ওসির রুমে আমাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি: নুসরাতের মা

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন নুসরাতের মা। বুধবার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইবু্যনালের বিচারক মোহাম্মদ আ স সামশ জগলুল হোসেনের আদালতে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার ও তার ভাই রাশেদ হাসান সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য শেষে তাদের জেরা করেন ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন। এ নিয়ে পাঁচজনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। নুসরাতের মা বলেন, চলতি বছরের ২৭ মার্চ আমার মেয়ে নুসরাতসহ সোনাগাজী থানায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাই। ওই সময় ওসি মোয়াজ্জেম আমার মেয়ের জবানবন্দি গ্রহণ করে। ওসির রুমে আমি ঢুকতে গেলে আমাকে রুমে প্রবেশ করতে দেয়নি। রুম থেকে বের হয়ে নুসরাত বলে যে, 'আমার নিকাব খুলে ওসি জবানবন্দি ভিডিও করেছে।' 'ভিডিও করে তা আবার ৩০ মিনিটের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়, যা খুবই দুঃখজনক'- বলেন নুসরাতের মা। গত ১৭ জুলাই বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইবু্যনালের বিচারক মোহাম্মদ আ স সামশ জগলুল হোসেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। \হ১৭ জুন বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইবু্যনালের বিচারক মোহাম্মদ আ স শামস জগলুল হোসেন ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ১৬ জুন রাজধানীর শাহবাগ থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২৭ মে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইবু্যনালের বিচারক পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। আসামি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। গত ১৫ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ওসি (প্রত্যাহার হওয়া) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আদালত তার জবানবন্দি নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন। পরে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত। গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। এমন অভিযোগ উঠলে দু'জনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। এ সময় ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করেন এবং নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, থানার ওসির সামনে অঝোরে কান্না করছেন নুসরাত জাহান রাফি। সেই কান্নার ভিডিও করছিলেন সোনাগাজী থানার ওসি। নুসরাত তার মুখ দুই হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবারই 'মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও' বলার পাশাপাশি তিনি এও বলেন, 'এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।' মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওসি মোয়াজ্জেম অনুমতি ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে নুসরাতকে জেরা এবং তা ভিডিও করেন। পরবর্তীতে ওই ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, ওসি মোয়াজ্জেম অত্যন্ত অপমানজনক ও আপত্তিকর ভাষায় একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছেন নুসরাতকে। নুসরাতের বুকে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নও করতে শোনা যায় ওসি মোয়াজ্জেমকে। অধ্যক্ষের নিপীড়নের ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। এরপর গত ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় গেলে মাদ্রাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃতু্য হয় নুসরাতের।