বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ টু্যরিজম বোর্ডের সিইও ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস

পর্যটন বিকাশে মহাপরিকল্পনা ও নতুন আইন আসছে

টু্যরিজম বোর্ডের সিইও ড. ভুবন চন্দ্র বলেন, বাংলাদেশ পর্যটনে ব্যাপক সম্ভাবনার দেশ। এই খাতকে শক্তিশালী ও গতিশীল করা গেলে দেশের অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। আর সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ টু্যরিজম বোর্ড কাজ করছে

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:২২

সোহেল হায়দার চৌধুরী
ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস

দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে মহাপরিকল্পনা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টু্যরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি বলেন, পর্যটন খাতে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মকান্ডের মাধ্যমে গতিশীলতা আনতে মহাপরিকল্পনার কাজ এগিয়ে চলেছে। পর্যটন ব্যবসা ও সেবার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদের সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুনের আওতায় নিয়ে আসতে টু্যর অপারেটর ও টু্যরিস্ট গাইড আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। আইনে সংশ্লিষ্টদের জন্য সুনির্দিষ্ট আচরণবিধি রয়েছে। আইনানুযায়ী টু্যর গাইডদের নূ্যনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। টু্যর অপারেটররাও একটি গাইড লাইনের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। বিশ্ব পর্যটন দিবস ২০১৯ উপলক্ষে দৈনিক যায়যায়দিনের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস। রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্থাপিত বাংলাদেশ টু্যরিজম বোর্ডের কার্যালয়ে বসে তার সঙ্গে কথা হয়। এসময় তিনি জানান, বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে দেশে এবারই প্রথম ৬৪টি জেলায় স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। যার সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন স্ব-স্ব জেলার প্রশাসক। এছাড়া জেলাগুলোতে দিবসটি ঘিরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস। অন্য বারের মতো এবারও এ দিবসটি যথাযথ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হবে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছের্ যালি, আলোচনা সভা, ছবি প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান ইত্যাদি। বৈশ্বিক এ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হলো, 'টু্যরিজম অ্যান্ড জবস- অ্যা বেটার লাইফ ফর অল'। এর আলোকে বাংলাদেশ তার স্স্নোগান নির্ধারণ করেছে, 'ভবিষ্যতের উন্নয়নে কাজের সুযোগ পর্যটনে'। ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বাংলাদেশ পর্যটনে ব্যাপক সম্ভাবনার দেশ। এই খাতকে শক্তিশালী ও গতিশীল করা গেলে দেশের অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। আর সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ টু্যরিজম বোর্ড কাজ করছে। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে, আগামী ১৭ ও ১৮ অক্টোবর ভারতের দিলিস্নতে রোড-শো'র আয়োজন। বিজনেস টু বিজনেস সেশনের পাশাপাশি ভারতে বছরব্যাপী পর্যটনবিষয়ক প্রচারণা চালানো। এছাড়া পর্যটন বিষয়ে ফ্লায়ার ও টিভিসি নির্মাণ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে পর্যটনপ্রেমিদের আকর্ষণের লক্ষে। দেশেও জেলা প্রশাসকদের দেয়া হয়েছে এ বিষয়ে প্রচারণা চালানোর জন্য। পর্যটনের বিকাশে এতদিন রাজধানীকেন্দ্রিক কর্মকান্ড হলেও এবার তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে টু্যরিজম বোর্ডের সিইও বলেন, পর্যটনের মুল লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যিক গুরুত্ব প্রচার করা। সে লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি অঞ্চলকে যেমন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, তেমনি বহির্বিশ্বেও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা চলছে। স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমে পর্যটনবিষয়ক প্রবন্ধ-নিবন্ধ অন্তর্ভুক্তি গুরুত্বপূর্ণ উলেস্নখ করে ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, পাঠ্যক্রমে পর্যটনবিষয়ক রচনা থাকলে দেশের মানুষ এ বিষয়ে উৎসাহ পাবে। তিনি বলেন, পর্যটন একটি বহুমাত্রিক শিল্প। এটি সকল শিল্পের সমন্বিত রূপ। পর্যটনের জন্য আর্থিক সামর্থ্য জরুরি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের মানুষের সে সামর্থ্য তৈরি হয়েছে বলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন বাঙালিরা। তবে পর্যটনের বিকাশে যে কোনো দেশেরই অবকাঠমো উন্নয়ন ও বিনোদন ব্যবস্থার সুযোগ থাকা দরকার বলে মনে করেন তিনি। সেটা না হলে বাংলাদেশের পর্যটন পিপাসুরা যেমন বাইরে যাবেন ভ্রমণ পিপাসা ও চিত্ত তৃষ্ণা মেটাতে, তেমনি বিদেশি পর্যটক টানতে প্রতিবন্ধকতা বাড়বে। ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশে পর্যটনের অপার সম্ভাবনার বিষয়টি অনুধাবন করে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যটন আইন-২০১০ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ টু্যরিজম বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। একই বছরে গঠন করা হয় টু্যরিস্ট পুলিশ। এর মাধ্যমে পর্যটন খাত অনেকটাই গতিশীল হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বাংলাদেশ টু্যরিজম বোর্ড পর্যটনের নীতি-নির্ধারণ, প্রচার-প্রসার, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, বিপণন, জনমত সৃষ্টি ও সচেতনতা সৃষ্টিতে নানা ভূমিকা রাখছে উলেস্নখ করে ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, পর্যটন খাতের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান, পেশাজীবী সংগঠনসহ সব শ্রেণির মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে। তিনি বলেন, আমরা পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে সারাদেশে কাজ করছি। সাসটেইনেবল টু্যরিজম নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপন করছি। তার মতে, পর্যটনমনস্ক জাতি গঠিত না হলে বাংলাদেশে পর্যটন খাতে সাফল্যের সম্ভাবনা কমে আসবে। সেজন্য দেশের প্রতিটি স্তরে থাকা ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতার বিকল্প নেই বলে উলেস্নখ করেন তিনি। \হ