নতুন গাড়ি টার্গেট করে জিম্মিচক্রের নিখুঁত ছক

প্রকাশ | ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মাদারীপুরের শিবচর থেকে আটক করা অপহরণকারী চক্রের চার সদস্য। ছবিটি শুক্রবারর্ যাবের মিডিয়া সেন্টার থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা
যাযাদি রিপোর্ট নতুন গাড়ি-প্রাইভেটকার দেখলেই মালিক কিংবা চালককে টার্গেট করা ছিল অপহরণের প্রথম ধাপ। এরপর সুকৌশলে ভাড়া নিয়ে যাত্রীবেশে উঠে গাড়ি অপহরণ করতেন তারা। গাড়ি ও ভুক্তভোগীকে রাখতেন জিম্মি করে। পরিবারের সদস্যদের কাছে ফোন দিয়ে ভুক্তভোগীর কান্না শুনিয়ে মুক্তিপণ আদায় করতেন তারা। সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুর থেকে প্রাইভেটকারসহ অপহৃত মো. এনায়েত উলস্নাহ (৩২) নামে এক ভুক্তভোগীকের্ যাব-৪ এর একটি দল অভিযান চালিয়ে মাদারীপুর জেলার শিবচর থানাধীন দুর্গম চরের কাশবন থেকে উদ্ধার করে। এর সঙ্গে জড়িত অপহরণকারী চক্রের চার সদস্যকে আটকের পর এসব তথ্য জানিয়েছের্ যাব। আটকরা হলেন- শাহ জালাল (৩২), মো. ফয়সাল (২২), জয়নাল হাজারী (৩০) ও রাকিব (২২)। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানর্ যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, সম্প্রতি ১২ লাখ টাকার নতুন প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ ২৭-৬৮৮৯) ৬ লাখ টাকা বাকিতে কেনার পর ভাড়ায় চালানো শুরু করেন এনায়েত উলস্নাহ। তার প্রাইভেটকারে রাজধানীর রূপনগর থানাধীন শিয়ালবাড়ী মোড় হতে গত ১৯ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টায় মাদারীপুর যাওয়ার কথা বলে দুজন যাত্রীবেশে ভাড়ায় ওঠেন। পদ্মা নদী পার হয়ে রাত ২টায় কাঁঠালবাড়ী এলাকায় পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা অপহরণকারী চক্রের তিন সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে গাড়ি থামানোর সিগনাল দিয়ে নতুন গাড়ি টার্গেট করে জিম্মিচক্রের নিখুঁত ছক \হতলস্নাশির নামে প্রাইভেটকারটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এনায়েত উলস্নাহর হাত-পা বেঁধে অপহরণপূর্বক মাদারীপুরের শিবচর থানাধীন দত্তপাড়া চর এলাকায় কাশবনের একটি ছোট ঘরে আটকে রাখে। প্রাইভেটকারটি অপহরণকারীরা চালিয়ে নিয়ে গিয়ে ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানাধীন আটরশি জাকের মঞ্জিলের পার্কিংয়ে লুকিয়ে রাখে। অপহরণকারীরা হাত ও চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় এনায়েত উলস্নাকে ৪ দিন ধরে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। মোবাইল ফোনে মারধরের শব্দ, কান্নার চিৎকার শুনিয়ে তার পরিবারের নিকট ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালে খুন করার হুমকিও দেয়। ভুক্তভোগীর বড় ভাই কেফায়েত উলস্নাহ রূপনগর থানায় জিডি করেন ওর্ যাব-৪ এর সহযোগিতা চান। পরে তদন্ত শেষের্ যাব-৪ এর একটি দল মাদারীপুর জেলার শিবচর দুর্গম এলাকা হতে শুক্রবার ভোরে এনায়েত উলস্নাহকে ও প্রাইভেটকারটি উদ্ধারসহ অপহরণে জড়িত ৪ জনকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা নয়ন তারা (২৩), সজিব (২২), রেজাউল (২৮), রবমিয়া (২৪), কামরুল (২৫) এবং মেহেদী হাসান (২৩) নামে জড়িত আরও ৬ জনের নাম প্রকাশ করেছে। র্ যাব-৪ সিও বলেন, আটকরা তিন বছর যাবৎ বিভিন্ন কৌশলে গাড়িচালক, মালিক ও ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে। ফোনের নম্বর সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন ও কৌশলে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল। অপহরণের কৌশল প্রথমত : ঢাকাসহ আশপাশ এলাকার বাসস্টেশন থেকে যাত্রীবেশে তাদের গন্তব্য স্থানে যাওয়ার কথা বলে মাইক্রো বা প্রাইভেটকার ভাড়া করে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা। তারা গাড়ির মূল্য, ভুক্তভোগীর বয়স ও আর্থিক অবস্থা-সংক্রান্তে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে তাদের অপহরণের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত করে। গাড়িতে উঠার পর গাড়ি চলা অবস্থায় ভুক্তভোগীকে অজ্ঞান করে অথবা হাত-পা ও মুখ বেঁধে অথবা অত্যন্ত সুকৌশলে তাদের পরিকল্পিত এলাকায় নিয়ে জিম্মি করে সব হাতিয়ে নেয় অপহরণকারীরা। দ্বিতীয়ত : যাত্রীবেশে গাড়িতে অবস্থান করা অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা তাদের পূর্বনির্ধারিত স্থানে পৌঁছানো মাত্র আগে থেকে অবস্থান নেয়া অপহরণকারী চক্রের অন্য সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে গাড়ি তলস্নাশির নামে ভুক্তভোগীকে গাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসে। এরপর গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় তারা। তৃতীয়ত : অপহরণকারীরা গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে অস্ত্র দ্বারা মৃতু্যর ভয় দেখিয়ে গাড়িসহ ভুক্তভোগীকে পৃথকভাবে নিয়ে যায়। চতুর্থত : অপহরণকারীরা নির্জন চর, আঁখ ক্ষেত বা কাশবনে ভুক্তভোগীকে আটকে রাখে এবং মুক্তিপণের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। মোবাইল ফোনে ভুক্তভোগীর নির্যাতন ও কান্নাকাটি শুনিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে। পঞ্চমত : ভুক্তভোগীকে জিম্মি বাবদ মুক্তিপণ আদায় করে অপহরণকারীরা। এরপর প্রাইভেটকার কিংবা গাড়ি বাবদ টাকা আদায় করে। এরপরও কাগজপত্র আটকে রেখেও টাকা আদায় করে। র্ যাব-৪ অধিনায়ক বলেন, আটকদের সঙ্গে জড়িত অপহরণকারী চক্রের বাকি সদস্যদের আটকের চেষ্টা চলছে।