প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা

জলাশয়গুলো আগের অবস্থায় ফেরানো হবে

শেখ হাসিনা বলেন, 'সবাইকে আমি অনুরোধ করব, বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জে বহু জলা-ডোবা পড়ে থাকে। কোনো একটা জায়গা যেন পড়ে না থাকে'

প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার গণভবনের জলাশয়ে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন -ফোকাস বাংলা
মাছ চাষ বাড়াতে জলাশয়গুলোকে আগের অবস্থায় ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে 'মৎস্য সপ্তাহ ২০১৯' এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমাদের যত জলাশয় আছে, পুকুর, খাল, বিল, নদী যা আছে, সেগুলো আমাদের স্থানীয় সরকার থেকে এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বক্ষেত্রেই আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছি, আমাদের প্রতিটি জলাশয়, সেগুলোকে আমরা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনব।' এ সময় ২১০০ সাল পর্যন্ত নেয়া ডেল্টা পরিকল্পনার কথা উলেস্নখ করেন প্রধানমন্ত্রী; যে পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য নদী খনন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করা। প্রধানমন্ত্রী জানান, গত ১০ বছরে মাছের উৎপাদন ৫৮.৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৪২ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। তার সরকারের লক্ষ্য মাছের উৎপাদন ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে নিয়ে যাওয়া। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মৎস্য আহরণে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয় এবং মৎস্য চাষে পঞ্চম। ইলিশ আহরণে বিশ্বে প্রথম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সবাইকে আমি অনুরোধ করব, বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জে বহু জলা-ডোবা পড়ে থাকে। কোনো একটা জায়গা যেন পড়ে না থাকে।' এ লক্ষ্যেই তার সরকারের সময় 'আমার বাড়ি আমার খামার' প্রকল্প নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। মাছের উৎপাদন বাড়িয়ে স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানির জন্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আমরা যে মাছ বিদেশে রপ্তানি করি, এই রপ্তানির ক্ষেত্রে মানটা বজায় রাখা একান্তভাবে দরকার। কারণ, আমাদের দেশে অতীতে কিছু দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর পেয়েছিলাম চিংড়ি রপ্তানিই বন্ধ হয়েছিল। আমরা অনেক দেনদরবার করে সেটা আবার চালু করেছি।' বর্তমানে মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের আন্তর্জাতিক মান নিরুপণে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় মাননিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, গত ১০ বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে ২১ শতাংশে নেমে আসায় মানুষের আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। মানুষের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার দিকে লক্ষ্য রেখে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। মৎস্য হ্যাচারি আইন ও বিধিমালা, মৎস্য খাদ্য ও পশুখাদ্য আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন এবং বিভন্ন জায়গায় মাছের অভয়াশ্রম সৃষ্টি করার কথাও উলেস্নখ করেন তিনি। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে প্রায় এক লাখ ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির কথা উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। এখন এই সমুদ্র সম্পদটা অর্থনৈতিক কাজে লাগাতে হবে। সমুদ্রসম্পদ আহরণে বস্নু ইকোনমি নামে নীতিমালা করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সমুদ্রের সম্পদগুলো আহরণ করা এবং এর মধ্যে মৎস্য একটা, সেগুলো আমরা আমাদের অর্থনীতিতে কিভাবে কাজে লাগাতে পারি, সেদিকে ইতোমধ্যে দৃষ্টি দিয়েছি। ইতোমধ্যে জরিপ জাহাজ 'আর ভি মীনসন্ধানী' কেনা হয়েছে। গভীর সমুদ্রে টুনা জাতীয় মাছ আহরণে ৯টি লং লাইনার ও ৭টি পার্স সেইনার প্রকৃতির ফিশিং লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রের খনিজ ও অন্যান্য সম্পদ নিয়ে গবেষণার জন্য একটি জাহাজ ভাড়া করার কথাও চিন্তা করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে মৎস্য খাতে অবদানের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে পুরস্কার দেন শেখ হাসিনা। পরে তিনি কেআইবি প্রাঙ্গণে মৎস্যমেলা ঘুরে দেখেন। এরপর গণভবনের লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।