বি.বাড়িয়ায় বিএনপি নেতার বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাতের আঁধারে বিদু্যৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হারুন-আল-রশীদের বাড়ির সীমানা প্রাচীর ও স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বাড়িটিতে বর্তমানে "মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিক" নামে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত দুটা থেকে ভোররাত সকাল সাতটা পর্যন্ত এই তান্ডব চালানো হয়। এ ঘটনায় শহরবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। খবর পেয়ে বুধবার সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল কবীর, বিএনপি নেতার বাড়ি \হসদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার, জেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান মোলস্না কচি, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজসহ শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ফটক থেকে প্রায় ৩০-৪০ ফুট পশ্চিমে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব ও রেডক্রিসেন্ট ভবন লাগোয়া উত্তরদিকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হারুন-আল-রশিদের মালিকানাধীন বাণিজ্যিক এই ভবনটি ভাড়া নিয়ে গত ২০/২৫ বছর ধরে মো. জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি "মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিক" নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানান, গত কয়েক মাস আগে "মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিক"-এর পশ্চিমে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. জাকারিয়া, শহর যুবলীগের আহ্বায়ক আমজাদ হোসেন রনি, সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু কাউছার, শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম তৌছির, ব্যবসায়ী উবায়দুল হক, মো. বাছিরসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মিলে প্রস্তাবিত ডা. জাকারিয়া মা ও শিশু জেনারেল হসপিটাল প্রতিষ্ঠার জন্য একটি জায়গা কিনেন। এখন এই হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। প্রস্তাবিত হাসপাতালের রাস্তা "মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিক"সহ বিভিন্ন লোক দ্বারা দখলে আছে দাবি করে গত ৩ জুলাই প্রস্তাবিত "ডা. জাকারিয়া মা ও শিশু জেনারেল হসপিটাল লিমিটেড"-এর পক্ষ থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. জাকারিয়া দখলকৃত জায়গা দখলমুক্ত করার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌর মেয়রের কাছে লিখিত আবেদন করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত মঙ্গলবার রাত দুইটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত বুলডোজার নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে প্রথমে "মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিক"-এর বিদু্যৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে তারা ওই ক্লিনিকের সীমানা প্রাচীর, রোগীদের বসার স্থান (ওয়েটিং রুম)সহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভাঙচুর, ক্লিনিকের ভেতরে থাকা কয়েকটি গাছ কেটে ফেলে। বুধবার সকাল সাতটা পর্যন্ত এই তান্ডব চালানো হয়। পরে দুর্বৃত্তরা কয়েকটি ট্রাক্টরে করে ক্লিনিকের মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের পরিচালক আজিজুল হক বলেন, রাতের আঁধারে একদল দুর্বৃত্ত এসে ক্লিনিক ভাঙচুর করে। তারা ক্লিনিকের সীমানা প্রাচীর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। ক্লিনিকের দুটি ফটক, একটি জেনারেটর, একটি আল্ট্রাসনোগ্রাফ মেশিন ও একটি এসি ট্রাকে করে নিয়ে যায়। এছাড়া ক্লিনিকের তিনটি জেনারেটর, সাতটি এসি, একটি আলট্রাসনোগ্রাফ মেশিন ও ৫টি কম্পিউটার নষ্ট করে ফেলে। এতে তাদের প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির বলেন, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তিনি জানান, আগে চিকিৎসক মো. জাকারিয়া রাস্তাটি দখলমুক্ত করার জন্য তার কাছে একটি আবেদন করেছিলেন। আবেদনটি প্রকৌশল শাখায় রয়েছে। তিনি বলেন, রাতের আঁধারে এ ধরনের জঘন্য কাজ মেনে নেয়া যায় না। তিনি এই ঘটনার নিন্দা জানান ও দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার বলেন, তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। যারা এ ধরনের বর্বরোচিত ঘটনার সাথে জড়িত তদন্তসাপেক্ষে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, রাতের বেলা ভাংচুর চালানো হলেও কেউ তাদের কাছে অভিযোগ করেননি। ঘটনা শুনে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় মামলা হলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল কবীর বলেন, সকালে ভাঙচুরের ঘটনাটি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে শহর যুবলীগের আহ্বায়ক আমজাদ হোসেন রনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ঘটনার সাথে জড়িত নন। তিনি ঈদের দিন থেকেই অসুস্থ। তিনি বলেন, ওইখানে ২৬ শতক জায়গা কিনে চিকিৎসক জাকারিয়াসহ বেশ কয়েকজন একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে পৌর এলাকার পুনিয়াউটের বাসিন্দা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রস্তাবিত হাসপাতালে তার শেয়ার আছে। তবে ভাঙচুর সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। প্রস্তাবিত "ডা. জাকারিয়া মা ও শিশু জেনারেল হসপিটাল লিমিটেড"-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. জাকারিয়া বর্তমানে মালদ্বীপ অবস্থান করায় তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। ভবনের মালিক আলহাজ অ্যাডভোকেট হারুন-আল-রশিদ দেশের বাইরে থাকায় তার সাথেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তার একজন আত্মীয় জানিয়েছেন এ ঘটনায় তারা মামলা করবেন।