দুর্ঘটনার কারণ 'হিউম্যান ফেইলিওর'

ব্রিটিশ আমলের আইনেই চলছে এ দেশের রেল

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের শাস্তি হিসেবে দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বার্ষিক বর্ধিত বেতন বন্ধ রাখা হয়

প্রকাশ | ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দবাগ রেলস্টেশনের আউটার ক্রসিংয়ে সোমবার দিবাগত রাতে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও আন্তঃনগর তূর্ণা নিশীথার মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বগি -ফাইল ছবি
যাযাদি রিপোর্ট ব্রিটিশ আমলের আইনেই চলছে রেল। একজন অভিযুক্ত লোকোমাস্টার গার্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি চাকরি থেকে অব্যাহতি। তবে ২০১৪ থেকে এ পর্যন্ত দুর্ঘটনার জন্য মাত্র দুজনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ব্রিটিশ আমলের ত্রম্নটিপূর্ণ আইনের কারণে তাও বাস্তবায়ন করতে পারেনি বলে রেলওয়ে অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। রেল সূত্রে জানা গেছে, গত দুবছর আগে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে রেল ধোয়ার (ওয়াস) জন্য ওয়াসিং ইয়ার্ডে নেয়ার সময় একটি যাত্রীবাহী রেলকে আঘাত করার কারণে মাসুদুর রহমান ও আব্দুল করিম তালুকদার নামে দুজনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ব্রিটিশ আমলের সেই পুরনো ত্রম্নটিপুর্ণ আইনের কারণে গত দুবছরেও তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের শাস্তি হিসেবে দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট (বার্ষিক বর্ধিত বেতন) বন্ধ রাখা হয়। আর বাকিরা লোমোটিভ (ইঞ্জিন) ও লাইনের ত্রম্নটি দেখিয়ে সাময়িক বরখাস্তের মতো সামান্য শাস্তির মধ্য দিয়েই মাফ পেয়ে যাচ্ছেন রেল দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা। জানা গেছে, সর্বশেষ গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। কিন্তু ইতোমধ্যে রেওয়ে লোকোমাস্টার ও সহকারী লোকোমাস্টার সমিতির পক্ষ থেকে প্রধান প্রকৌশীকে (মেকানিক্যাল) দুর্ঘটনার জন্য তারা দায়ী নয় বলে জানিয়ে দেয়া হয়ে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। রেল সূত্রে জানায়, অভিযুক্ত লোকোমাস্টারদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ব্রাক্ষ্ণণবাড়িয়া দুর্ঘটনাস্থলের আগে বাহিরের (আউটার) সিগন্যাল মাত্র কয়েক সেকেন্ড দেখা যায়। এ ছাড়া নতুন ডাবল লাইনের কাজের জন্য পাথর স্তূপ করে রাখায় সিগন্যাল ঠিকভাবে দেখা যায় না। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দবাগে চট্টগ্রামগামী ট্রেন যে ক্রসিং হবে সে বিষয় আগে থেকে তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনচালক ও গার্ডকে ফোনে জানানো হয়নি বলে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অভিযুক্ত লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার ও গার্ডের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। তাই আগের রেল দুর্ঘটনাগুলোর মতো এ দুর্ঘটনায় অভিযুক্তরা পার পেয়ে যাবেন বলেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান। রেলওয়ের আইন অনুযায়ী দুর্ঘটনার ব্যাপারে গঠিত তদন্ত কমিটি যাই অভিযোগ আনুক অভিযুক্তদের কাছে 'এ' ফরর্ম পূরণ করে তার কাছে দুর্ঘটনার কারণ জানতে চাইতে হবে। অভিযুক্ত লোকোমাস্টার ও গার্ডদের জবাবে তুষ্ট না হলে 'বি' ফর্মে তার বিরুদ্ধে শাস্তির প্রস্তাব করা হবে। অভিযুক্ত লাকোমাস্টার ও গার্ড  শাস্তি উপরে আপত্তি জানাতে পারবেন। এভাবে কয়েক বছর পার হওয়ার পরে 'সি' ফরমে শাস্তি দিতে পারবেন রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত পাঁচ বছরে একটি দুর্ঘটনায় দুজনের চাকরি থেকে অপসারণ ও চার জনের দু'বছরের বর্ধিত বেতন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো শাস্তির সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, ২০১৪ থেকে এ পর্যন্ত ৯০২টি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে এর মধ্যে মুখোমুখি সংর্ঘষে দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটেছে ২৬টি। রেল সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে ৩৮৬টি রেল চলাচল করে। এর মধ্যে ৩৫৬টি যাত্রীবাহী ও ৩০টি মালবাহী। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এর তিনগুণ লোকোমাস্টার ও গার্ড থাকার নিয়ম থাকলেও রেলে বর্তমানে ৫৩১ জন গার্ড কর্মরত রয়েছেন। আর প্রবিধানমালায় এক হাজার ৭৫৭টি লোকোমাস্টার ও সহকারী লোকোমাস্টারের পদ থাকলেও কর্মরত আছে এক হাজার ১১৮ জন। জানা গেছে, সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাত ২টা ৫৫ মিনিটের ব্রাহ্মণবাড়িয়া মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে এ দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে রেলপথ মন্ত্রণালয়, রেলওয়ে অধিদপ্তর, সরকারি রেল পরিদর্শন বিভাগ ও জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে মোট ৫টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এখনো তদন্ত রিপোর্ট দেয়া সম্ভব হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রেওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (প্রকৌশল) আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমার যায়যায়দিনকে বলেন, চলাচলের জন্য রেল একটি নিরাপদ যানবাহন। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মন্দবাগ দুর্ঘটনার জন্য এককভাবে কাউকে দায়ী করা যাবে না। এ ছাড়া তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানাও সম্ভব নয় বলে তিনি জানান। ত্রম্নটিপূর্ণ আইনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে যে আইন আছে তা রেল চলাচল শুরুর সময় করা হয়েছে। তবে এ আইন যে অচল তাও বলা যাবে না। এরপরও আইন সংশোধনের চিন্তাভাবনা চলছে। এর আগে রেলের ত্রম্নটি ঠিক করার চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।