সময়টা খুব খারাপ: কাদের

মন্ত্রী হলে কি মেনন একথা বলতেন?

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ওবায়দুল কাদের
ক্যাসিনোকান্ডে গ্রেপ্তাররা দলীয় নেতাদের সঙ্গে তাদের সখ্য নিয়ে যে তথ্য দিচ্ছেন তা শত্রম্নতাবশত হতে পারে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করবেন। রোববার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান। চলমান দুর্নীতি ও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তারদের অনেকেই সরকার দলীয় নেতাদের সঙ্গে তাদের সখ্যের বিষয়টি সামনে আনছেন। ঢাকা উত্তর সিটির কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব গ্রেপ্তারের পর দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের ছেলে বলে পরিচয় দিতেন। গ্রেপ্তারদের সঙ্গে নেতাদের সখ্যের নাম চলে আসছে, এ বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে তদন্ত করবেন কি না এ প্রশ্নে কাদের বলেন, অনেক রকমের নিউজ অনেক সময় হয়। কিছু নিউজ একজনের সঙ্গে আরেকজনের শত্রম্নতা আছে। সময়টা খুব খারাপ তো, এ সময়ে এটা আসলে ভেবে দেখতে হবে। নেত্রীর সঙ্গে আলাপ করে জানাব। গত শনিবার অভিযান চালিয়ে রাজীবকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আটক হওয়া রাজীব দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নানকের সন্তান হিসেবে পরিচয় দেন- এ বিষয়ে কাদের বলেন, 'নানক সাহেবের একটা মেয়ে আছে, ছেলেটা এক্সিডেন্টে মারা গেছে। আর কোনো সন্তান আছে বলে আমার জানা নেই। এ ধরনের কোনো পাতানো সন্তান কি না এটা নানক সাহেবকে জিজ্ঞাস করেন।' নানকের কারণে প্রভাব বিস্তার করে এত টাকার মালিক হয়েছেন? এ বিষয়ে কাদের বলেন, 'আমার মনে হয় হাওয়া থেকে পাওয়া কিছু না বলে আপনি নানক সাহেবকে জিজ্ঞাস করুন, এ ধরনের একটা খবর বেরিয়েছে, এর সত্যতা কতটুকু?' খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপিকে আন্দোলন করতে বলুন। তারা পরিষ্কার বলে দিয়েছে, আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো বিকল্প নেই। কাজেই এক মুখে এত কথা কেন? তাদের বলুন, আন্দোলন করতে। 'ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সবাই এক বাক্যে বলছেন যে, খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনি পথে হবে না, অন্য কোনোভাবে হবে না, সরকার তাকে মুক্তি দেবে না। কাজেই আন্দোলনের ঝড় তুলতে হবে এবং বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে, তারপর তুমুল আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে বের করতে হবে। আন্দোলনে তো কোনো বাধা নেই। জনগণ সায় দিলে আন্দোলন করবে'- বলেন তিনি। মন্ত্রী হলে কি মেনন একথা বলতেন একাদশ সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি বলে ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন করেন, মন্ত্রী হলে মেনন একথা বলতে পারতেন কি না। মেননের এ বক্তব্যের বিষয়ে ১৪ দলের সমন্বয়কের কাছে জানতে চাওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন জোটের নেতৃত্বে থাকা দলটির এ নেতা। রোববার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের একথা বলেন। ঢাকা-৮ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে গত দুই সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী মেনন বিগত সরকারের দুই দফায় দুই মন্ত্রণালয় সামলেছেন; প্রথমে বেসরকারি বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং পরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি বামপন্থি নেতা মেননের। ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে 'ভোট ডাকাতির' অভিযোগ তুললেও তিনি এতদিন চুপই ছিলেন। শনিবার বরিশালে এক অনুষ্ঠানে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে প্রসঙ্গ তুলে আলোচনায় আসেন মেনন। বরিশালের অশ্বিনী কুমার টাউন হলে ওয়ার্কার্স পার্টির সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আমিও নির্বাচিত হয়েছি। তারপরও আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এমনকি পরবর্তী সময়ে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি দেশের মানুষ।' সরকারের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশে লুণ্ঠন ও দুর্নীতি 'মহামারী আকার ধারণ করেছে' বলে মন্তব্য করেন তিনি। মন্ত্রিসভার সাবেক সহকর্মীর এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'তিনি যদি বলেই থাকেন, আমার প্রশ্ন হচ্ছে এতদিন পরে কেন? এই সময়ে কেন? নির্বাচনটা তো অনেক আগে হয়ে গেছে। আরেক প্রশ্ন সবিনয়ে- মন্ত্রী হলে কি তিনি একথা বলতেন? আর কোনো কিছু বলতে চাই না।' মেনন কেন এ বক্তব্য দিয়েছেন, তা আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাছে জানতে চাওয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'আমাদের ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম সাহেব, সেটা আমরা তার কাছে জানতে চাইব।' ক্যাসিনোকান্ডের পর একটি ক্লাবের সঙ্গে মেননের সম্পৃক্ততার কথা ওঠার ক্ষোভে তিনি এসব কথা বলছেন কি না জানতে চাইলে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, 'এটি তাকে জিজ্ঞাসা করলে ভালো হয়, তিনি কেন ক্যাসিনোকান্ডের পর একথা বললেন, ইলেকশনের পর কেন বললেন না। মেনন শপথ ভঙ্গ করেছেন কি না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন- ওই প্রশ্নটা তাকে করেন।'