নতুন কমিটি নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রলীগে অস্থিরতা

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ইউনিটগুলোতে নতুন কমিটি দিতে পারছেন না ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার নেতারা। সম্প্রতি ৮ থানা ও দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত করে বিপাকে পড়েছেন তারা। বিলুপ্ত কমিটির নেতারা বিভিন্ন মাধ্যমে তাদেরকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। অন্য ইউনিটগুলোর পুরনো কমিটি না ভাঙার জন্যও চাপ আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ ছাত্রলীগের অধীনে ২১টি সাংগঠনিক থানা ও ছয়টি কলেজ এবং কয়েকটি মাদ্রাসায় কমিটি রয়েছে। প্রায় সবগুলো কমিটিই মেয়াদোর্ত্তীণ। এরমধ্যে শাজাহানপুর, কোতোয়ালি, বংশাল, শ্যামপুর, পল্টন, চকবাজার, রমনা ও মতিঝিল থানা, সিদ্বেশ্বরী ডিগ্রি কলেজ এবং সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা কমিটি বিলুপ্ত করে ৬টি থানায় নতুন কমিটি দেয়া হয়। এসব কমিটিতে বাদ পড়েন পুরনো কমিটির নেতারা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ মহানগর নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের আপত্তিকর কথা ও ছবি ছড়িয়ে দেন সদ্য সাবেক নেতা ও তাদের সমর্থকরা। তাছাড়া অপরিচিত ফোন নম্বর থেকে হুমকিও দেয়া হয়েছে মহানগরীর এক শীর্ষ নেতাকে। এর ফলে প্রায় সব ইউনিটের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ বাকি কমিটিগুলো ভেঙে নতুন কমিটি দেয়ার প্রক্রিয়াও শিথিল হয়ে গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের এক নেতা জানান, কমিটি না ভাঙার জন্য অনেক অনুরোধ ছিল; অনেক হুমকিও এসেছে। কিন্তু ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এসব থানায় দীর্ঘদিন ধরে নতুন কমিটি না হওয়ায় সাংগঠনিক কাজে শিথিলতা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া যেসব কমিটি ভাঙা হয়েছে, এসব কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তিবাণিজ্য, টাকার বিনিময়ে ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপি-জামায়তের পরিবারে পদ বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে। অপর এক নেতা জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১০টি কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে পদ হারানো নেতাদের একাংশ। দু'জনকেই হুমকি দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মহানগর নেতাদের দিয়েও তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে, জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন যাত্রাবাড়ী থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাকিল হোসেনের মা। জিডিতে তিনি উলেস্নখ করেন, 'মেহেদী হাসান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি, সেই সুবাদে আমার পরিচিত। আমার ছোট ছেলে মোহাম্মদ শাকিল হোসেন আনন্দকে (২৪) ছাত্রলীগের যাত্রাবাড়ী থানার সভাপতির পদ দেওয়ার কথা বলে, পরবর্তী সময়ে আমার ছেলেকে কমিটিতে না নিয়ে অন্যজনকে কমিটিতে পদায়ন করেছে। এ বিষয়ে আমি তার সঙ্গে কথা বললে সে উত্তেজিত হয়ে আমার এবং আমার ছেলের বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করবে বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।' এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি (অপারেশন) আয়ান মাহমুদ দ্বীপ যায়যায়দিনকে বলেন, যাত্রাবাড়ী থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাকিল নতুন কমিটির সভাপতি পদপ্রার্থী ছিল। নতুন কমিটিতে পদ না পাওয়ার পর তার মা দক্ষিণের সভাপতির বিরুদ্ধে একটি জিডি করেছে। জিডিটি তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আগামী বুধবারের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দেয়া হবে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের মহানগর নেতারা। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, শাকিল দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিল। সে কখন দেশে এসেছে তাও জানায়নি। অনেকদিন ধরে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কোনো কর্মসূচিতে তাকে পাওয়া যেত না। স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গেও সে যোগাযোগ রাখত না। যে কারণে তাকে কমিটিতে রাখা হয়নি। এর প্রেক্ষিতে তার পরিবার ক্ষিপ্ত হয়ে নানা ধরনের অসত্য কথাবার্তা ছড়াচ্ছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে ঢাকার প্রতিটি এলাকায় ছাত্রলীগকে শক্তিশালী করার জন্য নতুন কমিটি গঠন করা হচ্ছে। যত বাধাই আসুক পুরনো সব কমিটি ভেঙে, বিতর্কিত, অপকর্মকারী নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ বলেন, ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি চান মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন নেতৃত্ব ওঠে আসুক। সেই দিক বিবেচনা করেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দিয়েছি। পুরনো কমিটির নেতাদের বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরনো কমিটির সবাই নতুন কমিটিতে থাকতে চায়। যাদের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের প্রমাণ আছে, তাদেরকে কমিটিতে রাখা সম্ভব না। অতীতে সংগঠনের জন্য কাজ করছে, অপকর্ম করেনি- এমন কেউ আসলে তাকে নতুন কমিটিতে পদ দেয়া হবে বলে জানান তিনি। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় যায়যায়দিনকে বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগে নতুন কমিটি দেয়াকে কেন্দ্র করে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য গত ১৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি তানজিদুল ইসলাম শিমুলকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি গঠনের পর থেকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে জমা দেবে বলে জানান তিনি।