ওভারটেকিং ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার রাজধানীর খামারবাড়ীতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন -ফোকাস বাংলা
যাযাদি রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রাস্তায় ফিটনেসবিহীন যান চলাচল এবং ওভারটেকিংয়ের মতো অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে 'জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০১৯' উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। রাজধানীর খামারবাড়ীতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করা হয়। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওভারটেকিং নামক অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে চালনা করা দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, 'কেউ যদি অহেতুক নিয়মের বাইরে গিয়ে গাড়ি বা ট্রাকের আকার পরিবর্তন করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং আমাদের ট্রাফিক পুলিশকেও এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, ড্রাইভারদেরও দোষ রয়েছে, কোনো গাড়ি তাদের ওভারটেক করলে যেন মাথা খারাপ হয়ে যায়, ওই গাড়িকে তাদেরও ওভারটেক করতেই হবে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। শেখ হাসিনা বলেন, 'একটি রাস্তা কেমন লোড নিতে পারে, একটি সড়কে কী ধরনের দুটি গাড়ি পাশাপাশি চলতে পারে, তার একটি আকার নির্দিষ্ট করা থাকে। অথচ আমাদের দেশে দেখা যায়, অধিক মুনাফার আশায় আসন বৃদ্ধির জন্য বা অতিরিক্ত মালামাল পরিবহণের জন্য ক্ষেত্রবিশেষে এক্সট্রা ক্লাম দিয়ে দুই পাশে বেআইনিভাবে গাড়ির আকার বাড়িয়ে নিচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে।' অতীতে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তৈরি করা এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গৃহীত হলেও পরবর্তী সময়ে তা থেমে যাওয়ার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ঋতু পরিবর্তন এবং নতুন ঋতু আগমনের সঙ্গে সঙ্গে অতীতের বিষয়টি ভুলে যাওয়ার মতো বৈশিষ্ট্য আমাদের মানসিকতা বলেও উলেস্নখ করেন। আর বিষয়টি আমাদের সড়ক আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী বা আন্দোলনকারীদের দৃষ্টিতে কেন আসেনি, সে প্রশ্নও করেন প্রধানমন্ত্রী। সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান একাব্বর হোসেন, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন এবং সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দোকার এনায়েত উলস্নাহ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন। সড়কে যানবাহন এবং পথচারীদের চলাচলের ক্ষেত্রে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর থেকে দিনটি সারা দেশে নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, 'জীবনের আগে জীবিকা নয়, সড়ক দুর্ঘটনা আর নয়'। শোভাযাত্রা, পোস্টার ও হ্যান্ডবিল বিতরণ, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক ভিডিওচিত্র প্রদর্শন, আলোচনা সভাসহ নানামুখী কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি উদ্‌যাপন করা হয়। ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে তার সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলে উলেস্নখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'সড়ক নিরাপদ করতে গেলে সব থেকে বেশি যেটার প্রয়োজন সেটা হচ্ছে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের দেশের মানুষের একটা প্রবণতা হচ্ছে দুর্ঘটনা ঘটলে চালককে সব থেকে বেশি গালমন্দ করা হয়।' প্রধানমন্ত্রী চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তাদের ত্রম্নটি-বিচু্যতি ঘটার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েই বলেন, দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কিন্তু কেবল চালক নন, পথচারীরাও অনেকাংশে দায়ী। কারণ, ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস, ওভারপাস থাকার পরও দেখা যায় যে পথচারীরা রাস্তার মাঝখান দিয়ে পারাপার হচ্ছেন, ফুটপাত ব্যবহার করছেন না। একটি চলন্ত গাড়িকে কেবল হাত দেখিয়ে দৌড় দিয়ে বা মোবাইলে কথা বলতে বলতেই তারা রাস্তা পার হয়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা বলেন, গাড়িটি তো একটা যন্ত্র। কাজেই ব্রেক কষলেও তো থামতে এর কিছুটা সময় লাগে। কাজেই এই বোধ বা জ্ঞান তো থাকতে হবে। সেই সঙ্গে সড়কে চলাচলের যে আইন রয়েছে, তা-ও তো মেনে চলতে হয়। এসব বিষয়ে সচেতনতাও সৃষ্টি করা হয় না। প্রধানমন্ত্রী দেশের স্কুলপর্যায়ে ট্রাফিক আইন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সরকারপ্রধান বলেন, এজন্য স্কুল-কলেজ এবং যেসব প্রতিষ্ঠানে অধিক জনবল কাজ করে, তাদের মধ্যে ট্রাফিক আইন বা ট্রাফিক রুল বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেওয়াটা একান্তভাবে প্রয়োজন।