রাজশাহীতে দেশি গরুতেই মজেছে কোরবানির হাট

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

রাজশাহী অফিস
রাজশাহী সিটির পশুর হাট Ñফাইল ছবি
দুয়ারে আসছে ঈদুল আজহা। হাতে আর মাত্র ১০/১২ দিন। তাই ছুটির দিনে প্রথমবারের মতো ভিড় বেড়েছে রাজশাহীর পশু হাটে। শুক্রবার সকাল থেকেই ক্রেতাদের পদচারণায় গমগম করছে রাজশাহীর সিটি পশুর হাট। ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর কষাকষিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে উত্তরাঞ্চলের সবর্বৃহৎ এ হাট। আগামী ২২ আগস্ট ঈদ ধরে সিটি হাটে পশুর আমদানি বেড়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে কোরবানির জন্য গরু-ছাগল কিনতে সাধারণ ক্রেতাদের পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা ভিড় জমাচ্ছেন। এদিন অন্যান্য পশু সরবরাহও বেড়েছে। হাটে ভারতীয় গরুর চেয়ে দেশি গরু কম হলেও চাহিদা ও দাম দুটোই বেশ চড়া। বিক্রেতারা বলছেন, গত তিন বছর থেকে রাজশাহীর সিটি হাটসহ বিভিন্ন পশুর হাটে ভারতীয় গরু কম আসছে। ক্রেতাদের কাছে দেশি গরুর চাহিদা বেড়েছে। শুধু তাই না, কয়েক বছর ধরে খামারিরা লাভবান হচ্ছেন। অনেকেই বাড়তি লাভের আশায় বাড়িতে ছোট আকারের খামার তৈরি করে ফেলেছেন। কিন্ত হঠাৎ করে গোখাদ্যের দাম বাড়ায় খামারগুলোতে গরু পালনের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তাই দেশি গরুর দাম এবার অন্য বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। রাজশাহী সিটি হাট ছাড়াও নাওহাটা হাট, বানেশ্বর হাট, কেশরহাট, কাটাখালী হাট, গোদাগাড়ীর কঁাকনহাট, মহিষালবাড়ী হাট ও মাচমইল হাটে কোরবানির পশুর দামের তারতম্য একই। রাজশাহী সিটি হাটে গিয়ে দেখা গেছে ছোট সাইজের গরুর (৬০ কেজি মাংস) দাম ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। মাঝারি সাইজের গরুর (৮০ কেজি মাংস) দাম ৬০ থেকে ৭০ হাজার ও বড় সাইজের গরুর (১০০-১৪০ কেজি মাংস) দাম ৯০ থেকে ১ লাখের ওপরে হঁাকানো হচ্ছে। অপরদিকে আনুমানিক ১০ থেকে ১২ কেজি ওজনের কোরবানির ছাগলের দাম ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা, ১৫ থেকে ১৮ কেজি ওজনের ছাগলের দাম ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা ও ২০ থেকে ২৫ কেজি মাংস হবে এমন ছাগলের দাম হঁাকা হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা পযর্ন্ত। নাটোরের সিংড়া উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী সোবাহান আলী জানান, তিনি প্রতি বছর গরু কিনতে রাজশাহী সিটি হাটে আসেন। এখান থেকে পাইকারি দামে গরু কিনে রাজধানী ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ভারতীয় গরুর দাম গত বছরের মতোই রয়েছে। তবে দেশি গরুর দাম এবার তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। এজন্য গোখাদ্যের দাম বাড়ার কথা বলা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মধ্যে পড়বে। তবে ভারতীয় গরু কম এলে দেশীয় খামারিরা শেষ সময়ে কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পারবেন। পবার পারিলা থেকে আসা গরু বিক্রেতা গোলাম মোস্তফা বলেন, স্বাভাবিক দিনের তুলনায় আজ গরু ও ছাগল আমদানি ও কেনাবেচা বেড়েছে। তবে হাটে দেশি গরুর চাহিদা ও দাম দুটোই বেশি। কারণ, সারা বছর ধরে একজন খামারিকে গরু লালনপালন করতে হয়। বাজারে গোখাদ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এর ওপর কৃষি বিভাগের দেখানো স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণের খরচও রয়েছে। সব মিলিয়ে লালনপালনের খরচ বাড়ায় গরুর দাম এবার কিছুটা বেড়েছে। তবে খরচ বাদে সামান্য লাভ পেলেই গরু ছেড়ে দিচ্ছেন বলে জানান বিক্রেতা গোলাম মোস্তফা। সিটি হাটে আসা মহানগরীর শালবাগান এলাকার ক্রেতা আবদুস সালাম বলেন, শহরে বাড়িতে আগেভাগে কোরবানির গরু কিনে রাখা দায়। তবে কোনো কোনো সময় শেষ দিকে পশু সংকট দেখা দিলে দাম দ্বিগুণ হয়। তাই হাতে ১০/১২ দিন সময় রেখেই কোরবানির গরু কিনতে এসেছেন। কিন্তু গতবারের তুলনায় দেশি গরুর দাম বেশি। তার অভিযোগ গত বছর মাঝারি আকৃতির গরু ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া গেছে। কিন্তু এবার সেই গরুর দাম ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা হঁাকছেন বিক্রেতারা। তাই এবার তার মতো অনেকেরই কোরবানির খরচ বাড়বে বলেও জানান এই ক্রেতা। রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, এবারের কোরবানির মৌসুমে প্রথম দিকে হাটে মহিষের আমদানি বেশি ছিল। কিন্তু সময় ঘনিয়ে আসায় এখন গরুর সরবরাহ বেড়েছে। তবে হাটে ভারতীয় গরু থাকলেও ক্রেতাদের মধ্যে দেশি গরুর চাহিদা বেশি। কিন্তু দেশি গরুর সরবরাহ কম থাকায় দাম একটু বেশি। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে। সেজন্য আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। হাটের নিরাপত্তা প্রশ্নে আতিকুর রহমান বলেন, হাটে পযার্প্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা রয়েছে। মাইকের মাধ্যমে সবসময় ক্রেতা-বিক্রেতাদের লেনদেন করতে সতকর্ থাকার পরামশর্ প্রদান করা হচ্ছে। তবে হাটে এখন পযর্ন্ত অবৈধভাবে গরু মোটাতাজাকরণ করেছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য কোনো ডাক্তার নেই। আশা করা যাচ্ছে আগামী রোববার থেকে একজন ডাক্তার বসবেন। এছাড়া জালনোট শনাক্ত করার জন্য মেশিন রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে পশুর হাটে ধীরে ধীরে কেনাবেচা জমে উঠেছে বলেও জানান হাট ইজারাদার।