ডয়চে ভেলেকে কাজল দেবনাথ

প্রিয়া সাহার বিচার হলে দুর্গন্ধ আরো বাড়বে

প্রকাশ | ২১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু 'ডিসঅ্যাপিয়ার্ড' হয়েছে-এমন কথা বলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রিয়া সাহা। তবে তার বিচার হলে 'দুর্গন্ধ আরো বাড়বে' বলে মনে করেন কাজল দেবনাথ। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের শীর্ষ নেতা কাজল দেবনাথ দাবি করেছেন প্রিয় সাহা কীভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গিয়েছেন তা তার সংগঠন জানে না। যদিও সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা। তিনি হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলেন, "বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ (৩৭ মিলিয়ন) সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান 'নাই' (ডিসঅ্যাপিয়ার্ড) হয়ে গেছে। এখনো সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষ থাকে। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার জমি ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু কোনো বিচার হয়নি।" প্রিয়া সাহার বক্তব্যে বাংলাদেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সরকারের মন্ত্রীরাও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কাজল দেবনাথ অবশ্য প্রিয়া সাহা যে সংখ্যার কথা বলেছেন তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'প্রিয়া বলেছেন ৩৭ মিলিয়ন ডিসঅ্যাপিয়ার্ড। ডিসঅ্যাপিয়ার্ড শব্দটির এখন সারা বিশ্বে বাংলা অর্থ বিচারবহির্ভূত গুম। এটা হবে মিসিং পপুলেশন।' তিনি বলেন, '১৯৪৭ সাল থেকে যদি আমরা হিসাব করি তাহলে এই ভূখন্ড থেকে ৩৭ মিলিয়ন মানুষ হারিয়ে গেছে। এটা কিন্তু অংকের কাছাকাছি। কারণ ওই সময়ে হিন্দু ছিল মোট জনসংখ্যার ২৯ ভাগ। ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারিতে তা মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ৭ ভাগ। তাহলে ২০ ভাগ হিন্দু জনগোষ্ঠী মিসিং। আবার সে বলেছে, এখন ১৮ মিলিয়ন হিন্দু আছে। এটাও কাছাকাছি। আমরা বলি ১ কোটি ৫০ লাখ, সে বলেছে ১ কোটি ৮০ লাখ। ১৯৪৭ সাল থেকে না বলায় বিভ্রান্তি হয়েছে।' বাড়ি পোড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সে বলেছে আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এটা ফ্যাক্ট। আড়াই মাস আগে তার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। জমিজমা কেড়ে নিয়েছে। সে এটা নিয়ে হইচই করেছে। অনেকের কাছে গিয়েছে।' তিনি আরো বলেন, 'ট্রাম্পের ওই অনুষ্ঠানের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে তিনজনের নাম চেয়েছিল। আমার হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টান এই তিন সম্প্রদায় থেকে তিন জনের নাম দিই। তারা হলেন: নির্মল রোজারিও, নির্মল চ্যাটার্জি এবং সুজিত বড়ুয়া। এখন প্রিয়া সাহা কী করে গেলেন সেটা আমরা জানি না। সে আমাদের সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক, তবে আমাদের নমিনেটেড না।' কাজল দেবনাথ বলেন, 'এরপর কথা হলো ১৩৪টি দেশের প্রতিনিধি ছিলেন। ৪০ জন ফরেন মিনিস্টার ছিলেন। আমাদের ফরেন মিনিস্টারও ছিলেন। তিনি আমাদের দলনেতা। তাদের সঙ্গে না থেকে প্রিয়া সাহা কিভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ২৭ জনের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন সেখানে ঢুকলেন এটা বড় প্রশ্ন।' তিনি বলেন, 'ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৭ জনের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন। সেই ফুটেজ কিভাবে বাইরে এলো? এটা ট্রাম্পের অফিস যদি করে থাকে তাহলে তার একটা চেইন আছে। সেই চেইনে বাংলাদেশ কেন নেই।' তিনি আরো বলেন, 'তিনি যে ট্রাম্পের কাছে গিয়ে নালিশ করেছেন এটা যৌক্তিক নয়। এটা আমরা করতে পারি না। তবে তারা কেউই এখনো দেশে ফেরেননি। ফিরলে পুরো বিষয়টি জেনে আমরা সংবাদ সম্মেলন করব।' তবে প্রিয়া সাহার বক্তব্য নিয়ে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে তাকে 'বাড়াবাড়ি' মনে করছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, 'তিনি হয়তো ডিসপেস্নসড বলতে গিয়ে ডিসঅ্যাপিয়ার্ড বলেছেন। এ ধরনের ভুল আমাদেরও হতে পারে। তাই এটা নিয়ে এখন যা হচ্ছে আমার কাছে অনেক বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে।' তিনি বলেন, 'আমাদের রিঅ্যাকশনগুলো হঠকারিতার শামিল হয়ে যাচ্ছে। এত বেশি রিঅ্যাকশন দেখানোর কিছু নেই।' প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ প্রসঙ্গে কাজল দেবনাথ বলেন, 'মামলাতো করতেই পারে। রাষ্ট্রদ্রোহী মনে করলে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করতে পারে। তবে বিচারে গেলে আমি তো মনে করি দুর্গন্ধ আরো বাড়বে। কিন্তু কেন দুর্ঘন্ধ বাড়বে তার কোনো ব্যাখ্যা এই মুহূর্তে দিতে চাননি কাজল দেবনাথ। ডয়চে ভেলে