মেধার ভিত্তিতে সিট

গণরুমের দুর্দশা লাঘবে ঢাবি কর্তৃপক্ষের প্রথম পদক্ষেপ

মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে হবে। এর পরে কোনোভাবেই হলে থাকা চলবে না

প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে আসন বরাদ্দের প্রক্রিয়ায় শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে হবে। এর পরে কোনোভাবেই হলে থাকা চলবে না। পাশাপাশি আবাসন সংকট মেটাতে হলে 'বাংক বেড' স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। বুধবার রাতে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রভোস্ট কমিটির এই সভা হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, 'হল প্রশাসন প্রথম বর্ষে ভর্তি শিক্ষার্থীদের মেধার ভিত্তিতে শূন্য আসনে সিট বরাদ্দ করবে এবং কোনো শিক্ষার্থী হল প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া হলে উঠতে ও অবস্থান করতে পারবে না ' কেউ এর ব্যত্যয় ঘটালে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করা হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলে শিক্ষার্থী আছেন ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। আবাসন সংকটের কারণে প্রতিটি হলেই সৃষ্টি হয়েছে 'গণরুম', যেখানে মেঝেতে টানা বিছানা পেতে প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে থাকতে হয়। কারা এসব কক্ষে থাকবে তার নিয়ন্ত্রণ থাকে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের হাতে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ হয়ে যাওয়ার পরও অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন হলে থেকে চাকরি খোঁজেন। ফলে কাগজে-কলমে তাদের সিট না থাকলেও বাস্তবে আসন খালি হয় না। গণরুম সংকটের সমাধানের দাবিতে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে কবি জসীমউদ্‌দীন হলের ২০৮ নম্বর কক্ষের গণরুমে গিয়ে উঠেছেন ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত। গত ১ অক্টোবর বিভিন্ন হলের গণরুমের প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক সমাবেশ থেকে তিনি ঘোষণা দেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করার ব্যবস্থা না নিলে গণরুমের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনি উপাচার্যের বাসায় গিয়ে উঠবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হলের যেসব কক্ষে আসনের বেশি শিক্ষার্থী অবস্থান করছে, সেখানে 'বাংক বেড' স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে প্রভোস্ট কমিটির সভায়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বা হলগুলোতে কোনো 'মাদকসেবী, মাদককারবারি, মাদকাসক্ত এবং সন্ত্রাসী' অবস্থানের তথ্য থাকলে, তা অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানাতে শিক্ষার্থীসহ সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে। বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি হত্যাকান্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে প্রভোস্ট কমিটির সভায়। গত রোববার গভীর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ফেসবুকে মন্তব্যের সূত্র ধরে শিবির সন্দেহে আবরারকে ডেকে নিয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে সংগঠনটির তদন্তে উঠে এসেছে। ওই ঘটনায় বুয়েট ছাত্রলীগের ১১ জনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে 'মাস্তানিতে' জড়িতদের ধরতে সারাদেশের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তলস্নাশি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই অভিযানে কারও দলীয় পরিচয় দেখা হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।