নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল

চার ইসু্যতে আটকে আছে আ'লীগের সাংগঠনিক কাজ

চলতি বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই সারা দেশের তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ে সম্মেলন শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট ডেঙ্গু, বন্যা, ছেলেধরা গুজব ও শোকের মাস আগস্টের কারণে আটকে আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। তবে নির্ধারিত সময়ে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হবে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সূত্রমতে, দেশব্যাপী ডেঙ্গুর বিস্তার ঠেকাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নানা উদ্যোগ এবং এ নিয়ে কম-বেশি সাংগঠনিক পদক্ষেপ দেখা গেলেও সমালোচনার বাইরে থাকতে পারছে না সরকার। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতারা। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। রাজনীতির মাঠে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকায় কয়েক বছর ধরে নির্ভার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে সম্প্রতি বন্যা ও ডেঙ্গুর মতো দুর্যোগ এবং বহুমাত্রিক গুজব আওয়ামী লীগকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। এরই মধ্যে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও নির্মাণরত স্বপ্নের পদ্মা সেতু জোড়া লাগাতে এক লাখ মানুষের 'কাটা মাথা' লাগার গুজব ক্ষমতাসীনদের ভেতরে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ডেঙ্গু, বন্যা ও গুজব নিয়ে যেন সামাজিক অসন্তোষ তৈরি হতে না পারে সেজন্য সরকারের পাশাপাশি দলও সক্রিয়। আলোচিত ইসু্যগুলোর সুযোগ যেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নিতে না পারে, এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গেল জুলাই মাসে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে অন্যতম নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতাকারী দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ। কিন্তু গুজব, ডেঙ্গু ও বন্যার মতো ইসু্যর নিচে চাপা পড়েছে সেসব বিষয়। সাংগঠনিক ধারা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে সারা দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ তৃণমূলের কমিটি গঠনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হলেও বেশিরভাগ জেলা-উপজেলায় আপাতত এ তৎপরতা নেই। দলীয় নেতারা বলছেন, সরকারবিরোধী অপশক্তির গুজব মোকাবিলা, বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো এবং মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু মোকাবিলার মতো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়ায় দলীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। দলের সভাপতিমন্ডলীর একজন সদস্য যায়যায়দিনকে বলেন, দেশের মানুষের জন্যই আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে। দেশের মানুষ ভালো থাকলে, আওয়ামী লীগও ভালো থাকবে। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইসু্যগুলো নিয়ন্ত্রণে আসলে দলের সিদ্ধান্তগুলো একে একে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালেই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার নির্দেশ দেন। এ নিয়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, 'যতদিন দেশ ডেঙ্গুমুক্ত ও এডিস মশা নির্মূল না হবে, ততদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এটাই আমাদের অঙ্গীকার। এখন সময়টা অত্যন্ত সংবেদনশীল। দেশের মানুষকে ডেঙ্গু আতঙ্ক থেকে রক্ষা করতে হবে।' সূত্র মতে, দেশে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ায় বিপাকে পড়ে সরকার। মশাবাহিত এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করাই এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ইতোমধ্যে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ হাজার ছাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শমতো এই রোগের বিস্তার রোধে ঢাকাসহ সারা দেশের সব সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২১ জুলাই থেকে আওয়ামী লীগের নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত ও দলীয় ঘোষণা থাকলেও বন্যাপরিস্থিতির কারণে ওই কার্যক্রম পিছিয়ে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের বিভিন্ন এলাকার বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে তখন আলাদা আলাদা প্রতিনিধি দল গঠিত হয়। উপজেলা পরিষদের গত নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত অন্তত ২০০ নেতাকে গত ২৮ জুলাই থেকে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত থাকলেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার কারণে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন থেকে সরে এসেছে আওয়ামী লীগ। বন্যার্তদের পাশে দলের নেতাকর্মীদের দাঁড়ানো ও তাদের সহায়তার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয় আওয়ামী লীগ। চলতি বছর অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে 'বিদ্রোহ প্রার্থী' হওয়া অনেকে জয়ীও হন। তাদের মধ্যে অনেকের এলাকা বন্যার কবলে থাকায় সিদ্ধান্ত নিয়েও দলের কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানো হয়নি। চলতি বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই সারা দেশের তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ে সম্মেলন শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করা, এর আগের প্রস্তুতি হিসেবে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও তৃণমূলের নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে বিশেষ প্রস্তুতি নেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কেন্দ্রীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ও উপজেলাগুলোতে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি করার ঘোষণা দেয়ায় তৃণমূলে চাঞ্চল্য ফিরে আসে। এর মধ্যে তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে আটটি বিভাগীয় টিম গঠন করে দেন। তৃণমূল কমিটি গঠনের লক্ষ্যে অনেক জেলায় বর্ধিত সভাও শেষ করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে গুজব, বন্যা, ডেঙ্গু ও শোকের মাসের কারণে জেলা ও উপজেলায় এখন কমিটি গঠনের কার্যক্রম নেই। কেন্দ্র থেকে দলের নেতাকর্মীদের বন্যা ও ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের পাশে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ যায়যায়দিনকে বলেন, আগস্ট মাস বাঙালি জাতির শোকের মাস। এ মাসে তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়েছেন। সে কারণে সাংগঠনিক কর্মকান্ড কিছুটা ঢিমেতালে চলে বরাবরই। তবে এবার শোকের মাসের কর্মসূচির সঙ্গে ডেঙ্গুর মতো প্রাকৃতিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিও পালন করতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। এর সঙ্গে রয়েছে নানা গুজব ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত। সে কারণে এসব বিষয়কে আপাতত অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে উলেস্নখ করে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের দল। জনগণের মঙ্গলে ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে দলটি জনসমস্যা সমাধানকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। আগস্ট মাস শেষ হলে এবং চলমান ডেঙ্গু সংকটের উন্নতি হলে সাংগঠনিক কর্মকান্ড অনেক বেশি গতিশীল হয়ে উঠবে।