বুলবুল : অর্ধলক্ষ কৃষক পাবেন সরকারি সহায়তা

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

নূর মোহাম্মদ
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে প্রায় ৫০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে তিন ধাপে সহায়তা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনে বীজ, সার ও লজিস্ট্রিক সহায়তা দেয়া হবে। তার আগে মাঠপর্যায়ে সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। সমীক্ষার পর কোন কৃষককে কিভাবে পুনর্বাসন ও প্রণোদনা দেয়া হবে সেটা চূড়ান্ত হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, কৃষকদের প্রণোদনার অর্থ দ্রম্নত ছাড় করবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছেন।  কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, গত সপ্তাহে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ১৬ জেলার ১০৩টি উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে দেশের কৃষি খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৬৩ কোটি টাকা। ফসলের মধ্যে রোপা আমন, শীতকালীন সবজি, সরিষা, খেসারি, মসুরের ডাল ও পানের বরজের বেশি ক্ষতি হয়েছে। ওইসব অঞ্চলের ৫০ হাজার ৫০৩ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে প্রাথমিক হিসাবে উঠে এসেছে। এখন এসব কৃষকদের ক্ষতিপূরণ বিষয়ে কাজ চলছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তিন ধাপের ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হলেও পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া এখনো চূড়ান্ত করেনি মন্ত্রণালয়। তাৎক্ষণিক হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা নির্ধারণ করলেও, তাদের কি ধরনের ক্ষতি হয়েছে সেটা হিসাব করা হয়নি। এই অবস্তায় মাঠ পর্যায়ে সমীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই সমীক্ষায় কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ, পুনর্বাসন, বীজ, সার ও লজিস্ট্রিক সহায়তায় কত টাকা লাগবে তা জানা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উপকরণ অধিশাখা) মুনিরা সুলতানা যায়যায়দিনকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে হিসেব দেয়া হয়েছে তা প্রাথমিক। এখন কোন জেলায় কি ধরনের ফসলের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তাদের কিভাবে ক্ষতিপূরণ দিলে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে সেটা নিয়ে কাজ হচ্ছে। পাঠ পর্যায়ের এই সমীক্ষা হয়ে গেলে বুঝা যাবে কি প্রক্রিয়ায় তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া লাগবে। কত টাকার প্রয়োজন হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সাধারণত ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে বীজ, সার ও লজিস্ট্রিক সহায়তা দেয়া হয়। তারা যেন আবারও ফসল উৎপাদনে ফিরে যেতে পারে, সেসব সহায়তা দেয়া হয়। এবারও তাই দেয়া হতে পারে। মাঠ পর্যায়ের এসিসমেন্ট (সমীক্ষা) প্রতিবেদন পেলে এই সপ্তাহেই চূড়ান্ত হবে।  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আঘাত আনা জেলাগুলো মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতক্ষীরা জেলায়। এছাড়া অন্যান্য জেলার মধ্যে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট, লক্ষ্ণীপুর, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, ফেনী, খুলনা, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও নড়াইল। এই ফসলের মধ্যে রয়েছে, রোপা আমন, শীতকালীন সবজি, আলুক্ষেত, সরিষা, চীনাবাদাম, খেসারি ডাল, ধনিয়া, মসুর, মাষকলাই, মুগডাল, পেঁয়াজ, রসুন, কুল, পেঁপে, কলা ও পানের বরজ। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, সরকার কৃষকদের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। দুর্যোগের উপর কারও হাত নেই। তবে ক্ষতিগ্রস্তরা যেন আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। ক্ষতির পরিমাণ কৃষি মন্ত্রণালয় দেয়ার পর দ্রম্নত অর্থ ছাড়ের ব্যবস্তা করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত ওই ধরনের কোনো চিঠি আসেনি।  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত এসব জেলায় ২ লাখ ৭৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমনের ক্ষতি হয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭৪ হেক্টর জমির। শীতকালীন ফসল ১৬ হাজার ৮৮৪, সরিষা ১ হাজার ৪৭৬, খেসারি ৩১ হাজার ৮৮, মসুর ১৯৫ ও পানের বরজ ২ হাজার ৬৬৩ হেক্টর জমিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৩ হাজার ১২৬ হেক্টর জমির অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে খুলনা, মাদারীপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, পটুয়াখালী ও শরীয়তপুরে ১১ জন নিহত হয়েছেন। তারা সবাই গাছচাপায় মারা গেছেন। আর আহত হয়েছেন অন্তত ৪৮ জন। সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক জাতীয় সংসদে জানান, বুলবুলের আঘাতে যে রকম আশঙ্কা করা হয়েছিল, তত ক্ষতি হয়নি। এখন পর্যন্ত যতটুকু পেয়েছি, তা একেবারেই তাৎক্ষণিক হিসাব। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে আরও সাত-আট দিন সময় লাগবে।