পেঁয়াজ পাইকারিতে ৬০, খুচরায় ৬৭

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে টনপ্রতি ৮৫২ ডলার নির্ধারণ করার ঘোষণাতেই খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের আড়তে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১৮ টাকা। শুক্রবার সকালে ভারতের নাসিক পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪২ টাকা, বিকেলে ৫৫ টাকা। রোববার পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৬০ টাকা। চট্টগ্রামের বাজারে খুচরায় প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৬৭-৬৮ টাকা। ভারতের নতুন ঘোষণার পর পেঁয়াজের চালান দেশে পৌঁছার আগেই দাম বাড়িয়ে দেয়ায় হতবাক ভোক্তারা। খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের বড় বিপণিকেন্দ্র হামিদুলস্নাহ মার্কেট। এ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে সর্বনিম্ন ৮৫০ ডলার মূল্য নির্ধারণ করেছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। তবে ভারতের পেঁয়াজের মোকামে দাম কম। গত সপ্তাহেও ২৫০-৩০০ ডলারে পেঁয়াজ আমদানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার ভারতনির্ভর। এর বাইরে মিয়ানমার থেকে সুলভে কিছু পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে চীন, মিসরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির চিন্তা-ভাবনা রয়েছে ব্যবসায়ীদের। তবে এসব দেশের পেঁয়াজ আকারে বড়, ঝাঁজও কম। তাই চাহিদা খুব বেশি থাকে না। সূত্র জানায়, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়লেও উৎপাদন বাড়ছে না। সাড়ে ২৩ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে প্রতি বছর। ভারত থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পেঁয়াজ আমদানি হয় ১১ লাখ ৩৬ হাজার টন। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ১০ লাখ টন। এ পরিস্থিতিতে শনিবার থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা কমে গেছে। নতুন দরের পেঁয়াজের ঋণপত্র খুলে স্থলবন্দর দিয়ে দেশে আসতে সময় লাগবে অন্তত এক সপ্তাহ। কিন্তু তার আগেই বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি শুরু হয়েছে পেঁয়াজ। একদিনে কেজিতে ১৮ টাকা বাড়তি বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ কাঁচাপণ্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, 'দাম বাড়ার খবরে বাজারে পেঁয়াজের সংকট দেখা দেয়। এতে যে যার মতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি শুরু করে। দাম বেশি বললেও বাজারে কিন্তু ক্রেতা নেই।' জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের আদা-রসুনের বড় আমদানিকারক ফরহাদ ট্রেডিংয়ের মালিক নুর হোসেন বলেন, 'আমি প্রধানত আদা-রসুন আমদানি করি। কিন্তু বাজারে পেঁয়াজের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে বিকল্প দেশ থেকে আমদানি করে চাহিদা সামাল দেয়ার বিকল্প নেই। এরই মধ্যে আমি তুরস্ক, মিসর, পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজের দর নিয়েছি। সরকার উদ্যোগ নিলে সহায়তা করতে পারি।' ভারতের দ্য হিন্দুর এক খবরে বলা হয়, দেশটির রাজধানী দিলিস্নতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৪০-৫০ রুপিতে উঠেছে। এ কারণে নূ্যনতম রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। দেশটির ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) গত শুক্রবার এ-সংক্রান্ত নির্দেশনাটি জারি করে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই রপ্তানি মূল্য বহাল থাকবে। রপ্তানি মূল্যের মানে হলো, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এখন থেকে টনপ্রতি ৮৫০ ডলারের কমে আর পেঁয়াজ রপ্তানি করতে পারবেন না। এই দরে আমদানি করলে বাংলাদেশে এফওবি (ফ্রেইট অন বোর্ড বা ভাড়া ছাড়া মূল্য) দাঁড়ায় কেজিপ্রতি প্রায় ৭২ টাকা। এর সঙ্গে কেজিতে ৫-৬ টাকা ভাড়া যুক্ত হবে। ভারত নিজের বাজার অস্থির হলেই পেঁয়াজের নূ্যনতম রপ্তানি মূল্য ঠিক করে দেয়। ২০১৫ ও ২০১৭ সালেও তারা রপ্তানি মূল্য বেঁধে দিয়েছিল। অবশ্য, বাংলাদেশে মৌসুমের সময় প্রচুর ভারতীয় পেঁয়াজ আসে। এতে কৃষকরা দাম পান না বলে অভিযোগ। এ জন্য মৌসুমের সময় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিতে কিছু শুল্ক আরোপের দাবি উঠেছিল। যদিও তা সাড়া পায়নি। দেশে নতুন মৌসুম শুরু হবে আগামী ডিসেম্বরে। তখন আগাম পেঁয়াজ বাজারে আসবে। এর আগ পর্যন্ত আমদানির ওপরই নির্ভর করতে হবে। এখন ভারতীয় পেঁয়াজ ছাড়া ভিন্ন উৎস আছে কিনা- জানতে চাইলে পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক আবদুল মাজেদ বলেন, সমস্যা হলো পাকিস্তানি পেঁয়াজ দ্রম্নত নষ্ট হয়ে যায়। চীনা পেঁয়াজ বাংলাদেশের মানুষ পছন্দ করে না। মিসরের পেঁয়াজ অনেক বড় বড়, চারটিতে এক কেজি হয়ে যায়। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে কিছু পেঁয়াজ আসতে পারে। আমদানি হলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।