তৃণমূলের কাউন্সিলেও বাধা দেয়া হচ্ছে: বিএনপি

ছাত্রদলের বিক্ষোভ

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন -যাযাদি
বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিল আদালতের আদেশে স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, তৃণমূলের কাউন্সিল করতেও তারা বাধা পাচ্ছেন। শুক্রবার এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি বলেন, 'শুধু ছাত্রদলের কাউন্সিলই নয়, বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের কাউন্সিল অনুষ্ঠানেও সরকার বাধা দিচ্ছে।' ছাত্রদলের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনে শনিবার কাউন্সিলের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির বিদায়ী ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আমান উলস্নাহর একটি আবেদনে বৃহস্পতিবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ নুসরাত জাহান কাউন্সিল আয়োজনে স্থগিতাদেশ দেন। আদালতের নোটিশ পাওয়ার পর কাউন্সিল আয়োজনে যুক্ত বিএনপি নেতারা রাতে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন। পরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'ছাত্রদলের কাউন্সিলে স্থগিতাদেশ দেয়া গভীর চক্রান্তমূলক। সরকারের কারসাজিতেই এহেন আদেশ প্রদান করা হয়েছে।' শুক্রবার খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্বাধীনতা ফোরামের মানববন্ধনে অংশ নিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, 'আজ বাংলাদেশে কোনো রাজনীতি নেই, আমাদের রাজনীতি করতে দেয়া হচ্ছে না। একতরফা সব কিছু চলছে।' বিএনপিকে 'সুসংগঠিত করার জন্য' বিভিন্ন পর্যায়ে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও তৃণমূলে কাউন্সিল করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন। খন্দকার মোশাররফ বলেন, 'আমরা মনে করি, আমাদের যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, আমাদের যে গণতান্ত্রিক চর্চার চেষ্টা- এটাতেও সরকার নানাভাবে বাধা দিচ্ছে।' 'রাজস্বভান্ডার শূন্য বলেই টোল' মহাসড়কে টোল আদায়ের সিদ্ধান্তে সরকারের অনড় অবস্থানের সমালোচনা করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, 'পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় টোল হাইওয়ে আছে, সেই হাইওয়ে বিভিন্ন কোম্পানিকে দেয়া হয়। তারা তাদের টাকায় সেই হাইওয়ে নির্মাণ করে এবং টোল নিয়ে তারা তাদের মূলধন ও লাভ নিয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে জনগণের টাকায়। আর গাড়ি এসব মহাসড়কে চলার জন্য সব ধরনের রোড ট্যাক্স দেয়। তাহলে আবার টোল কেন? অর্থাৎ দেশের রাজস্বভান্ডার এতই শূন্য যে হাইওয়ে থেকে টোল নিয়ে সরকার চালাতে হচ্ছে।' লুটপাটের কারণে ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হতে বসেছে- মন্তব্য করে এই বিএনপি নেতা বলেন, 'আজ বাংলাদেশ সরকারের দেশ চালানোর টাকা নাই। নানাভাবে ভ্যাট সম্প্রসারণ করে, জনগণের ওপর নানা ধরনের নির্যাতন করেও তারা রাজস্ব বৃদ্ধি করতে পারছে না। তারা নিজস্ব লাভের জন্য বড় বড় প্রজেক্ট করে মেগা কমিশন নিয়ে এখন আটকে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে যা উদ্বৃত্ত টাকা আছে তা সরকারকে দিয়ে দিতে হবে। তাহলে আগামীতে এই প্রতিষ্ঠানগুলো চলবে কীভাবে?' এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ চাইলে দেশের 'গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই' মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, 'গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।' স্বাধীনতা ফোরামের উদ্যোগে এই মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুলস্নাহ। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শাহ নেছারুল হক, সাঈদ আহমেদ আসলাম, ফরিদউদ্দিন, কাজী মনিরুজ্জামান, মিয়া মো. আনোয়ার, সাঈদ হাসান মিন্টু, ইসমাইল তালুকদার খোকন, জাহাঙ্গীর আলম, জাতীয় দলের এহসানুল হুদা প্রমুখ মানববন্ধনে বক্তব্য দেন। নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ এদিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আদালতের এমন আদেশের জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন ছাত্রদল নেতারা। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মো. আব্বাস আলীর নেতৃত্বে এই বিক্ষোভ মিছিল হয়। আজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিল। এর ওপর বৃহস্পতিবার অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। ঢাকার চতুর্থ সহকারী জজ নুসরাত জাহান বিথি এ আদেশ দেন। ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমানউলস্নাহ আমানের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন। মিছিলে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা স্স্নোগান দেন, 'জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিল স্থগিত কেন? প্রশাসন জবাব দে, ভোট ডাকাতির সরকার জবাব দে।' নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এসে মিছিলটি শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে অন্যদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম শফিক, রতন, রুবেল, মো. মাহমুদুল হাসান সবুজ, তুহিন সরকার, মো. রোজ, আল আমীন, মশিউর রহমান মহান, মতিউর, আরিফ সরকার, মো. ওয়াকিল, মো. লুইস, সৌরভ, শাকিল, এমরান প্রমুখ অংশ নেন।