জামালপুরে স্ত্রীকে গণধর্ষণ ও স্বামীকে হত্যার অভিযোগ

এ ঘটনায় মো. শাওন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক তিন যুবক এক গৃহবধূকে জঙ্গলে নিয়ে রাতভর ধর্ষণ ও ব্যাপক মারধর করে। নিজের স্ত্রীকে বাঁচাতে গেলে স্বামীকে হত্যা করে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয় ওই যুবকরা। জামালপুর সদর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নে গত শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটার অভিযোগ তুলেছেন ওই গৃহবধূ। সোমবার রাতে গণধর্ষণ ও আটকে রেখে মারধরের অভিযোগে জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে। রাতেই অভিযান চালিয়ে পুলিশ মো. শাউন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। দরিদ্র ওই গৃহবধূ সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জামালপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বসে বর্বরোচিত ওই ঘটনার বর্ণনা দেন। বক্তব্যে তিনি উলেস্নখ করেন, দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ছানোয়ার হোসেন (৩৫), মো. শাওন (২৫) ও রফিজ উদ্দিন (৪০) তাকে অশোভন প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। তিনি এতে রাজি না হয়ে স্বামী ও শ্বশুরকে ওই তিনজনের বিষয়টি বলে দেন। এতে তারা তিনজন ক্ষুব্ধ হয়। গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে তিনি (গৃহবধূ) ঘর থেকে বের হন। এ সময় ওই তিনজন তাকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরে ছানোয়ারের বাড়ির পেছনের একটি জঙ্গলে নিয়ে ওই তিনজন তাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় তাকে ব্যাপক মারধরও করে তারা। গণধর্ষণের পর তাকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। খবর পেয়ে তার স্বামী তাকে ওই তিন যুবকের কাছ থেকে রক্ষা করতে যান। তাকে ছেড়ে দিতে ওই তিন যুবককে তার স্বামী অনুরোধ করেন। কিন্তু ওই যুবকরা তার স্বামীকে মারধর করে সেখান থেকে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর তারা তাকে বলে, 'তোর স্বামী আত্মহত্যা করেছে।' ওই গৃহবধূ বলেন, 'আমার স্বামী কেন আত্মহত্যা করতে যাবেন? আমার স্বামীকে ওই তিনজনই হত্যা করেছে। পরে তারা আমার স্বামীকে গাছে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালায়। আমার মরা স্বামীকে দেখতে তাদের কাছে অনেক কান্নাকাটি করেছি, আমাকে ছেড়ে দিতে বলেছি। কিন্তু তারা আমাকে না ছেড়ে সারারাত গাছের সঙ্গে বেঁধে ব্যাপক মারধর করে। পরে গত শনিবার সকালে পুলিশ আসছে-এমন খবরে তারা আমার বাঁধন খুলে ছানোয়ারের বাড়ির একটি কক্ষে বন্ধ করে রাখে। পরে পুলিশ ওই বাড়ি থেকে আমাকে উদ্ধার করে ও আমার স্বামীর লাশ নিয়ে যায়।' গৃহবধূ বলেন, 'আমাকে গণধর্ষণ ও ব্যাপক মারধর করার ঘটনা আমি পুলিশকে জানাই। কিন্তু স্বামীর মৃতু্যতে আমি পুরো হতভম্ব ছিলাম। পরে ওই দিন পুলিশ স্বামীর লাশের সঙ্গে আমাকেও নিয়ে যায়। কিন্তু তারা আমার কোনো অভিযোগ গ্রহণ করেনি। আমার স্বামীকে হত্যা ও আমাকে গণধর্ষণের কোনো গুরুত্বই দেননি পুলিশের এসআই মো. গোলজার আলম। পরে বাধ্য হয়ে এই প্রেসক্লাবে আসি। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।' প্রেসক্লাবে সাংবাদিকরা ওই গৃহবধূকে গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন। ওই গৃহবধূ জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। পরে সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছানোয়ার, শাউন ও রফিজের নাম উলেস্নখসহ আরও অজ্ঞাত দুজনকে আসামি করে গণধর্ষণ ও মারধরের অভিযোগে একটি মামলা হয়। জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হাসানুল বারী গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, 'প্রাথমিকভাবে ওই গৃহবধূর শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্মমভাবে মারধরের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামতও পাওয়া গেছে। তবে ধর্ষণের ডাক্তারি পরীক্ষার পর সবকিছু আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাকে হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।' ঘটনার পর থেকে ছানোয়ার ও রফিজ পলাতক। এছাড়া তাদের বাড়িতে কেউ না থাকায় এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। সদর থানার ওসি মো. সালেমুজ্জামান বলেন, 'আমরা এক ব্যক্তির আত্মহত্যার খবর পাই। পরে পুলিশ গিয়ে ওই ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। সেটা হত্যা না আত্মহত্যা- জানার জন্য লাশটির ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সেটা জানা যাবে। তবে ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণের বিষয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ দেননি। ওই গৃহবধূ আমার কাছেও আসেননি। গণমাধ্যমের কর্মীদের মাধ্যমেই জানতে পারি ওই গৃহবধূর ধর্ষণের বিষয়টি। জানার সঙ্গে সঙ্গে ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণ ও মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে এক আসামিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।'