নাগরিকপঞ্জি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকছে না: ফখরুল

প্রকাশ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:২৬

যাযাদি রিপোর্ট
উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। শনিবার রাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্থায়ী কমিটির বৈঠকের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, আগামী ১৪ অক্টোবর ৮টি উপজেলায় যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে আমরা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নেয়ার এই সিদ্ধান্ত নিল। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকেল ৫টায় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শুরু হয়। রাত সাড়ে ৭টায় দলের মহাসচিব বৈঠক থেকে বেরিয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে বৈঠকের নেয়া সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভারতের আসামের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে সেখানকার মন্ত্রী, বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের যেসব বক্তব্য দেশটির বিভিন্ন পত্রিকায় বেরিয়েছে তাতে বলা হয়েছে যে, ১৯ লাখ যারা বাদ পড়েছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশ বাংলাদেশি নাগরিক। আমরা এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা মনে করি যে, এই ধরনের বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে যে, সরকার এ ব্যাপারে নীরব থাকছেন। এখানে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন তখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যে বৈঠক হয়েছে, সেই বৈঠকে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে নিশ্চিত করেছেন যে, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যখন বাদ পড়াদের বাংলাদেশের নাগরিক বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে, তখন কিন্তু সেটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকছে না। আমরা এই বিষয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আমরা বাংলাদেশের সরকারের কাছে এই ব্যাপারে পরিষ্কার ব্যাখ্যা চাই, ব্যাখ্যা দাবি করছি। তিনি বলেন, জাতিকে অন্ধকারে না রেখে সরকারের জানানো উচিত আসলে ব্যাপারটা কী? মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনবে। এই থেকে এটাই প্রমাণিত হয়েছে আসলে সরকার অর্থনৈতিক দিক থেকেও দেউলিয়া হয়ে গেছে। এখন যেসব প্রতিষ্ঠানে তাদের জমাকৃত উদ্বৃত্ত আছে তা কখনো কাউকে হাত দিতে হয়নি। সরকার বলছে সেটা তারা বিভিন্ন প্রজেক্টে ব্যয় করতে চায়। বিএনপির এই নেতা বলেন, এটাতে সরকারের দেউলিয়াত্ব প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাংকগুলো। যেসব ব্যাংকে ওইসব প্রতিষ্ঠানের টাকাসমূহ জমা আছে। যখনই টাকাগুলো নিয়ে যাবে তখন তারল্য সংকট দেখা দেবে ব্যাংকগুলোতে। এ ছাড়া যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ওইসব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তাদের যেসব বেতন-ভাতা, পেনশন-গ্র্যাচুইটি- এসব অর্থ তারা সঠিকভাবে পরিশোধ করতে পারবে বলে আমরা মনে করি না, সমস্যা তৈরি হবে। মহাসড়কে টোল আদায়ের সরকারের সিদ্ধান্তেরও নিন্দা জানিয়েছে স্থায়ী কমিটি বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আমরা মনে করি যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনে সেই অবস্থায় দাঁড়ায়নি যে, রাস্তার ওপরে টোল আদায় করতে হবে। আমরা মনে করি জনগণের ওপর আরও একটা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবি জানিয়েছে বলে জানান ফখরুল। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন। রংপুর-৩ উপনির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা আজ রংপুর-৩ আসনের আসন্ন উপনির্বাচনের দলীয় প্রার্থী আজ রোববার ঘোষণা করবে বিএনপি। শনিবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শেষে বিএনপির সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড এই সিদ্ধান্ত নেন। একই সঙ্গে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দেয়া নেতাদের মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দায়িত্ব দিয়েছে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড। বৈঠক সূত্র জানায়, সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বেশির ভাগ সদস্য প্রয়াত মোজাফফর হোসেনের স্ত্রী সুফিয়া হোসেন পক্ষে অবস্থান নেন। কারো সমর্থন রিটা রহমানের পক্ষেও ছিল। এই অবস্থায় সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেয়া হয়েছে তারেক রহমানের ওপর। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপে যুক্ত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জানতে চাইলে জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, রোববার চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন: দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মশিউর রহমান জাদু মিয়ার মেয়ে ২০ দলীয় জোটের রিটা রহমান, রংপুর মহানগর বিএনপির প্রয়াত সভাপতি মোজাফফর হোসেনের স্ত্রী সুফিয়া হোসেন, বর্তমান সভাপতি কাওসার জামান বাবলা, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু, রংপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইসউদ্দিন। গত বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ১০ হাজার টাকা করে দিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ এবং শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে ২৫ হাজার টাকা করে জামানত দিয়ে মনোনয়নপত্রগুলো জমা দেন তারা। প্রসঙ্গত, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের মৃতু্যর পর শূন্য হওয়া রংপুর-৩ আসনে আগামী ৫ অক্টোবর উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।