সম্রাট ও আরমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলা

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার দুপুরে দুদকের দুই কর্মকর্তা আলাদা দুটি মামলা করেছেন। দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম। তার বিরুদ্ধে ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আরমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম। আরমানের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। রাজধানীর অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে সম্রাট দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় ছিলেন। রাজনৈতিক পরিচয় ও পৃষ্ঠপোষকতায় অপরাধ জগতের অপ্রতিরোধ্য সম্রাট হয়েছিলেন তিনি। রাজধানীর কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে অফিস খুলে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করেছেন। একসময় গডফাদারদের পক্ষে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-তদবির করলেও পরে রাজনৈতিক পর্যায়ে ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা থেকে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। সামনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর আবার আলোচনায় আসে সম্রাটের নাম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক অঙ্গনের লোকেরা মনে করছিলেন, ঢাকায় ক্যাসিনো ব্যবসার প্রধান নিয়ন্ত্রকই হলেন সম্রাট। শুরুতে কয়েক দিন কাকরাইলে নিজের অফিসে থাকলেও পরে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ৬ অক্টোবর কুমিলস্না থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র?্যাব। গ্রেপ্তারের পর বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদন্ড দেয়। অস্ত্র ও মাদক রাখায় সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা করা হয়। দুই মামলায় সম্রাটকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র?্যাব। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তার কাছে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা আছে। সূত্র বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট জানিয়েছেন ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি থেকে তিনি এই বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন। ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর তিনি কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখান থেকে নগদ টাকা অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত সম্রাটের মাত্র ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকার নথিপত্র পাওয়া গেছে। সম্রাটের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি আরমান। ক্যাসিনো, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির টাকার বড় অংশ আরমানের কাছে রাখতেন সম্রাট। 'লাগেজ পার্টি' থেকে যুবলীগ, ক্যাসিনো ও সিনেমা প্রযোজক হয়ে আরমান দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সব জায়গা। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে বিদেশ থেকে 'লাগেজ পার্টির' আনা ইলেকট্রনিক পণ্য বায়তুল মোকাররম এলাকার দোকানে দোকানে বিক্রি করতেন। পরে নিজেই লাগেজ পার্টির কারবারে যুক্ত হন। ২০১৩ সালে যুবলীগের পদ পেয়ে অল্প সময়ে গড়ে তোলেন বিত্তবৈভব। জুয়া-ক্যাসিনোর টাকায় নামেন সিনেমা প্রযোজনায়ও। সম্রাটের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগের সুবাদেই ২০১৩ সালে যুবলীগের মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতির পদ পান আরমান। সম্রাটের ছত্রচ্ছায়ায় ক্লাবপাড়ার ক্যাসিনো ও জুয়া-বাণিজ্যের অন্যতম নিয়ন্ত্রকে পরিণত হন আরমান। তিনিই সম্রাটকে ক্যাসিনো ব্যবসায় আগ্রহী করেন বলে প্রচার আছে। সম্রাটের হয়ে পুরো ক্যাসিনো ব্যবসা দেখভালের দায়িত্ব পালন করতেন আরমান। ৬ অক্টোবর কুমিলস্না থেকে সম্রাটের সঙ্গে গ্রেপ্তার হন আরমানও। গ্রেপ্তারের সময় মদ্যপ ছিলেন আরমান। তার কাছে মাদকও পাওয়া যায়। সে কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ছয় মাসের কারাদন্ড দেয়।