জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভা

মীজানুরের কথায় 'আকাশ থেকে পড়লেন' খন্দকার মোশাররফ

'যুবলীগের দায়িত্বে গেলে ক্যাসিনো চালানো যায়, টেন্ডারসহ টাকা লুট করার ব্যবস্থা আছে। চিন্তা করেন, একজন ভাইস চ্যান্সেলরের লক্ষ্য কী হয়ে গেছে!'

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন -যাযাদি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেওয়া খন্দকার মোশাররফ হোসেন 'আকাশ থেকে পড়েছেন' যুবলীগের চেয়ারম্যান হতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমানের আগ্রহ দেখে। শনিবার এক আলোচনা সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কড়া সমালোচনা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ। তিনি বলেছেন, 'আজকের পত্রিকায় দেখলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর মীজানুর রহমান ঘোষণা করেছেন যুবলীগের দায়িত্ব যদি তাকে দেওয়া হয়, তিনি উপাচার্যের পদ ছেড়ে দেবেন।' আমি আকাশ থেকে পড়েছি .. ধিক, লজ্জার। সমাজ কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে? কী জন্য? যুবলীগের দায়িত্বে গেলে ক্যাসিনো চালানো যায়, যুবলীগের দায়িত্বে গেলেই টেন্ডার, যুবলীগের দায়িত্বে গেলে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করার ব্যবস্থা আছে। চিন্তা করেন, একজন ভাইস চ্যান্সেলরের লক্ষ্য কী হয়ে গেছে!' ক্যাসিনোকান্ডে জড়িয়ে যুবলীগের কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের যুব সংগঠনটির সম্মেলন হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংগঠনটিকে কলঙ্কমুক্ত করতে এখন পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব আনার পরিকল্পনা হচ্ছে। এর মধ্যেই যুবলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান শুক্রবার বলেছেন, যুবলীগকে সুপথে ফেরাতে তাকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হলে তা নিতে উপাচার্যের পদ ছাড়তে তিনি রাজি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মীজানুরকে কয়েক বছর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। খন্দকার মোশাররফ বলেন, 'আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, হলের ভিপি ছিলাম, একটি ছাত্রসংগঠনের (ছাত্রলীগ) নেতা ছিলাম, তারপরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার হয়েছি, অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসার, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসার, প্রফেসার হয়েছি, বিভাগীয় চেয়ারম্যান সব হয়েছি। একজন ভাইস চ্যান্সেলর একটি দলের অঙ্গ সংগঠনের প্রধান হতে চান, যে সংগঠনটি বর্তমানে দুর্নীতিবাজ-চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজের জন্য বিখ্যাত। এর চেয়ে সমাজে পচনের উদাহরণ এর থেকে বেশি আর কিছু হতে পারে না।' জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ টেনে এই বিএনপি নেতা বলেন, 'জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছাত্রলীগ নেতাদের ঈদের বখশিশ দিয়েছেন ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। 'যে ভাইস চ্যান্সেলর ঈদের সালামি দেন ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, তাহলে তিনি কি করছেন? উনার কাছে কি টাকার গাছ আছে, না টাকা বানানোর মেশিন আছে?' দুর্নীতির জন্য সরকারকে দায়ী করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই সরকার 'জনগণের সরকার নয়' বলে সব স্তরে আজ পচন লেগেছে। জবাবদিহিতার অভাবে এমন অবস্থা হয়েছে যে, শুধু খালেদা জিয়াকে একা কারাগারে রাখে নাই, কারাগারে বন্দি করেছে এদেশের গণতন্ত্রকে। একজনের স্বপ্ন আজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকার জন্য এটা করেছে। এই অবস্থা পরিবর্তনে বিএনপি চেয়ারপারসনকে কারামুক্ত করতে আন্দোলনে নামতে সবাইকে আহ্বান জানান খন্দকার মোশাররফ। ভারতের সঙ্গে চুক্তি প্রসঙ্গ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির সমালোচনা করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, 'এই সরকার যে চারটা চুক্তি করে এসেছে, এগুলোর মধ্যে শুধু দেওয়া আছে, নেওয়ার কথা কোথাও লেখা নাই।' তিস্তা কতদিন যাবত আমাদের বিরাট সমস্যা, এটার কোনো কথা নাই, আমাদের ৫৪টা অভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে দিয়েছে ভারত, এগুলোর বিষয়ে কোনো আলোচনা নাই। ফেনী নদীর পানি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে সামান্য পানি দিয়েছেন। আমরা ইতোমধ্যে পত্রিকায় দেখেছি যে, ১.৮ কিউসেক যে পানি দিয়েছে, তার আগেই না কি তারা ৩৬টা পাম্প দিয়ে বেআইনিভাবে ৭২ কিউসেক পানি নিচ্ছে। তাই আমরা মনে করি, এগুলো দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি। চুক্তির সমালোচনাকারী বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের পেছনে যারা ছিলেন, তাদেরও বিচার জনগণ একদিন করবে বলে হুঁশিয়ারি দেন সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ। জাতীয় প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়া মুক্তি পরিষদের এই আলোচনা সভায় মোশারফ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি তাজুল ইসলাম গাজী, বিএনপি নেতা নবী উলস্নাহ নবী, ফরিদউদ্দিন প্রমুখ।