পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ঈদে মিলাদুন্নবীর শোভাযাত্রা
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই যথাযথ ধর্মীয় ভাব-গম্ভীর পরিবেশে রোববার সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত হয়েছে। বিশ্ব সাম্য ও মানবতার বার্তাবাহী শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রবিউল আউয়াল মাসের এ দিনে জন্মগ্রহণ ও মৃতু্যবরণ করেন। এ দিনটি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়সহ শান্তিকামী প্রত্যেক মানুষের কাছে তাই দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সকাল থেকেই মুসলিস্নদের 'মারহাবা, ইয়া রব ইয়া রব' ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে নগরীর মূল সড়ক ও অলিগলিগুলো। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জশনে জুলুশের মিছিল বের করে। মিছিলের পাশাপাশি ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বিভিন্ন মোড়ে সামিয়ানা টাঙিয়ে চলে ইসলামী সংগীত ও ওয়াজ মাহফিল। দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা সিটি করপোরেশন রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কের দু'পাশে, গুরুত্বপূর্ণ সড়কদ্বীপে এবং বিশেষ বিশেষ ভবনের সামনে কালেমা তৈয়বা খচিত পতাকা ও জাতীয় পতাকা দিয়ে সজ্জিত করে। ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রোববার ছিল সরকারি ছুটি। দিনটি উদযাপন উপলক্ষে ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল মহানবী (সা.)-এর পূর্ণাঙ্গ জীবন নিয়ে আলোচনা, সেমিনার, সমাবেশ, মিলাদ-মাহফিল, আখেরি মোনাজাত এবং ঢাকা মহানগরীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল সেমিনার, নাতে রাসূল, মিলাদ মাহফিল, ইসলামী বই প্রদর্শনী। প্রতি বছরের মতো এবারও আশেকান গাউছিয়া রহমানিয়া মঈনিয়া সহিদিয়া মাইজভান্ডারীর উদ্যোগে রাজধানীর গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তনে ধর্মীয় সেমিনার করে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হয়েছে। সকাল ৯টায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানে মাইজভান্ডার দরবার শরিফের আলহাজ শাহজাদা সৈয়দ সহিদউদ্দীন আহমদ আল-হাসানী ওয়াল হোসাইনি মাইজভান্ডারী সভাপতিত্ব করেন। তিনি নবীর আদর্শ অনুসরণের মধ্য দিয়ে সমাজে হক ও ইনসাফ কায়েম এবং মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ দূর করার আহ্বান জানান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নবী করিমের জীবনদর্শন অনুসরণ করলে জগতে সুখ-শান্তি ফিরে আসবে। তিনি জঙ্গিবাদ বর্জন করে মুসলিম ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সামছুল হক টুকু উপস্থিত ছিলেন। আঞ্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারিয়া মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠে আয়োজন করে শান্তি সমাবেশ। প্রিয় নবীর আদর্শে জীবন গড়ার আহ্বান জানান বক্তারা। ভক্ত আশেকানরা মিরপুর এলাকায় বের করে জসনে জুলুস। শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি মাঠে আশেকানে মাইজভান্ডারী অ্যাসোসিয়েশন আয়োজন করে ভক্ত আশেকানদের মহাসম্মেলন ও ওয়াজ মাহফিলের। মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পরে বের করা হয় ঈদে মিলাদুন্নবীর শোভাযাত্রা। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আলোচনা সভা করেছে বাংলাদেশ আঞ্জুমানে আশেকানে মোস্তফা (সা.)। পরে বের করে আনন্দ শোভাযাত্রা। রাজধানীর মোহাম্মদপুর নুরজাহান রোডের্ যালি করেছে সেহাবিয়া দরবার শরিফ। এ উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচির আয়োজন করে। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বিশেষ মোনাজাত, জিকির, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, আলোচনা, এতিম ও দুস্থদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এছাড়া দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতেও নানা কর্মসূচিতে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত হয়েছে। বিশ্ব মানবের মুক্তিদূত, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম ও ওফাত দিবস। ১২ রবিউল আউয়াল খাতেমুন নাবীয়ি্যনের জন্ম ও ওফাত দিন হওয়ায় এ দিনটি ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসীদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদার। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এ দিনে মক্কার কুরাইশ বংশের বনি হাশেম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন সর্বকালের সেরা এ মহামানব।