নির্মূল হয়নি ডেঙ্গু, মৃতু্য ১১২

প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
এডিস মশা
যাযাদি রিপোর্ট দেশে এ যাবতকাল পর্যন্ত সাধারণত শীতকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়নি। অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু স্বাভাবিকভাবেই নির্মূল হয়ে যাওয়ার রেকর্ড থাকলেও এবার তা হয়নি। শীতের শুরুতে নভেম্বরে রয়েছে ডেঙ্গুজ্বর বা এডিস মশার প্রকোপ। তাছাড়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ১১২ জন মৃতু্যবরণ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে আরও নতুন ৫৯ জন ভর্তি হয়েছেন ও হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৪৮ জন। ঢাকার বাইরে আরও ৯১ জন নতুন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছেন ও ছাড়পত্র পেয়েছেন ১০৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে আরও ১৫০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৮ টা থেকে বুধবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত) এ সংখ্যা ছিল ১৬৭ জন। অর্থাৎ এই সময়ে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ রোগী কমেছে। তিনি বলেন, এবার ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাবে। ডেঙ্গু আক্রান্তের হার একেবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে না। কেননা এবারের ডেঙ্গুর ধরন ভিন্ন। সেরোটাইপ-৪ পর্যন্ত আক্রমণ করেছে এবার। তিনি আরও বলেন, শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, রাজধানীর মাত্র ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৩০৭ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি রয়েছেন। একই সময়ে ঢাকার বাইরে ৩৭১ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সারাদেশে মোট ডেঙ্গুরোগী ভর্তি রয়েছেন ৬৭৮ জন। এদিকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) কাছে ডেঙ্গু সন্দেহে ২৫১ জন মৃত \হরোগীর তথ্য এসেছে। এর মধ্যে ১৭৯টি মৃতু্য পর্যালোচনা করে ১১২টি ডেঙ্গুজনিত মৃতু্য নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে মৃতের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। এ সংখ্যা এখনো সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। হাসপাতলে ভর্তি হয়ে মৃত ৯৮ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে এপ্রিলে ২, জুনে ৬, জুলাইয়ে ৩৫, আগস্টে ৬৩ এবং সেপ্টেম্বরে ৬ জনের মৃতু্য হয়। আর এসব মৃতু্যর মধ্যে শিশুমৃতু্যর হারই সবচেয়ে বেশি বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি। সরকারি হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ঢাকা শহর ব্যতীত ঢাকা বিভাগে ১৫, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩২, খুলনায় ২৩, রংপুরে ২, রাজশাহীতে ৪, বরিশালে ১৩ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ২ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হন। গত এক সপ্তাহে সিলেট বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কোনো রোগীর তথ্য পাওয়া যায়নি। রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০, মিটফোর্ডে ৮, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩, রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালে ১, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৪ ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১ জনসহ ঢাকা শহরের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে মোট ৪০ জন ভর্তি হয়েছেন। বেসরকারি হাসপাতালে হয়েছেন ১৯ জন। অর্থাৎ মোট ৫৯ জন। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৮, ফেব্রম্নয়ারিতে ১৮, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মে মাসে ১৯৩, জুনে ১ হাজার ৮৮৪, জুলাইয়ে ১৬ হাজার ২৫৩, আগস্টে ৫২ হাজার ৬৩৬ জন, সেপ্টেম্বরে ১৬ হাজার ৮৫৬ জন, অক্টোবরে ৮ হাজার ১৪৩ এবং নভেম্বরের ১৪ দিনে ২৩০৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশে ২০১৯ সালেই সর্বোচ্চ ডেঙ্গুতে আক্রান্তের রেকর্ড হয়েছে। যার মধ্যে আগস্ট মাসে ছিল সর্বোচ্চ। হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন ৯৮ হাজার ৪০৩ জন। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র গ্রহণ করেছেন ৯৭ হাজার ৪৭৪ জন। অর্থাৎ আক্রান্তদের ৯৯ দশমিক ১ শতাংশ রোগীই ছাড়পত্র পেয়েছেন।