পরিস্থিতি স্বাভাবিক

সারাদেশে বাস ফিরেছে সড়কে

গাবতলীতে আসছে সব জেলার যাত্রীবাহী বাস। চলছে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানও। সিগন্যালগুলোয় চাপ না থাকলেও কিছু সময়ের জন্যও থেমে থাকতে দেখা যায় পরিবহণগুলো

প্রকাশ | ২৩ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
নতুন সড়ক আইনের বিরোধিতা করে গেল কয়েক দিন রাজধানী ঢাকা শহরে গণপরিবহণ চলাচল ছিল সীমিত। দূরপালস্নার বাসও চলেছে অল্প পরিসরে। হঠাৎ এমন কর্মসূচিতে ঘর থেকে বের হয়ে বিপাকে পড়তে হয় অনেককে। এরই মধ্যে শুক্রবার স্বাভাবিক ধারায় ফিরেছে রাজধানীসহ সারাদেশে গণপরিবহণ চলাচল; যদিও সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এ দিন সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা স্বাভাবিক কর্মদিবসের তুলনায় কমই থাকে। বুধবার গভীর রাতে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিকেরা সারা দেশে পণ্য পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও বৃহস্পতিবার ঢাকার সড়কগুলোতে গণপরিবহণের কমতি তো ছিলও, দূরপালস্নার বাসও স্বাভাবিকভাবে চলেনি। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ছুটির দিনে যানবাহন চলাচল ও যানজট না থাকলেও গতকাল ছিল একটু ভিন্নচিত্র। দূরপালস্নার বাস চলছে। চলছে আন্তঃজেলা ও রাজধানীতে চলাচলকারী বিভিন্ন রুটের গণপরিবহণ। রাজধানীর মিরপুর, গাবতলী, কল্যাণপুর, শ্যামলী ও কলেজগেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলাচল করছে বিভিন্ন রুটের গণপরিবহণ। চলছে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানও। গাবতলীতে আসছে সব জেলার যাত্রীবাহী বাস। আন্তঃজেলার যাত্রীবাহী বাসও ঢুকছে রাজধানীতে। সিগন্যালগুলোয় চাপ না থাকলেও কিছু সময়ের জন্যও আটকা দেখা যায় পরিবহণগুলো। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহণ মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মো. তাজুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। শ্রমিকরা কর্মে ফিরেছে। সকাল থেকে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল করছে। বাসমালিকরা বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল শুরু করেছেন।' সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস-মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জানান, সায়েদাবাদ থেকে সব রুটে পরিবহণ ছেড়ে যাচ্ছে। কোথাও কোনো সমস্যা নেই। মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি হাজী আবুল কালাম বলেন, নওগাঁ ও চুয়াডাঙ্গায় আন্তঃজেলা ও অভ্যন্তরীণ রুটে যানচলাচল বন্ধ রেখেছে স্থানীয় পরিবহণ মালিক শ্রমিকরা। তাছাড়া আর কোথাও কোনো সমস্যা নেই। ডিএমপির ট্রাফিক উত্তরের উপ-কমিশনার (ডিসি) প্রবীর কুমার দাস বলেন, 'সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে যানবাহনের সংখ্যা কম থাকলেও শুক্রবার বেশি মনে হচ্ছে।' মিরপুর টেকনিক্যাল এলাকার ট্রাফিক সার্জেন্ট মাসরেকুল জানান, এ এলাকায় যানজট নেই, যান চলাচলও স্বাভাবিক। ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের রমনা এলাকার সহকারী কমিশনার রেফাতুল ইসলাম জানান, 'ছুটির দিনে অফিস-আদালত বন্ধ থাকে। যান চলাচল স্বভাবত কমে যায়। তবে শুক্রবার হলেও চিত্র ভিন্ন। যান চলাচল অন্যদিনের মতো। সাত কলেজের পরীক্ষা ও চাকরির পরীক্ষার কারণে এমনটা হতে পারে। পাঁচ দিন পর যশোরে অঘোষিত পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহার পাঁচ দিন পর যশোরাঞ্চলের অঘোষিত পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহার হলো। শুক্রবার ঢাকায় সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের বৈঠকের পর এ ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। দুপুর থেকে ধীরে ধীরে টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়তে শুরু করেছে। এর আগে নতুন সড়ক আইন সংশোধনসহ ১০ দফা দাবিতে গত রোববার যশোরাঞ্চলের ১৮টি রুটে পরিবহণ চলাচল বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। যশোর থেকে শুরু হওয়ার পর খুলনা বিভাগের সব জেলায় অঘোষিত এ পরিবহণ ধর্মঘট ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। শ্রমিক সংগঠনের নেতারা দাবি করেন, শাস্তির খড়গ নিয়ে রাস্তায় নামতে চাইছেন না শ্রমিকরা। এ জন্য স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। জানা যায়, সড়ক আইন ২০১৮ সংশোধনসহ ১০ দফা দাবিতে রোববার সকাল থেকে যশোর অঞ্চলের ১৮ রুটে স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি শুরু করে পরিবহণ শ্রমিকরা। এতে ভোগান্তিতে পড়ে হাজারও মানুষ। এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ পরিবহণ সংস্থা শ্রমিক সমিতির সভাপতি মামুনূর রশীদ বাচ্চু বলেন, শ্রমিকদের কর্মবিরতি মালিক ও শ্রমিকদের কোনো সংগঠন ডাকেনি। ফাঁসির দড়ি সামনে নিয়ে শ্রমিকরা পরিবহণে কাজ করতে রাজি নয়। তাই তারা স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি শুরু করে। এটা কোনো ইউনিয়ন বা ফেডারেশনের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি নয়। পরিবহণ শ্রমিকরা ইচ্ছামতো কর্মবিরতি শুরু করেছেন। চার দিন পর নড়াইলে বাস চলাচল শুরু অবশেষে চার দিন পর শুক্রবার থেকে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে নড়াইল-মাওয়া, নড়াইল-যশোর, নড়াইল-খুলনাসহ অভ্যন্তরীণ সব রুটে বাস চলাচল শুরু হওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এদিকে বাস চলাচল শুরু হওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকেই সড়কে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। নড়াইল জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান জানান, কেন্দ্রীয় নির্দেশে বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। উলেস্নখ্য, নড়াইল-যশোর, খুলনা, নড়াইল-লোহাগড়াসহ অভ্যন্তরীণ সব রুটে গত রোববার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছিলেন শ্রমিকরা। পূর্বঘোষণা ছাড়া বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় যাত্রীরা পড়েন চরম বিপাকে। এর আগে ১৭ নভেম্বর বেলা ১১টায় নড়াইল প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৮ এর জেল-জরিমানা সংশোধনসহ ১১ দফা দাবিতে নড়াইলে পরিবহণ মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ মানববন্ধন করে এবং জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে। এদিকে শুক্রবার গাবতলীতে জাতীয় সড়ক পরিবহণ মোটর শ্রমিক ফেডারেশন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান পরিবহণ শ্রমিকদের অঘোষিত কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পরিবহণ শ্রমিকরাও সড়ক পরিবহণ আইনের বাস্তবায়ন চান। তবে এতে পরিবহণ শ্রমিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। 'সড়ক পরিবহণ আইনের ১৪টি অধ্যায়ের ১২৫টি ধারার মধ্যে ৫২টি ধারাই শাস্তির বিধান সম্পর্কিত। কিন্তু চালকরা ছাড়াও পথচারী, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ বিভিন্ন পক্ষ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।' সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নামে পরিবহণ খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হচ্ছে। 'চাঁদাবাজির সুযোগ রাখতেই' এটা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। 'মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নামে তারা ২০০৩ সাল থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজি করছে। এসব নেতা সরকারের ভেতরে থেকে পরিবহণ ধর্মঘটের নামে বিশৃঙ্খলা করে অবৈধ চাঁদাবাজি বহাল রাখতে চায়। সড়ক পরিবহণ আইন বাস্তবায়ন করতে হলে দুর্নীতিবাজ এসব নেতাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।' সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের বৈঠক এদিকে সড়ক পরিবহণ আইনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শুক্রবার সেগুনবাগিচায় বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা। ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খানের সভাপতিত্বে দেশের বিভিন্ন জেলার পরিবহণ শ্রমিক নেতারা এ সভায় অংশ নেন। শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার সভায় সড়ক পরিবহণ আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে জামিন অযোগ্য ধারা বাতিল, জরিমানা ও শাস্তির পরিমাণ কমানোসহ নয়টি বিষয়ে আপত্তি জানানোর বিষয়ে কথা হয়েছে তাদের।