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এ সময় 'বিবাদ' ভুলে গিয়ে নিজেদের 'ঐক্যকে' দলের স্বার্থে জোরদারের কামনা করেন তারা। এর আগে সকালে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ পস্নাজায় সাবেক এই রাষ্ট্রপতির দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বাদ আসর বায়তুল মোকাররমে তার আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল সকালে অনুষ্ঠিত সংসদ ভবনের দক্ষিণ পস্নাজায় এই জানাজায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতারা অংশ নেন। জানাজায় ইমামতি করেন সংসদ সচিবালয় মসজিদের ইমাম আবু রায়হান। জানাজা শেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এরশাদের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মরহুমের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সংসদনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়া স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষে সংসদের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপরই এরশাদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কাকরাইলের দলীয় কার্যালয়ে। সেখানেও সকাল থেকেই শত শত নেতাকর্মী জড়ো হন দলীয় চেয়ারম্যানকে শ্রদ্ধা জানাতে। এ সময় দলের নেতাকর্মীরা আবেগাপস্নুত হয়ে পড়েন। তারা চোখের জলে প্রিয় নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। এরশাদকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা থেকে এসেছেন নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'আমাদের স্যার আমাদের অভিভাবক ছিলেন। তিনি ছিলেন আমাদের পিতার মতো। তাকে হারিয়ে আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছি।' 'আমি বিশ্বাস করি, জাতীয় পার্টির প্রতিটি নেতাকর্মী স্যারের শেষ নির্দেশগুলো মেনে চলে ঐক্যবদ্ধ থাকবে। আর আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে পরপারে স্যারের আত্মা শান্তি পাবে,' যোগ করেন নুরুল ইসলাম। নোয়াখালীর জাতীয় পার্টির কর্মী শামসুদ্দিন আহমদ বলেন, 'আমাদের স্যার সবসময় জাতীয় পার্টিকে সন্তানের মতো লালন করেছেন। জাতীয় পার্টি ও এর প্রতিটি কর্মী ছিল তার সন্তান। আজ তিনি আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেছেন।' জাপার এই কর্মী আরও বলেন, 'স্যার, আমাদের সবসময় ঐকবদ্ধ রেখেছেন। আমরা আশা করি, আগামী দিনেও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা পলস্নীবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ থেকে জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নেবে।' এর আগে সকাল ১০টার কিছু পরে সাবেক রাষ্ট্রপতির মরদেহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘর থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে নিয়ে আসা হয়। রোববার সকালে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যান এইচ এম এরশাদ। সেদিনই বাদ জোহর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট কেন্দ্রীয় মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার মরদেহ সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হয়। বিগত শতাব্দীর আশির দশকে সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে টানা আট বছর রাষ্ট্রপতি পদে ছিলেন এরশাদ। নব্বইয়ের দশকের শেষে এক অভূতপূর্ব গণঅভু্যত্থানের মাধ্যমে বিদায় নেন এই সামরিক শাসক। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি নানা রোগে ভুগছিলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মারা যাওয়ার পর পরই দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা দলের পক্ষ থেকে সিএমএইচে গণমাধ্যমের কাছে এরশাদের ব্যাপারে পরবর্তী কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেন। এ সময় সেখানে জাতীয় পার্টির ঊর্ধ্বতন নেতারা উপস্থিত ছিলেন। রংপুর নেয়া হবে আজ বৃষ্টি ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে গতকাল এরশাদের মরদেহ রংপুর নেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, মঙ্গলবার হেলিকপ্টারে করে এরশাদের মরদেহ রংপুর নিয়ে যাওয়া হবে। বাদ জোহর রংপুর জেলা স্কুলের মাঠে এরশাদের শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানাজার স্থান পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানান মহাসচিব। আজই এরশাদের মরদেহ ঢাকায় ফিরিয়ে এনে সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানান মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি আরো জানান, পরদিন অর্থাৎ বুধবার রাজধানীর গুলশানের আজাদ মসজিদে এরশাদের কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।