রাজধানীতে মশার উৎপাত বেড়েছে

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নেই পর্যাপ্ত লোকবল। পাশাপাশি ফগার ও হুইলব্যারোসহ অন্যান্য মেশিন-যন্ত্রপাতিতে সংকট থাকায় মশা নিধন পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
জলাশয়ে মশার ঝাঁক
ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া যখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল, সে সময় মশক নিধন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে পরিচালিত হলেও বর্তমানে ঝিমিয়ে পড়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম। আসন্ন শীত মৌসুমকে সামনে রেখে বেড়েছে রাজধানীতে মশার উৎপাত। রাজধানীবাসীর অভিযোগ, বর্তমানে তারা মশক নিধন কর্মীদের তেমনভাবে আর মাঠে দেখছেন না। অথচ সংস্থা দুটি ঘোষণা দিয়েছিল, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে বছরজুড়ে কাজ করবে তারা। কিন্তু দুই-তিন মাসের ব্যবধানে তাদের কার্যক্রমের গতি কমে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বিশেষ মৌসুম বা নির্দিষ্ট সময়ে ডেঙ্গুবিরোধী তৎপরতা দেখালে হবে না। বরং বছরব্যাপী এ কার্যক্রম জোরদার রাখতে হবে। রাজধানীর বনশ্রীর বাসিন্দা জেসমিন আক্তার বলেন, 'কিছু দিনে আগে মশা মারতে সিটি করপোরেশনের ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেলেও বর্তমানে আমরা মশক নিধন কর্মীদের দেখতে পাইনি। ফলে মশার উৎপাত দেখা দিয়েছে। সারাদিনই তবে বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে মশার কারণে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় আমাদের।' রাজধানী মালিবাগ মোড় সংলগ্ন চায়ের দোকানি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, 'আমার চায়ের দোকান ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা থাকে। এ সময় সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মীদের খুব কম সময়ই দেখেছি মশা মারার ওষুধ ছিটাতে। যে কারণে মশার উৎপাত বেড়েছে। ইদানীং দিনেও মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়।' ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উত্তর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা এরশাদ আলী বলেন, 'কিছুদিন আগে মশা মারার অ্যাক্টিভিটিস ছিল দুই সিটি করপোরেশনের কিন্তু সে কাজ এখন ঝিমিয়ে পড়েছে। আসলে তারা লোক দেখানো এবং মিডিয়া কাভারেজের জন্য কার্যক্রম দেখায়। আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারাই ভোগান্তিতে পড়ি মশা নিয়ে। বাসায় ছোট বাচ্চা আছে সারাদিন মশারির মধ্যে রাখতে হয় তাকে। কারণ সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় মশার ভোঁ ভোঁ শব্দ।' সম্প্রতি 'মশক নিয়ন্ত্রণে বর্তমান কার্যক্রম এবং বছরব্যাপী কর্মপরিকল্পনা' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, 'এখন থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা নিজ নিজ ওয়ার্ডের মশক নিয়ন্ত্রণ, পরিছন্নতাসহ যেকোনো বিষয়ে দায়ী থাকবেন। যার যার কৃতকর্মের জন্য তাকেই জবাবদিহিতা করতে হবে।' অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মীর মোস্তাফিজুর রহমানের বরাদ দিয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বলেন, 'এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসকরণ কার্যক্রমে গত ২২ জুলাই থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের টিম মোট দুই লাখ ১৫ হাজার ৮৪৩ বাড়ি পরিদর্শন করে এক হাজার ৪৯৩ বাড়িতে লার্ভা পেয়েছে। মশক নিধনে আমাদের কার্যক্রম চলছে।' ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কিউলেক্স মশা ও ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমবিষয়ক পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছে তারা। মশা নিয়ন্ত্রণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের নিয়ে এই পর্ষদ গঠিত হয়েছে। প্রতি তিন মাস অন্তর এ পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে গত ৭ অক্টোবর থেকে কিউলেক্স মশার প্রজননস্থল অর্থাৎ হট স্পট চিহ্নিত করার জন্য দুইজন কীট বিশেষজ্ঞ এবং ১০ জন শিক্ষানবিশ নিয়োজিত করা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে গবেষণা করে হট স্পট অর্থাৎ কোনো এলাকায় কিউলেক্স মশার তীব্রতা কত তা নির্ধারণ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলর বলেন, 'এ সময়ে এসে প্রতি বছর মশার উৎপাত বাড়তে থাকে, তাই আমাদের উচিত আরও বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। আসলে প্রতিটি ওয়ার্ডে যতসংখ্যক মশক নিধন কর্মী প্রয়োজন সেই তুলনায় আমাকের লোকবল কম। এর মধ্যও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এর সঙ্গে নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে।' মশক নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পদক্ষেপ, কার্যক্রম তবুও কেন রাজধানীতে মশার উৎপাত- এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নেই পর্যাপ্ত লোকবল। পাশাপাশি ফগার ও হুইলব্যারোসহ অন্যান্য মেশিন-যন্ত্রপাতিতে সংকট থাকায় মশা নিধন পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না। পুরনো কাঠামোর মাত্র ৪৮ শতাংশ জনবল নিয়েই সংস্থা দুটি তাদের দ্বিগুণ এলাকায় নাগরিক সেবা দিয়ে আসছে। এ কারণে প্রতিটি সেবা সংক্রান্ত কার্যক্রমেই হিমশিম খেতে হচ্ছে সংস্থা দুটিকে। সিটি করপোরেশন বিভক্ত হওয়ার পর নতুন করে ১৬টি ইউনিয়ন যুক্ত হওয়ায় সংস্থা দুটির আয়তন বেড়েছে কিন্তু জনবল বাড়েনি। বরং বিভক্ত হওয়ার সময় দুই ভাগ হয়েছে আগের জনবল। এজন্য যথাযথ নাগরিক সেবা পাচ্ছে না নগরবাসী। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত রোগ মোকাবিলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) মোট ১২৯ ওয়ার্ডের জন্য মশক নিধন কর্মী রয়েছে মাত্র ৭০৯ জন। যে কারণে তারা হিমশিম খাচ্ছেন সার্বিক কাজ পরিচালনায়।