পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে দুই কারণ

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযান, নতুন আমদানির ঘোষণা, টিসিবি'র খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি- সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে পেঁয়াজ ইতোমধ্যে বিশ্বরেকর্ড করেছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে অনেক কথা। তবে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির প্রধান দুই কারণ 'ভয়' ও 'কারসাজি'। অর্থনীতিবিদদের মতে, বাজারে যখন কোনো পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তখন সেই অস্বাভাবিক দামের পতনের সম্ভাবনাও তত বেড়ে যায়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখার পর থেকে সরকার বেশকিছু উদ্যোগের কথা বললেও তা খুব একটা কার্যকরী হয়নি। আমদানিকারকরা বলছেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর গত দুই মাস প্রায় ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ এসেছে মিয়ানমার থেকে। তবে গত এক সপ্তাহে আমদানির পরিমাণ কমেছে। এদিকে, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। মূলত পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পর এখন সেই দামের পতনের ক্ষণ গুণছেন ব্যবসায়িরা। তাই মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছেন আমদানিকারকরা। অর্থাৎ দাম পড়ে যাওয়ার ভয়ে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের এক বিক্রেতা বলেন, 'আমরাও পেঁয়াজ কম আনছি। কারণ বিক্রি হচ্ছে কম। যদি দাম আরও বেড়ে যায় এবং আমদানির পর বিক্রি না হয়, সে ক্ষেত্রে কী করবো আমরা? সেজন্য কম আনছি। আগে একশ কেজি নিতাম, বেশ কিছুদিন ধরে বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন বিশ কেজি করে নিচ্ছি।' এ তো গেল পেঁয়াজের দাম বাড়ার একটা কারণ। তবে পেঁয়াজের দাম ডাবল সেঞ্চুরি অতিক্রমের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বড় শিল্প গ্রম্নপগুলোর 'গড়িমসি'। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের একটি সমিতি জানায়, পেঁয়াজের চাহিদার ৬০ শতাংশ মেটানো হয় দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ থেকে। বাকি ৪০ শতাংশ আমদানি করা হয়। বেশিরভাগ পেঁয়াজই ভারত থেতে আমদানি করা হয়। জানা গেছে, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পরপরই এস আলমসহ দেশের বড় কয়েকটি শিল্পগ্রম্নপ বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেয়। এ লক্ষ্যে বিশেষ ছাড়ে বড় শিল্প গ্রম্নপগুলো এলসি খোলার পরও দেশে আসেনি আশানুরূপ পেঁয়াজের চালান। সূত্র বলছে, গত দেড় মাসে চীন, মিসরসহ বিকল্প বাজার থেকে ৬৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির এলসি খোলা হলেও দেশে পেঁয়াজ এসেছে মাত্র সাত হাজার টন। প্রায় ঢাকঢোল পিটিয়ে ৫৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেয় শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রম্নপ। এ লক্ষ্যে তারা ১১টি আমদানি অনুমতিপত্র নিয়েছে। অথচ এসবের বিপরীতে কোনো পেঁয়াজ এখনও বন্দরে এসে পৌঁছায়নি। খাতুনগঞ্জের আজমীর ট্রেডিংয়ের মালিক মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর দামে বেশি হলেও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছিল। কিন্তু গত সোমবার থেকে মিয়ানমারের পেঁয়াজ আমদানি কমে গেছে। কারণ বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানি মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দিয়েছে। ওই পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ছোট আমদানিকারকরা মিয়ানমার থেকে আমদানি বন্ধ রেখেছেন। অথচ মিসরের পেঁয়াজও বাজারে আসেনি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত মিসর থেকে তিন হাজার ৩০৬ টন, চীন থেকে ৮৭৬ টন, মিয়ানমার থেকে ১ হাজার ২২৮ টন, তুরস্ক থেকে ৮৬ টন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১১২ টন এবং পাকিস্তান থেকে ১৩৯ টন পেঁয়াজ বন্দরে এসেছে। এছাড়া ৪১টি আমদানি অনুমতিপত্রের বিপরীতে মিসর, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক ও উজবেকিস্তান থেকে ৬৬ হাজার ১৬২ টন পেঁয়াজ আমদানি করার কথা রয়েছে। কিন্তু গত দেড় মাসে পেঁয়াজ এসেছে মাত্র সাত হাজার টন। খাতুনগঞ্জের জনতা ট্রেডার্সের ম্যানেজার ফিরোজ আলম মনে করেন, বড় শিল্পগ্রম্নপগুলো পেঁয়াজ আনতে যে গড়িমসি দেখাচ্ছে, এর পেছনে কারসাজি থাকতে পারে। অনেকে চাইছে নিজেদের পেঁয়াজ বাজারে প্রবেশের আগে স্থানীয় বাজারে দাম আরও একটু চড়িয়ে নিতে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আলাউদ্দিন মজুমদার বলেন, এলসি খুলেও যদি আমদানি না হয়, তবে এর পেছনে টাকা পাচারের মতো ঘটনা থাকতে পারে। আবার দাম কমে যাওয়ার ভয়ে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এমনও হতে পারে। অর্থনীতির দিক দিয়ে দেখলে, এটিকে 'অলিগোপলি' বাজার তৈরির চেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে।