যৌথ কমিটির তদন্ত রিপোর্ট

লোকোমাস্টারসহ ৩ জন দুর্ঘটনার জন্য দায়ী

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মন্দবাগ রেল দুর্ঘটনায় তূর্ণা এক্সপ্রেসের লোকোমাস্টারসহ সাময়িক বরখাস্ত হওয়া তিনজনকে দায়ী করে মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ে অধিদপ্তরের যৌথ কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। রোববার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে এ প্রতিবেদন দাখিল করেন যৌথ তদন্ত কমিটি। কমিটি গত ১৩ নভেম্বর দুর্ঘটনাস্থল পরিবর্শন ও অভিযুক্ত লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার, গার্ড (পরিচালক), স্টেশন মাস্টার, দুর্ঘটনায় আহত যাত্রী ও স্থানীয় লোকদের বক্তব্য, জিপিএস সিস্টেমে লোকোমোটিভের গতি এবং সিগন্যাল প্যানেল পরীক্ষা করে এ প্রতিবেদন দাখিল করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যৌথ তদন্ত কমিটির এক কর্মকর্তা বলেন, তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনটির লোকোমাস্টার ও সহকারী লোকোমাস্টার এবং গার্ড কুয়াশার কারণে সিগন্যাল দেখতে পায়নি বলেছেন যে বক্তব্য দিয়েছেন কমটির কাছে তা সত্য বলে মনে হয়নি। কারণ কুয়াশার কারণে সিগন্যাল দেখতে না পেলে বিকল্প 'পটকা' সিগন্যালের ব্যবস্থা থাকে। সেটা না থাকলে ট্রেন চালানো বন্ধ রাখার নিয়ম রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে তা উলেস্নখ করা হয়েছে। এছাড়া পত্রপত্রিকায় ডেটম্যান ফুড প্যাডেলের কথা বলা হচ্ছে তাও ঠিক না। কারণ তূর্ণা এক্সপ্রেসের লোকোমোটিভ ২৯০০ সিরিজের। এতে পায়ে প্যাডেল থাকে না। ডান হাতে সামনের দিকে একটি বোতামের মতো থাকে। একমিনিট পরপর পান্স না করলে শব্দ করে আর আর বেশিক্ষণ এভাবে চললে এমনিতেই ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। লোকোমাস্টার সহকারী লোকোমাস্টার ভুল করলে গার্ড ট্রেনটি ব্রেক করে থামানোর কথা। কিন্তু তা করেননি। তাই তদন্ত প্রতিবেদনে গার্ডকেও দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া আউটার সিগন্যাল রেড ছিল। কিন্তু আউটার ও হোম সিগন্যাল পেরিয়ে যখন ডেঞ্জার সিগন্যাল দেখেছেন তখন ট্রেনটি থামাতে ব্রেক করা হয়েছিল। এছাড়া ট্রেনটি ৭৭ কিলোমিটার গতিতে চলচল করছিল। কিন্তু ডেঞ্জার সিগন্যাল দেখার পরে এবং সিলেট থেকে আসা ট্রেনটি দেখতে পাওয়ায় ব্রেক করার করনে গতি শূন্য করা হলেও চলমান গতি ২২ কিলোমিটার হয়। ৭৭ কিলোমিটার গতিতে থাকলে আরো ভয়াবহ দুর্ঘটনা হতো বলে প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়। এছাড়া ছাড়া ছয় পাতার এ তদন্ত প্রতিবেদনে রাতের বেলায় এক্সপ্রেস (আন্তনগর) ট্রেন চালানোর সময় ক্রসিংয়ে সরাসরি না করা সুপারিশ করা হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে রাতে দুটি ট্রেনকে সিগনালিংয়ের মাধ্যমে দাঁড় করিয়ে একটি করে পাস করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ও গার্ড ব্রেকে যাত্রী না তোলার ব্যাপারে আরও কঠোর হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে একই লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার ও গার্ড রেস্ট ছাড়া মাইলেজ পাওয়ার জন্য ট্রেন চালাতে না পারেন সে ব্যাপারেও সুপারিশ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয় আজ রেলপথমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করতে পারেন বলে কমিটর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। জানা গেছে, গত ১২ নভেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইন ও ভূমি) মো. রফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। উলেস্নখ্য গত মঙ্গলবার রাত ২টা ৫৫ মিনিটের ব্রাহ্মণবাড়িয়া মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে এ দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে রেলপথ মন্ত্রণালয়, রেলওয়ে অধিদপ্তর, সরকারি রেল পরিদর্শন বিভাগ ও জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে মোট ৫টি তদন্ত কমিটি গঠন করা করা হয়েছিল। কমিটিগুলোকে ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছিল। রেল সূত্রে জানাগেছে, বর্তমানে সারাদেশে ৩৮৬টি রেল চলাচল করে। এর মধ্যে ৩৫৬টি যাত্রীবাহী ও ৩০টি মালবাহী। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এর তিনগুন লোকমাস্টার ও গার্ড থাকার নিয়ম থাকলেও রেলে বর্তমানে ৫৩১ জন গার্ড কর্মরত রযেছেন। থাকার কথা ৮৩৬ জন। আর প্রবিধানমালায় এক হাজার ৭৫৭ টি লোকমাস্টার ও সহকারী লোক মাস্টারের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন এক হাজার ১১৮ জন।