এফিডেভিট করে বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন মেয়ে

প্রকাশ | ২০ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রুহুল আমিন, নওগাঁ প্রতিনিধি নওগাঁয় এফিডেভিট করে বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন রজনী আক্তার (২১) নামে এক কলেজছাত্রী। তিনি বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার ছাতনী মাতোপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম এবং মৃত জুলেখা বানুর মেয়ে। তিনি সান্তাহার সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার নানার বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়নের চুনিয়াগাড়ী গ্রামে এবং নানার নাম মতিন প্রামাণিক। রোববার (১৮ আগস্ট) নওগাঁ জজ কোর্টের আইনজীবী হারুন অর রশীদ এবং নোটারী পাবলিক মো. সোলাইমান আলী চৌধুরী স্বাক্ষরিত ৩০০ টাকার দলিলে এফিডেভিটের মাধ্যমে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন তিনি। এফিডেভিট সূত্রে জানা যায়, রজনী আক্তারের মা জুলেখা বানু ২০০৭ সালে আলসার রোগে মারা যান। তার মায়ের গর্ভের তিন সন্তান। তিনি সবার বড়। মা মারা যাওয়ার পর ছোট বোন জান্নাতুন তার চাচার কাছে প্রতিপালিত হচ্ছে। ছোট ভাই বিজয় মুরগির ফিডের একটি দোকানে থাকে। আর বাবা জাহাঙ্গীর আলম নতুন করে বিয়ে করে সংসার করছেন। রজনী আক্তার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা অবস্থায় মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা লেখাপড়ার সব খরচ বন্ধ করে দেন। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় পড়াশোনা করে এসএসসিতে জিপিএ ৫ অর্জন করেন। টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতেন। সেই সঙ্গে বাবাকে সহযোগিতা করতেন। কিন্তু তার বাবার টাকার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসী ছেলেদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এতে রাজি না হওয়ায় তার ওপর চলত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে দুইদিন ওই ছাত্রীকে একটি ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করেন তার বাবা। এরপর শিমুলিয়া গ্রামের প্রবাসী সৈকত আলীর কাছ থেকে দু'দফায় ৭০ হাজার টাকা নিয়ে গত ২৭ অক্টোবর জোর করে তার সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। এই সৈকত আলী (৫৫) এর আগেও একাধিক বিয়ে করেছেন এবং তার ছেলে-মেয়ে আছে। বিয়ের পর থেকে বাবা জাহাঙ্গীর আলম জামাইয়ের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে স্বামী তাকে গালাগাল ও মারধর করতেন। তাকে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষাও দিতে দেয়া হয়নি। অন্যদিকে, টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় একাধিক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে মেয়ের সংসার ভেঙে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়। এ ছাড়া গোপনে মেয়ের নগ্ন ছবি সংগ্রহ করে বস্নাকমেইল করতে চান ওই লোভী পাষন্ড বাবা। গত বছরের ৯ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় যান স্বামী সৈকত আলী। এরপর স্বামীর বাড়ি থেকে রজনী আক্তার তার নানার বাড়িতে এসে মামাদের আশ্রয়ে রয়েছেন। প্রায় একমাস হলে সৈকত আলী বাড়িতে এসে রজনী আক্তারকে নিতে চান। কিন্তু তিনি আর বৃদ্ধ স্বামীর সংসার করতে চান না। অন্যদিকে বাবার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। রজনী আক্তারের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'আমি মেয়েকে কোনো ধরনের নির্যাতন করিনি। টাকা নিয়েও প্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়নি। মেয়ে নিজ থেকেই বিয়ে করেছে। গত চার মাস থেকে মেয়ের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। এখন যদি এফিডেভিট করে আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাহলে আর কী করার।' রজনী আক্তারের স্বামী সৈকত আলী বলেন, 'মেয়ের বাড়িতে ঘটক পাঠিয়ে প্রস্তাব দিয়ে বিয়ে করেছি। বিয়েতে এক লাখ টাকা মোহরানা ধরা হয়েছিল। সে সময় নাক ও কানের সোনার জিনিস দেয়া হয়েছিল। আমি বিদেশ যাওয়ার পর চিকিৎসার নাম করে স্ত্রী রজনী আক্তার বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। দেশে আসছি প্রায় এক মাস হলো। স্ত্রীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। এখন স্ত্রী যদি ভাত খেতে চায় দেব, এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে মেয়ের বাবা চিটার প্রকৃতির মানুষ বলেই জানি।'