ধর্ষণের পর থানায় বিয়ে

পাবনায় ইউনিয়ন আ'লীগ নেতা শরিফুল গ্রেপ্তার

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
শরিফুল ইসলাম ঘণ্টু
পাবনায় গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণ এবং থানায় তাদের একজনের সঙ্গে তার বিয়ে দেয়ার ঘটনার অন্যতম আসামি আওয়ামী লীগ নেতা শরিফুল ইসলাম ঘণ্টুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘণ্টু দাপুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার অফিসেই ওই নারীকে তিনদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবনে মিজান বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে টেবুনিয়া খাদ্যগুদাম এলাকা থেকে মামলার অন্যতম আসামি শরিফুল ইসলাম ঘন্টুকে (৩৮) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই খাদ্যগুদামের পেছনে ঘন্টুর অফিস, যেখানে ওই নারীকে তিনদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে। ঘন্টুর ওই অফিসে কী কাজ হয় সে বিষয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলতে পারেনি। তবে ঘন্টুর বৈধ কোনো ব্যবসা নেই বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘন্টুর বিরুদ্ধে এলাকায় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। তবে এ বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ আছে কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তা এবনে মিজান। এদিকে ডাক্তারি পরীক্ষায় ওই নারীকে ধর্ষণের আলামত মিলেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা এবনে মিজান বলেন, "পাবনা সদর হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। পরে ওই নারীকে তার বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।" তিন সন্তানের জননী ওই নারীর অভিযোগ, প্রতিবেশী রাসেল আহমেদ গত ২৯ আগস্ট তাকে তার বাড়িতে নিয়ে এক সহযোগীসহ পালা করে ধর্ষণ করে। দুদিন পর তাকে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিসে নিয়ে তিনদিন আটকে রাখা হয় এবং সেখানে আরও ৪/৫ জন তাকে পালা করে ধর্ষণ করে। ওই নারী বাড়ি ফিরে স্বজনদের বিষয়টি জানালে ৫ সেপ্টেম্বর তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেই গৃহবধূ নিজেই বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ রাসেলকে আটক করে। কিন্তু মামলা নথিভুক্ত না করে পুলিশ ওই রাতেই রাসেলের সঙ্গে তার বিয়ে দেয়। এ বিষয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষ ওসি ওবাইদুল হককে কারণ দর্শাতে বলেছে। এছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরে থানায় মামলা নেয়া হয়। ঘটনা তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। নজর রাখছে হাইকোর্ট : এদিকে পাবনায় দলবেঁধে ধর্ষণের শিকার এক গৃহবধূর মামলা না নিয়ে থানা চত্বরে সন্দেহভাজন এক আসামির সঙ্গে ওই নারীর বিয়ে দেয়ার ঘটনায় ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ প্রশাসনের সার্বিক পদক্ষেপে নজর রাখছে হাইকোর্ট। বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের বেঞ্চে এ ঘটনার প্রকাশিত খবর তুলে ধরে সদর থানার ওসির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে স্বপ্রণোদিত আদেশ চান সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী। তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, 'মিডিয়ার মাধ্যমে আমরাও বিষয়টা নজরে রাখছি।' আদালতে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ তুলে ধরেন আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল; সঙ্গে ছিলেন গাজী ফরহাদ রেজা ও রোহানী সিদ্দিকা। পরে ফয়সাল বলেন, "পাবনার বিষয়টি নিয়ে কিছু পত্রিকার প্রকাশিত নিউজ কোর্টের নজরে এনেছিলাম। আদালত বললেন যে, এ বিষয়ে তো ইতিমধ্যে প্রশাসন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে; ওসিকে শোকজ করা হয়েছে। এটা নিয়ে আপনারা আবার কেন আসছেন? "তখন আমি বললাম, ওসিকে শোকজ করা হয়েছে ঠিক। কিন্তু আজকের পত্রিকায় এসেছে বিয়ের কাজি, যিনি বিয়েটা পড়াতে অসম্মতি জানিয়েছিলেন, তাকে এবং ভিকটিমের পরিবারকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন ওসির লোকজন। ওই ওসি যদি ওই থানায় দায়িত্বে বহাল থাকে তাহলে তদন্তটি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে, তদন্ত ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।" "তখন আদালত বলেন যে, যেহেতু এটা প্রশাসনিক বিষয় এবং যেহেতু কর্তৃপক্ষ অ্যাকশন নিচ্ছে, দেখেন প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয়। যদি প্রশাসনের ব্যবস্থা সন্তোষজনক না হয় তখন আপনারা আগামী সপ্তাহে আসেন আমরা দেখব। আদালত এও বলেছেন, মিডিয়ার মাধ্যমে আমরাও বিষয়টা নজরে রাখছি।"