প্রসবের পর জরায়ুর ভেতর সুঁই-সুতা রেখেই সেলাই!

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি ভুলক্রমে হয়েছে

প্রকাশ | ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে সন্তান প্রসবের পর এক প্রসূতির জরায়ুর ভেতর সুঁই-সুতা রেখেই সেলাই করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুলতানা লাকী ও তার সহযোগী নার্সরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর স্বজনরা। দুই দিন ধরে হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করার পর এক্স-রে করায় এই ঘটনা ধরা পড়ে। এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার দাবি জানিয়েজেন রোগীর স্বজনরা। প্রসূতির খালাশাশুড়ি রনজিনা আক্তার জানান, প্রায় দেড় বছর আগে রংপুর সদর উপজেলার পাগলাপীর এলাকার ইদ্রিস আলীর ছেলে তানজিদ হোসেনের সঙ্গে একই উপজেলার পানবাজার এলাকার আমিনুর রহমানের মেয়ে আফরোজা বেগমের (১৯) বিয়ে হয়। বিয়ের পর তানজিদ রংপুর নগরীর আদর্শপাড়া এলাকায় মামার বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রীসহ বসবাস শুরু করেন। তানজিদ পেশায় একজন অটোচালক। গত ২০ আগস্ট আফরোজা বেগমের প্রসব ব্যথা উঠলে বেলা ৩টার দিকে তাকে রমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন রাত পৌনে ৮টার দিকে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। স্বাভাবিক ডেলিভারির জন্য আফরোজার জরায়ুর মুখ কেটে সন্তান প্রসবের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় আফরোজা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। রনজিনা আক্তার আরও জানান, 'অপারেশনের পর থেকেই অসহ্য ব্যথায় ছটফট করতে থাকে আফরোজা। শুরু হয় রক্তক্ষরণ। কোনোভাবেই তার রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যাচ্ছিল না। বরং অব্যাহত রক্তক্ষরণে আফরোজার অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। বিষয়টি ডাক্তার লাকী ও কর্তব্যরত নার্সকে বললেও তারা আমলে না নিয়ে উল্টো একটু আধটু ব্যথা হবে, সেটা সহ্য করতে হবে বলেন। এরপরেও রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে বিষয়টি অন্য চিকিৎসককে জানালে সুই-সুতা রেখেই সেলাই! তিনি বৃহস্পতিবার সকালে এক্স-রে করার জন্য পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালের বাইরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে গিয়ে এক্স-রে করালে আফরোজার গোপনাঙ্গের ভেতর সুঁই-সুতা দেখতে পাওয়া যায়। এক্স-রে রিপোর্টেও সুঁই-সুতার কথা উলেস্নখ করে প্রতিবেদন দেয়া হয়। এরপর এক্স-রে রিপোর্ট নিয়ে আমরা হাসপাতালের নার্সকে জানালে তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। বিষয়টি জানাজানি হলে হাসপাতালজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের স্বজনরা সেখানে ভিড় করতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে গাইনি বিভাগের নার্সরা সটকে পড়ে।' আফরোজার নানিশাশুড়ি রেজিয়া বেগম অভিযোগ করেন, 'কোনো চিকিৎসক আফরোজার অপারেশন করেননি। ডাক্তার লাকী কিছুক্ষণ থেকেই চলে যান। নার্স দিয়ে অপারেশন করা হয়েছে। আফরোজা ব্যথায় ছটফট করতে থাকলে তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন কর্তব্যরত নার্সরা।' প্রসূতি আফরোজা জানান, ব্যথায় ছটফট করলেও কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকরা তার কথা শোনেননি। উল্টো অপারেশন থিয়েটারেই তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন নার্সরা। তিনি ঘটনার জন্য ডা. লাকীসহ নার্সদের দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। আফরোজার স্বামী তানজিদ বলেন, 'আমরা গরিব বলে ক্লিনিকে স্ত্রীকে ভর্তি করাতে পারিনি। কিন্তু রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপারেশনের পর সেলাই করার নামে যদি সুঁই-সুতা রেখে দিয়েই সেলাই করে দেয়া হয় তাহলে এখানে চিকিৎসাসেবার নামে কী হচ্ছে তা সহজেই বোঝা যায়। আমার স্ত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক করার জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার দাবি জানাই।' এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শারমিন সুলতানা লাকী বলেন, 'ওটা ভুলক্রমে হয়েছে। রোগীর সুচিকিৎসায় পরবর্তী প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।' সার্বিক বিষয় জানতে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. সুলতান আহমেদের সঙ্গে কথা বলতে তার চেম্বারে গেলে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন বলেন জানান অফিস সহকারী সালাম। ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে ফোন করার পর ডা. সুলতান আহমেদ জানান, তিনি রংপুরে ফিরে বিষয়টি জেনে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। বাংলাট্রিবিউন