শোভন-রাব্বানির গণভবনে প্রবেশের স্থায়ী পাস বাতিল

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রেজওয়ানুল হক শোভন গোলাম রাব্বানী
ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর গণভবনে প্রবেশের স্থায়ী পাস বাতিল করা হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, গণভবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্থায়ী অনুমতি ছিল। ফলে এতদিন গণভবনে প্রবেশের জন্য অন্য অনেকের মতো তাদের আলাদা কোনো অস্থায়ী পাস বা প্রবেশ কার্ড নেয়া লাগতো না। যে কোনো সময় তারা গণভবনে প্রবেশ করতে পারতেন। এ সুবিধা বাতিলের ফলে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এখন গণভবনে প্রবেশ করতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে অন্যদের মতো আলাদা অস্থায়ী পাস নিতে হবে। আগের মতো সরাসরি গণভবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। সাধারণত অল্প কিছু সময় বা কয়েক ঘণ্টার জন্য অস্থায়ী পাস দেয়া হয়। এর আগে, শনিবার বিতর্কিত কর্মকান্ড এবং অযোগ্যতার কারণে গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে জানা গেছে। সেই সভায় তিনি শোভন-রাব্বানীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর ছড়িয়েছিল। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিবাহিত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, চাকরিজীবীসহ বির্তকিতদের পদ দেয়া, ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করা, কমিটি দিতে অর্থনৈতিক লেনদেনসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ও কানাঘুষা রয়েছে ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিজেই বিবাহিত এমন অভিযোগও রয়েছে। সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে অযোগ্যতা, অদক্ষতার অভিযোগও রয়েছে দু'জনের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেরিতে যাওয়া এমনকি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের পরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভনের গাড়িতে ওঠাকে কেন্দ্র করে মারামারিতে জড়ায় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। এ সময় দায়িত্বরত এক সাংবাদিককে শোভনের গাড়িতে তুলে নেয়া হয় এবং সাংবাদিকের মোবাইল ফোন থেকে ভিডিও ডিলিট করা হয়। গত বছরের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সম্মেলনের আড়াই মাস পর গত বছরের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছর মেয়াদি আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর প্রায় এক বছর পর গত ১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে বির্তকিত অনেককে পদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ ঘোষণার পর পদ না পাওয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অনেকে আন্দোলন এমনকি অনশনেও বসেন। ডাকসু জিএসের কক্ষে এসি এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে নিজের কক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র (এসি) লাগিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তিন দশক পর ডাকসু নির্বাচনের পর ছয় মাস পার হতে চললেও প্রকট আবাসন সংকটসহ শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রম্নতি পূরণে দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা না থাকলেও ব্যক্তিগত আরামের জন্য ডাকসুর সাধারণ সম্পাদকের (জিএস) এমন আয়োজনকে ভালো চোখে দেখছেন না সমালোচকরা। তবে রাব্বানীর দাবি, অত্যাধিক গরমের কারণে এক 'শুভাকাঙ্ক্ষী' তাকে 'উপহার' হিসেবে এসি লাগিয়ে দিয়েছেন। ডাকসুর অন্য পদাধিকারীরা চাইলে তাদের জন্যও এসি দিতে তিনি রাজি। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এক ছাত্র বলেন, 'আরাম-আয়েশ করার জন্য শিক্ষার্থীরা তাকে ডাকসুর জিএস নির্বাচিত করেনি। নিজের কক্ষে এসি লাগানোর আগে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেয়ার কথা ছিল তার। এ বিষয়ে তার জবাবদিহি করা উচিত।' ডাকসু ভবনের কক্ষগুলোতে এসি লাগানোর জন্য রাব্বানী প্রস্তাব নিয়ে এলেও তাতে সমর্থন দেননি বলে জানালেন ডাকসু সহ-সভাপতি (ভিপি) ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, 'যেখানে শিক্ষার্থীরা গণরুমে অমানবিক পরিবেশে ২০-২২ জন গাদাগাদি করে থাকে, সেখানে আমরা তাদের প্রতিনিধি হয়ে এসি রুমে থাকব- এটা আমার কাছে শোভনীয় মনে হয়নি।' জিএসের কক্ষে এসি লাগানোর বিষয়ে ডাকসুর এজিএস, বেশ কয়েকজন সম্পাদকীয় পদধারী ও সদস্যের মন্তব্য জানতে চাইলেও তারা রাজি হননি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আগস্টের শুরুর দিকে রাব্বানীর অফিসকক্ষে তার 'শুভাকাঙ্ক্ষী'র দেয়া এই এসি লাগানো হয়। তবে ডাকসুর ভিপি, এজিএসসহ অন্য সম্পাদকদের কক্ষগুলোতে কোনো এসি লাগানো হয়নি। এ বিষয়ে ছাত্রলীগ ও ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, 'ডাকসুতে আমাদের কক্ষগুলো দ্বিতীয় তলায় এবং উপরে আর কিছু নেই। এখানে রোদ বেশি হওয়ার কারণে এগুলো বিবেচনায় নিয়ে আমাদের এক শুভাকাঙ্ক্ষী, আমার বিভাগের সাবেক এক বড় ভাই এটি উপহার দিয়েছেন। 'তিনি অন্যদের রুমেও এসি লাগানোর কথা বলেছিলেন, তারা চাইলে হয়তো তাদের রুমেও লাগানোর ব্যবস্থা করবেন।'