জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে ৮ দিনের সফরে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হন। আবুধাবিতে যাত্রাবিরতির পর রোববার ইতিহাদ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে নিউ ইয়র্কে পৌঁছানোর কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটনমন্ত্রী মাহবুব আলী বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রধান এবং সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেয়ার পাশাপাশি এ সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ একাধিক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার। এবারের সফরে তাকে দুটি সম্মাননা দেয়া হবে বলে সাংবাদিকদের আগেই জানিয়ে রেখেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য গেস্নাবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাক্সিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই) তাকে 'ভ্যাকসিন হিরো' সম্মাননায় ভূষিত করবে। আর জাতিসংঘ শিশু তহবিল- ইউনিসেফ ২৬ সেপ্টেম্বর 'অ্যান ইভিনিং টু অনার হার এক্সিলেন্সি প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা' শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী 'চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড' গ্রহণ করবেন। সফরসূচি রোববার নিউ ইয়র্কে পৌঁছানোর পর ২৩ সেপ্টেম্বর স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে যৌথভাবে ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের বহুপক্ষীয় প্যানেল বৈঠক পরিচালনা করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিনে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ হলে ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটে বক্তব্য দেবেন। 'রিকগনাইজিং পলিটিক্যাল লিডারশিপ ফর ইমিউনাইজেশন ইন বাংলাদেশ' অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন তিনি। ২৪ সেপ্টেম্বর লোটে নিউ ইয়র্ক প্যালেস হোটেলের কেনেডি রুমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। নিউ ইয়র্ক সফরের সময় ওই হোটেলেই অবস্থান করবেন শেখ হাসিনা। ওইদিন নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যক্সিমার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজেও তিনি অংশ নেবেন। সেদিন দুপুরের পর জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এবং ওআইসি সচিবালয় আয়োজিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন রাতে লোটে নিউ ইয়র্ক প্যালেস হোটেলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। ২৫ সেপ্টেম্বর টেকসই উন্নয়ন নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় শেখ হাসিনা কো-মডারেটরের দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর 'এ কনভারসেশন উইথ অনারেবল প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা' শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি। পরদিন লোটে নিউ ইয়র্ক প্যালেসে ইউএস চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত এক মতবিনিময় সভা ও মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে ইউনিসেফ হাউসে যোগ দেবেন ইউনিসেফ আয়োজিত 'অ্যান ইভিনিং উইথ প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা' শীর্ষক অনুষ্ঠানে। ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ৭৪তম বার্ষিক সাধারণ বিতর্কে বক্তব্য দেবেন। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকটের অবসানে এর আগে জাতিসংঘে দেয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে নতুন কিছু প্রস্তাব তিনি তুলে ধরবেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা ২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে সংবাদ সম্মেলন করবেন এবং নিউ ইয়র্কের হোটেল ম্যারিয়ট মারকুইসে বাংলাদেশি কমিউনিটি আয়োজিত একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ওদিনই জাতিসংঘ সচিবালয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। নিউ ইয়র্ক সফরের সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারও দেবেন। সফর শেষে ২৯ সেপ্টেম্বর ইতিহাদ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে নিউ ইয়র্ক থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী। আবুধাবি হয়ে ১ অক্টোবর ভোরে তার দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
Copyright JaiJaiDin ©2021
Design and developed by Orangebd