ভিড় নেই চাঁদপুরের ইলিশ বাজারে, কমেনি দামও

প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইলিশের জন্য দেশব্যাপী পরিচিত চাঁদপুর। এখানকার ইলিশের বাজার দেশের মধ্যে অন্যতম। বছরের এ সময় পা ফেলারও জায়গা মেলে না চাঁদপুরের সবচেয়ে বৃহৎ ইলিশের বাজার বড়স্টেশন আড়তে। পাইকারি ও খুচরা দরে ইলিশ কিনতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদপুরের এ বাজারে আসেন ক্রেতারা। দম ফেলার ফুসরত মেলে না বিক্রেতাদেরও। পাশাপাশি ইলিশের দামও থাকে তুলনামূলক কম। তবে এ বছরের এ সময়ে তেমন ভিড় দেখা যায়নি চাঁদপুরের বড়স্টেশন ইলিশের আড়তে। কমেনি ইলিশের দামও। বুধবার ইলিশের বাড়িখ্যাত চাঁদপুরের বড়স্টেশন আড়ত ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়। বড়স্টেশন আড়তে বড় আকারের অর্থাৎ এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়, মাঝারি আকারের ইলিশ ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজির কম ওজনের ইলিশ কেজিপ্রতি ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায়, আর ছোট আকারের অর্থাৎ ৫০০ গ্রাম থেকে ৮০০ গ্রামের নিচে পর্যন্ত ইলিশ কেজিপ্রতি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। মোহাম্মদ রুহুল আমিন নামে এক ইলিশ ব্যবসায়ী বলেন, প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর যাবত এখানে ব্যবসা করছেন। বর্তমানে ইলিশের আমদানি কম। ফলে দামও চড়াই যাচ্ছে। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ মণপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা, দুটি মিলে দেড় কেজি ওজন এমন ইলিশ মণপ্রতি ২৬ হাজার, ছোট ইলিশ (তিনটি মিলে এক কেজি ওজনের) মণপ্রতি ১৮ থেকে ২০ হাজার এবং দেড় কেজি থেকে দুই কেজি ওজনের ইলিশ মণপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোহাম্মদ সেকান্দার মোলস্না নামে এক বিক্রেতা বলেন, প্রায় পাঁচ বছর ধরে এখানে ইলিশের ব্যবসা করছেন। অন্যান্য বছর এ সময় ইলিশের এ বাজারে পা ফেলার জায়গা থাকে না। দামও থাকে কম। তবে এ বছর এখন বাজারে মাছও নেই তেমন, নেই লোকও। আর মাছ কম থাকায় দামও যাচ্ছে চড়া। সোহেল গাজী নামে এক ইলিশ ব্যবসায়ী জানান, এ সময় ইলিশের আমদানি বেশি থাকার কথা থাকলেও বিগত বছরগুলোর তুলনায় তা অনেক কম। ফলে বাজারে মাছও কম, তাই দামও বেশি। কিছু উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ইলিশ আসছে। তবে চাহিদার তুলনায় তাও অনেক কম। এ ছাড়া এখানকার জেলেদের জালেও কম ইলিশ ধরা পড়েছে। সামনে জেলেরা নামবে। তখন যদি ইলিশ উঠে, তাহলে আবার আগের চিত্রে ফিরে আসবে এখানকার বাজার। লিটন নামে এক আড়ত শ্রমিক জানান, চার থেকে পাঁচ বছর এখানে কাজ করছেন। সিজন হিসেবে এবার মাছ অনেক কম। তাই দামও অনেক চড়া যাচ্ছে। এছাড়া মাঝে সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাই এখানে মাছ আমদানি কম হয়েছে। আবার সামনেও নিষেধাজ্ঞা আসছে। ইশতিয়াক আহমেদ নামে এক ক্রেতা বলেন, ভেবেছিলেন কোরবানির সময় ইলিশের দাম কম থাকবে। অন্য বছরও তাই থাকে। তবে এ বছর দাম বেশ চড়া। কেন তা জানি না। তবে দাম আরও কম থাকার কথা। নুরুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, ইলিশের বাজার ঘুরছেন। তবে দাম বেশ চড়া। আবুল কালাম নামে এক ক্রেতা জানান, বেশ চড়া দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা। অন্য বছর কোরবানির সময় ইলিশের দাম কিছুটা কমই থাকে। তবে এ বছর নাকি মাছ কম, তাই দামও কমেনি। দাম কেন চড়া এমন প্রশ্নের উত্তরে ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, মাছ কম থাকায় এখন দামটা একটু চড়া যাচ্ছে। আসলে এবার বৃষ্টি কম হয়েছে। তাই পানিও ছিল কম। এতে এ নদীতে মাছও এসেছে কম। ফলে দাম চড়া। তাছাড়া জেলেরা এখনও সেভাবে মাছ ধরতে যায়নি। কয়েকদিনের মধ্যেই যাবেন তখন যদি প্রচুর মাছ ধরা পড়ে, তাহলে হয়তো দাম কমে যাবে। জলিল নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রায় ১২ বছর ধরে এখানে আছেন। বছরের এ সময় বিপুল পরিমাণ মাছ থাকার কথা। ক্রেতাদের ভিড়ে হাঁটাও মুশকিল হয় এখানে। মাছের দাম থাকে আকারভেদে তিনশ থেকে ছয়-সাতশ টাকা কেজি। অথচ এবারের চিত্র পুরোই ভিন্ন। সকাল থেকে অন্য মাছ দিয়ে কোনোরকমে বাজার ধরে রাখতে হয়েছে। তবে আশা করছি, সামনে আরও ইলিশ আসবে। তখন দাম হয়তো কিছুটা কমবে।