৯ গ্রম্নপে ভাগ হয়ে একযুগ ধরে চুরি

প্রকাশ | ২৬ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
শনিবার রাতে চট্টগ্রামের লালদীঘির পাড়ের হোটেল তুনাজ্জিন থেকে আন্তঃজেলা চোর চক্রের ১১ সদস্যকে আগ্নেয়াস্ত্র ও চুরির সরঞ্জামসহ (ইনসেটে) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ছবিটি রোববার তোলা -যাযাদি
দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১২ বছর ধরে চুরি করে আসছে আন্তঃজেলা চোর চক্রের সদস্যরা। ৯টি ছোট গ্রম্নপে ভাগ হয়ে কাজ করে এ চক্রের সদস্যরা। তাদের সদস্য ৫০ জন। আন্তঃজেলা চোর চক্রের ১১ সদস্যকে গ্রেফতারের পর রোববার এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আন্তঃজেলা চোর চক্রের ১১ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে দুইটি এলজি, একটি লোহার কাটার, একটি লোহার রড ও চারটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার ১১ জন হলো মো. হানিফ প্রকাশ হাতপোড়া হানিফ (৩৮), মো. কামাল হোসেন (২৮), মো. লিয়াকত হোসেন (২৪), মো. আকরাম প্রকাশ সাগর (২৩), মো. তৌফিক (২৬), মো. মাসুম (২৬), মো. মিজান (২৫), নয়ন মলিস্নক (২২), মো. মিলন (২৫), জামাল উদ্দিন (৩০), মো. কামাল প্রকাশ ভুসি কামাল প্রকাশ জসিম (৩২)। এদের মধ্যে লিয়াকত হোসেন ও নয়ন মলিস্নকের বাড়ি চট্টগ্রামে ও কামাল হোসেনের বাড়ি নরসিংদী এবং অন্যদের বাড়ি কুমিলস্না জেলার বিভিন্ন এলাকায় বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তা এসএম মেহেদী হাসান জানান, গত কয়েক মাসে কোতোয়ালি থানা এলাকায় পাঁচটি চুরির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা দায়ের হয় থানায়। সম্প্রতি একটি চুরির ঘটনায় মালিঙ্গা নামে এক চোরকে গ্রেফতারের পর আন্তঃজেলা চোর চক্রের ব্যাপারে তথ্য পায় পুলিশ। শনিবার দিবাগত রাতে লালদীঘির পাড়ের হোটেল তুনাজ্জিন থেকে এসব চোরকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর পুলিশকে দেয়া তাদের তথ্য অনুযায়ী তারা ১২ বছর ধরে ঢাকার গুলশান, মহাখালী, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, কুমিলস্না, সিলেট, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম শহরে দীর্ঘদিন ধরে চুরি করে আসছে। তারা যেখানে চুরি করতে যায়, ওই এলাকায় বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে। ওই এলাকার শোরুম, বড় কাপড়ের দোকান, বড় মুদির দোকান, বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউটর অফিস, বিকাশের দোকানসহ যেসব প্রতিষ্ঠানে নগদ টাকা লেনদেন হয় বা রাতে ক্যাশে নগদ টাকা থাকে ওইসব প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে তারা। দিনের বেলা ঘুরে ঘুরে টার্গেট নির্দিষ্ট করে রাতে চুরির কাজ করে। ২-৩ মিনিটের মধ্যে চুরির প্রক্রিয়া পুলিশ কর্মকর্তা এসএম মেহেদী হাসান বলেন, দিনে রেকি করার পর রাতে এসে মাত্র ২ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যে পুরো চুরির প্রক্রিয়াটি শেষ করে তারা। চোর চক্রের দলনেতা হানিফ রেকি করে। তার হাত বিকলাঙ্গ থাকায় তাকে কেউ সন্দেহ করে না। তাই রেকির কাজটি সে-ই করে। হানিফ টার্গেট নির্দিষ্ট করার পর চোর চক্রের সেকেন্ড ইন কমান্ড কামালকে খবর দেয়। পুরো চুরির পরিকল্পনা করে কামাল। তিনি বলেন, টার্গেট করা দোকানে কী পরিমাণ টাকা থাকবে, কীভাবে চুরি করা হবে, চুরির পর দ্রম্নত সে জায়গা থেকে কীভাবে সরে যাবে, চুরির সময় কী পরিমাণ জনবল লাগবে, কী কী যন্ত্রপাতি লাগবে- এসব পর্যবেক্ষণ করে কামাল। পর্যবেক্ষণ শেষে কামাল মতামত দেয় চুরি করা যাবে কি না। কামালের মতামতের ভিত্তিতে হানিফ চুরির জন্য প্রস্তুতি নেয় এবং সদস্যদের ফোনে সংবাদ দেয়। এসএম মেহেদী হাসান বলেন, টার্গেট করা প্রতিষ্ঠানে শাটার ছোট হলে তালা ভাঙে আর বড় হলে শাটারের মাঝে ফাঁক করে একজন বা দুইজন ভিতরে ঢুকে। মার্কেটে দারোয়ান থাকলে তাদের দৃষ্টি আড়াল করতে পর্দা, লুঙ্গি, চাদর, ছাতা ব্যবহার করে। দোকানের ভেতরে প্রবেশ করা সদস্য ২ থেকে ৩ মিনিটের ভেতর ক্যাশ বাক্সের তালা ভেঙে মোবাইল, ল্যাপটপ, টাকা চুরি করে। তিনি বলেন, চুরির পর ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকলে তারা অস্ত্রও সঙ্গে নিয়ে যায়। ধরা পড়লে তারা ব্যবহার করে এসব অস্ত্র। পুলিশকে ডাকে তেলাপোকা! গ্রেফতার চোর চক্রের সদস্যরা চুরির সময় বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে। এর মধ্যে পুলিশকে তেইলস্নাচোরা (তেলাপোকা) বলে ডাকে বলে জানান অভিযান পরিচালনাকারী টিমের সদস্য ও কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান। মো. কামরুজ্জামান বলেন, চোরেরা দোকানকে বলে অফিস, তালাকে বলে আম, কার্টারকে বলে গাড়ি, চাদরকে বলে ঠোঙ্গা, দোকানের ভিতর চুরির জন্য যে প্রবেশ করে তাকে বলে অফিসম্যান, সংবাদদাতাকে বলে লাইনম্যান, চুরি করাকে বলে ডিউটি, চুরির টাকাপয়সাকে বলে ব্যবসা ও চুরি করা টাকা ভাগ করার সময় ১ লাখ টাকাকে বলে ১ টাকা। চোর চক্রের সদস্যরা গত ২৭ জুন সকালে কোতোয়ালি থানাধীন নন্দনকানন গোলাপ সিং লেইনের নিউ লাকি ইলেকট্রনিক্স থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও ২০ ফেব্রম্নয়ারি মধ্যরাতে জুবলী রোডের সিডিএ মার্কেটের রয়েল পস্নাজায় কাজী কম্পিউটারস নামের দোকান থেকে ১২টি ল্যাপটপ, ৫২৫ পিস পেনড্রাইভ, ৪৫০ পিস মেমোরি কার্ড চুরি করে বলে তথ্য দেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন। সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মুহাম্মদ আবদুর রউফ, সিনিয়র সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) নোবেল চাকমা ও অভিযান পরিচালনাকারী টিমের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।