গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় পবিত্র আশুরা পালিত

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে মঙ্গলবার পুরান ঢাকার হোসেনি দালান ইমামবাড়া থেকে শিয়া সম্প্রদায় রাজধানীতে তাজিয়ার্ যালি বের করে -যাযাদি
'হায় হোসেন, হায় হোসেন' মাতমের মধ্য দিয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকাসহ সারা দেশে পবিত্র আশুরা পালিত হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও পুরান ঢাকার হোসনি দালান থেকে বের হয় ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিল। কালো-লাল-সবুজের নিশান উড়িয়ে, কারবালার মাতম উঠে হাজার হাজার মানুষের মিছিলে। ঢাকায় হোসনি দালান ঘিরে শিয়াদের তাজিয়া মিছিলের ঐতিহ্য কয়েকশ' বছরের। তাজিয়া মিছিলটি বকশীবাজার, উর্দুরোড, লালবাগ চৌরাস্তা, গৌর-এ শহীদের মাজার, আজিমপুর, নিউমার্কেট হয়ে জিগাতলা (ধানমন্ডি লেকের কাছে) গিয়ে শেষ হয়। পথের দু'পাশে ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। মানুষ ছাদে দাঁড়িয়ে, জানালা দিয়ে মিছিল উপভোগ করে। পুরো মিছিল ঘিরে ছিল পুলিশ, র?্যাবসহ বিপুলসংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুবের আকাশে সূর্য উঁকি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলে দলে মানুষ এসে যোগ দেন তাজিয়া মিছিলে। এর নিরাপত্তা রক্ষায় সকাল থেকেই বিপুলসংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন হোসেনি দালানে। প্রতিটি ইমামবাড়া সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়। সকালে মিছিলে আসা লোকজনকে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তলস্নাশি করে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করানো হয়। ডিএমপি সূত্র জানায়, এই দিনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অতিরঞ্জিত কার্যকলাপ করতে দেয়া হয়নি। এর আগে এই দিবসে দেশে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে, তারপর থেকে নানা ধরনের আশঙ্কাও বিরাজ করে প্রতি বছর। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সেজন্য প্রতি বছর সতর্ক পদক্ষেপ ও নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে, এ বছরও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রসঙ্গত, কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনা স্মরণ করে বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করে থাকেন। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে তাদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল রয়েছে। কারবালার শোকাবহ এই ঘটনা অর্থাৎ পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী সবাইকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা জোগায়। হিজরি ৬১ সনের এই দিনে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাতি হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা কারবালার ময়দানে ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে শহীদ হন। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে হজরত ইমাম হোসাইনের (রা.) আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। কারবালার শোকাবহ ঘটনা অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা জোগায়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নফল রোজা, নামাজ, জিকির-আসকারের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেন। মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবে দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ পবিত্রতম দিবস। জাতীয় দৈনিকগুলো আশুরার তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও-টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। দিনটিতে ছিল সরকারি ছুটি।