বিকল্প বিনিয়োগে ফি কমানোর উদ্যোগ

প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল ব্যবস্থাপকদের সব ধরনের ফি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর ফলে বিনিয়োগ তহবিল ব্যবস্থাপকরা বিকল্প বিনিয়োগে আরও উৎসাহিত হবে। ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান বিকল্প বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে। বিকল্প বিনিয়োগের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে কোনো পূর্বনির্ধারিত লাভ (সুদ) থাকে না। তারা মূলত ক্ষুদ্র ও নতুন কোম্পানির একমাত্র অর্থনৈতিক উৎস হিসেবে কাজ করে। ফলে তহবিল ব্যবস্থাপনা কোম্পানি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে একই রকম ঝুঁকি বহন করে থাকে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলো (গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন ইত্যাদি) ভেঞ্চার তহবিলের অর্থায়নে গড়ে উঠেছে এবং বিনিয়োগের শতগুণ বা তারও বেশি মূল্য সংযোজন করেছে। বাংলাদেশে কর সুবিধা না থাকায় এ শিল্পটি বিকাশ লাভ করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগ শুরুর আগেই ২ শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হয়। আবার বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল ব্যবস্থাপকদের ৩৫ শতাংশ কর দিতে হয়। এতে ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। তাই ব্যবসা সহজ করার লক্ষ্যে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে যে বাৎসরিক ফি, আবেদন ফি ও নিবন্ধন ফি দিতে হয় তা সহনীয় মাত্রায় নির্ধারণ করার সুপারিশ করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল বাংলাদেশে অনেকটা আড়ালেই আছে। এভাবে বিনিয়োগের বিষয়টা জনপ্রিয় ও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করতে তাদের কিছু বিষয়ে ছাড় দেয়া উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যাতে আর্থিক খাতসহ পুঁজিবাজারে একটা ইতিবাচক ধারা তৈরি হয়। তবে বিষয়টা এখনো আলোচনা পর্যায়েই রয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে বলা হয়েছে, তহবিল ও তহবিল ব্যবস্থাপকের উপর আরোপিত কর ও স্ট্যাম্প ডিউটিতে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। এবং তা ভেঞ্চার ক্যাপিটালের জন্য সহায়ক নয়। আপাতত কর ও ডিউটি মুক্ত সুবিধা দেয়া হলে অদূর ভবিষ্যতে সরকারের আয় বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। একই সূত্রে জানা গেছে, এনবিআর থেকে বলা হয়েছে, এ ধরনের উদ্যোগকে উৎসাহিত করার জন্য আইপিওতে বিকল্প বিনিয়োগ এর জন্য কোটা নির্ধারণ করার বিষয়টি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পর্যালোচনা করে দেখতে পারে। এদিকে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইকু্যইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিএবি) বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল ব্যবস্থাপক ও ভেঞ্চার ক্যাপিটালে উচ্চ সম্পদধারী ব্যক্তি (হাই নেট অর্থ ইন্ডিভিজু্যয়াল) যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করবে, তার ওপর আরোপিত কর মওকুফের দাবি জানিয়েছে। ভিসিপিএবি চেয়ারম্যান শামীম আহসান বলেন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সরাসরি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং প্রায়ই ক্ষুদ্র ও নতুন কোম্পানির একমাত্র অর্থনৈতিক উৎস হিসেবে কাজ করে। তাই বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ও উচ্চ সম্পদধারী ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের কর মওকুফ ও প্রভিডেন্ড ফান্ড বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর ছাড়ের নীতি সহায়তা পেলে এই খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসতে পারে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিগুলো যথাযথ নীতি সহায়তা পেলে স্টার্টআপ খাতে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে। এতে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। তার মতে, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ছাড়া আমাদের উচ্চ আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। আর যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হচ্ছে। যদিও ব্যবসা সহজীকরণ ও আমাদের নিজস্ব স্থানীয় অংশগ্রহণ বিষয়ে তাদের দুশ্চিন্তা রয়ে গেছে। বাংলাদেশে প্রচলিত সুদ ব্যবস্থায় অভ্যস্ততার কারণে ব্যাংক, বিমা ও উচ্চবিত্তরা নতুন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল মডেলে ব্যবসায় উৎসাহী নয়। এজন্য ব্যাংক, বিমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ থেকে ভেঞ্চার ক্যাপিটালে বিনিয়োগ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছে ভিসিপিএবি। এ খাতে অর্থায়নের সুযোগ বাড়াতে বিনিয়োগের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর সঞ্চিতি ১৫০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে ভিসিপিএবি। ঝুঁকি কমাতে এ ধরনের তহবিলের জন্য প্রিমিয়ামে বিশেষ ছাড় দিয়ে বিমা চালুর প্রস্তাবও দিয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। একই সঙ্গে প্রভিডেন্ড ফান্ড বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর ছাড়ের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কর আরোপের প্রেক্ষিতে এ দাবি জানানো হয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ব্যবসা নেই বলে দেশি উদ্যোক্তারা (যেমন বিকাশ, পাঠাও) অন্যান্য দেশে কোম্পানি নিবন্ধন ও মূলধন উত্তোলনে আগ্রহী। এতে বাংলাদেশের অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য সরকারি নীতি সহায়তা প্রয়োজন। ভিসিপিএবি মহাসচিব ও বিডি ভেঞ্চার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত হোসেন বলেন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও প্রাইভেট ইকু্যইটি খাতটি এখন বর্ধনশীল পর্যায়ে রয়েছে। অল্টারনেটিভ ফান্ড ম্যানেজারদের আয়কর আগামী ১০ বছরের জন্য পুরোপুরি অব্যাহতি কিংবা আয় করের হার কমানো দরকার। তার মতে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে তাদের প্রধান ব্যবসায় থেকে আয় পেতে সাধারণত এই সময়ের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিগুলো যথাযথ নীতি সহায়তা পেলে স্টার্টআপ খাতে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে। জানা গেছে, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড মোবিলাইজেশন হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি প্রক্রিয়া। কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতসহ সব বাস্তব খাতের নতুন মেধা এবং প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের মাধ্যম এটি।