পার্বত্য চট্টগ্রামে কাউকে আতঙ্কে থাকতে হবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। পাশে (বাঁয়ে) পার্বত্য চট্টগ্রাম-বিষয়কমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং -যাযাদি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, 'পাহাড়ে যারা সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি, খুন-অপহরণ করে, সামনে তাদের জন্য ভয়ঙ্কর দিন অপেক্ষা করছে। তারা কেউ রেহাই পাবে না, আমরা তাদের চিহ্নিত করব। এসব অপকর্মের সঙ্গে যেসব গডফাদার জড়িত, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে এবং বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হবে।' বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে দ্বিতীয় দিনের মতো বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শুরুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছেন- হঠাৎ পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তপাত কেন? প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই অঞ্চলে কীভাবে রক্তপাত বন্ধ করা যায়, তা শুনতে এসেছেন। এরপর সভায় উপস্থিত তিন পার্বত্য জেলার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মতামত ও পরামর্শ চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অনেকের বক্তব্য শোনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'পার্বত্য অঞ্চলে যা ঘটছে, তা শুনলাম। এখানে কাউকে হত্যা করলে তা থামানো যাচ্ছে না। ভয়ে মামলা করার সাহস পান না কেউ। সাক্ষীও হতে চান না শুনেছি। ফেসবুক ব্যবহারের মাধ্যমে সাইবার ক্রাইম হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চল বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে থাকবে, অশান্ত থাকবে, মানুষ অশান্তিতে থাকবে- আমরা তা চাই না। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। যেকোনো মূল্যে এই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনব। কাউকে আর আতঙ্কে থাকতে হবে না। কাউকে চাঁদা দিতে হবে না। এখানে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় করতে দেয়া হবে না- আমরা জানতে চাই, সেটা কার স্বার্থে। এই এলাকার মানুষ জিম্মি হয়ে গেছে- আমরা তার পরিত্রাণ চাই।' স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'সুন্দরবনের জলদসু্যরা আত্মসমর্পণ করেছে, সর্বহারা পার্টির লোকেরা আত্মসমর্পণ করেছে, জঙ্গিবাদ দমন করা হয়েছে এবং মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ ও সেনাবাহিনী অত্যন্ত শক্তিশালী। তাই আমরা যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে, মানুষ হত্যা করছে, চাঁদাবাজি করে মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে, তারা ভুল করছে। বিপথে চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সব ধরনের সন্ত্রাস নির্মূল করা হবে। যেকোনো মূল্যে এই এলাকায় শান্তির সুবাতাস ফিরিয়ে আনা হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করব। খুব অল্প দিনের মধ্যেই পরবর্তী পদক্ষেপ আসবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা, এ দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ উপার্জনকারীর কোনো স্থান নেই। তাই পার্বত্য অঞ্চলেও এসবের কোনো অস্তিত্বই থাকতে দেয়া হবে না।' স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী এ ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলার আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে বুধবার রাতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সামরিক, বেসামরিক, প্রশাসনিক, গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্দ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। বৃহস্পতিবার রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম-বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিংয়ের সভাপতিত্বে বেলা ১১টায় শুরু হয়ে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলা উচ্চপর্যায়ের এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ছাড়াও বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার, ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী পুনর্বাসন টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল উদ্দিন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারি, সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল এসএম মতিউর রহমান, বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুর ইসলাম,র্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের র্(যাব) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ড. বেনজির আহমেদ, চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজুরি চৌধুরী এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা। সভায় তিন পার্বত্য জেলার উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, হেডম্যান, কারবারিসহ নারী প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম-বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কয়েক বছর ধরে অশান্তি চলে আসছে। অশান্তি দূর করার জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই এবার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। সংসদ সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে মানুষকে আতঙ্কমুক্ত করতে হবে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তার জন্য সামাজিক আন্দোলন জোরদার করতে হবে। পুলিশের আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে যারা শান্তি চায় না, উন্নয় চায় না- সেসব কতিপয় দুস্কৃতকারীকে কঠোরভাবে দমন করা হবে। পার্বত্য অঞ্চল থেকে যেকোনো সন্ত্রাস নির্মূল করা হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ পার্বত্য চট্টগ্রাম চাই। সভা বলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত এই সভা চলে।