রোহিঙ্গা মহাসমাবেশে জড়িতদের শনাক্ত

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জাবেদ আবেদীন শাহীন, কক্সবাজার প্রতিনিধি প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া উখিয়ার কুতুপালং-৪নং ক্যাম্পের মাঠে গত ২৫ আগস্ট আয়োজিত কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের মহাসমাবেশের পেছনে জড়িতদের শনাক্ত করেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। গত ৩ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত একটি তদন্ত প্রতিবেদন এনজিও বু্যরোতে পাঠানো হয়। এতে চিহ্নিত মদদদাতাদের নাম ও কয়েকটি এজিওর কথা উলেস্নখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের সমাবেশের পূর্বে 'এডিআরএ' (আদ্রা) নামক একটি এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুলস্নাহকে আড়াই লাখ টাকা অনুদান দেয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা নেতা ছাড়াও কক্সবাজারের এনজিও, আইনজীবী, কলেজের প্রভাষক, 'আরআরসি'র কর্মকর্তা ও পুলিশসহ একাধিক সংগঠনের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে নাম রয়েছে। জানা গেছে, প্রতিবেদন সূত্রে মদদদাতা হিসেবে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে তারা হলেন- আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটি রাইটস (এআরএসপিএইচ)-এর সভাপতি মুহিবুলস্নাহ, সহ-সভাপতি মাস্টার আব্দুর রহিম, সাধারণ সম্পাদক ও উখিয়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক নূরুল মাসুদ ভূঁইয়া, সংগঠনের উপদেষ্টা আইনজীবী দুলাল মলিস্নক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. ফরিদুল আলম ও মাওলানা ইউসুফ, কক্সবাজার জেলা দায়রা জজ আদালতের পিপি মাহবুবুর রহমান, কক্সবাজার জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের পিপি মো আব্দুর রহিম ও ক্যাম্পে নিয়োজিত পুলিশের এএসআই বোরহান উদ্দিন। এ ছাড়াও ছয়টি এনজিওকে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের সমাবেশের পূর্বে 'এডিআরএ' (আদ্রা) গত ১৯ ও ২১ আগস্ট কক্সবাজার কলাতলিস্থ শালিক রেস্তোরাঁয় বৈঠক করে। বৈঠকে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুলস্নাহকে আড়াই লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়। আল মারকাজুল ইসলামী সংস্থা সমাবেশে রোহিঙ্গাদের জন্য টি-শার্ট তৈরিতে সহযোগিতা করে। পরে রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে উখিয়ার কুতুপালং এক্সটেনশন-৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মহাসমাবেশ করে। প্রশাসন থেকে অনুমতি না নিয়ে কিছু রোহিঙ্গা নেতার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে গঠিত 'ভয়েস অব রোহিঙ্গা' এবং রোহিঙ্গা রিফিউজি কমিটির (আরআরসি) পক্ষ থেকে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এই সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে ভয়েস অব রোহিঙ্গা ৭শ সাদা হাফ টি-শার্ট ও ২৮টি ব্যানার, রোহিঙ্গা রিফিউজি কমিউনিটি (আআরসি) সংগঠনের ১০০ হাফ টি-শাট, এছাড়া, এআরএসপিএইচ এবং এনজিও সংস্থা 'এডিআরএ' ও 'আল মারকাজুল ইসলামী সংস্থা' নামে দুটি এনজিও সমাবেশে রোহিঙ্গাদের টি-শার্ট ও ব্যানার সরবরাহ করেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয় এছাড়া, নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফুটবল খেলার মাঠ ডি-৫ বস্নকে ভিন্ন ভিন্ন সংগঠনের পক্ষে সমাবেশ ওর্ যালি করা হয়। সমাবেশ সফল করতে ডি-৫ বস্নকে আরআরসি সংগঠনের চেয়ারম্যান সিরাজুল মোস্তফার নেতৃত্বে ২৫ হাজার টাকা করে চাঁদা সরবরাহ করা হয়। বিশেষ করে লন্ডনে বসবাসরত নূরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি প্রায় ৫-৬ মাস আগে সংগঠনের (আরআরসি) অফিস নির্মাণের জন্য ২ লাখ টাকা অনুদান দেন। সমাবেশের টি-শার্ট তৈরি করতে ক্যাম্পে কর্মরত পুলিশের এএসআই বোরহান উদ্দিনের মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয় বলেও প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়। এছাড়া, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুলস্নাহর নেতৃত্বে পরিচালিত এআরএসপিএইচ সংগঠনের ৩০০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন উখিয়া সিকদারপাড়া এলাকার আব্দুল করিম ভূঁইয়ার ছেলে উখিয়া কলেজের প্রভাষক নূরুল মাসুদ ভূঁইয়া। ২৫ আগস্ট তিনি উপজেলার মানবাধিকার সংগঠন 'পিসওয়ে হিউম্যান রাইটস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে এ তথ্য পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গাদের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী এসব সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন থেকে এনজিও বিষয়ক বু্যরোর কাছে লিখিত অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে আরও তদন্ত চলছে বলে জানা যায়। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, '২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় ছয়টি এনজিওকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাছাড়া তদন্তে যেসব প্রতিষ্ঠান এবং কর্মকর্তার নাম পেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।'