রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি

এখন নিজেদের মধ্যে কোন্দলে ক্যাম্প এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা বাড়ছে। এতে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা

প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ি ডাকাত গ্রম্নপের সদস্যরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করেছে। তবে এ সময় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে টেকনাফের জাদিমুড়া শালবাগান নছিরউল জামান ক্যাম্পে পুলিশ ডাকাতদের ধাওয়া করলে তারা গুলি ছোড়ে। এতে ক্যাম্পে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্প পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মনির। তিনি বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি জায়গায় শীর্ষ ডাকাত জাকির ও সেলিম গ্রম্নপের সদস্যরা অবস্থান করছে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল সেখানে যায়। এ সময় ডাকাতদের ধাওয়া করলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে পাহাড়ি অঞ্চলে ঢুকে পড়ে। তিনি আরও বলেন, 'সোমবার গভীর রাতে ওই ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শীর্ষ সন্ত্রাসী জাকির ও সেলিমের গ্রম্নপের সদস্যদের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এ ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে কাউকে পাওয়া যায়নি। সেখানকার লোকজন জানায়, শীর্ষ ডাকাত মোহাম্মদ সেলিমকে গুলি করে হত্যা করে লাশ পাহাড়ে গুম করা হয়েছে। তবে লাশ না পওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।' রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ওপর নজর রাখেন এমন একাধিক দায়িত্বশীল পদস্থ কর্মকর্তা জানান, টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে ডাকাত দলের যারা সক্রিয় রয়েছে তারা হলো?জাকির ডাকাত, মোহাম্মদ সেলিম, মোহাম্মদ কামাল, আমান উলস্নাহ, মোহাম্মদ হামিদ, হামিদ মাঝি, খায়রুল আমিন, মাহমুদুল হাসান, হামিদ, নেছার, সাইফুল ওরফে ডিবি সাইফুল, রাজ্জাক, বুল ওরফে বুইলস্না, রফিক, মাহনুর ওরফে ছোট নুর। তারা একাধিক দলে ভাগ হয়ে নানা অপরাধ করছে। তাদের মূল নেতা হিসেবে রয়েছে আবদুল হাকিম। এখন নিজেদের মধ্যে কোন্দলে ক্যাম্প এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা বাড়ছে। এতে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেকনাফ শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একাধিক মাঝি জানান, দিন-দুপুরে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা পুলিশকে ভয় দেখানোর জন্য গুলি বর্ষণ করেছে। প্রায় ৩০-৪০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। গত রাতেও পাহাড়ি দু'গ্রম্নপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন মারা যাওয়ার খবর ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ রোহিঙ্গারা খুব ভয়ের মধ্যে রয়েছে। টেকনাফ শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি সৈয়দুল আমিন বলেন, 'ক্যাম্পে গোলাগুলি নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রায় সময়ই সেখানে দিন-রাতে গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে থাকে। এ ক্যাম্পটি পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় কিছু পাহাড়ি ডাকাত এসব কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছে। গতকাল রাতে গোলাগুলির ঘটনায় একজন মারা যাওয়ার খবরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু কোনো মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। তবে ক্যাম্প ঘিরে সবার মুখে গোলাগুলিতে এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়েছে।' রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করতে আসা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, জাদিমুড়ায় ২৬-২৭ নম্বর ক্যাম্প অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বেশ কয়েক দফা ওই ক্যাম্পে অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছেন তারা। অভিযানের সময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি করে সন্ত্রাসী দলের সদস্যরা। সন্ধ্যার পর ক্যাম্প এলাকায় ঢুকতেও ভয় পান অনেকে। র্ যাব-১৫, সিপিসি-১ টেকনাফ ক্যাম্প ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট মির্জা শাহেদ মাহাতাব বলেন, 'গোলাগুলির খবর পেয়ে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় কাউকে কোনো ধরনের অপরাধে জড়াতে দেওয়া হবে না। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে ডাকাত গ্রম্নপসহ অন্য যেসব অপরাধচক্র সক্রিয় রয়েছে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। কয়েকজনকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। অন্যরা শিগগিরই ধরা পড়বে।'