বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রেলওয়ের নন-গেজেটেড নিয়োগ

প্রকাশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কিশোর সরকার সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এবার রেলের নন-গেজেটেড পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে রেলের জনবল সংকট চরম আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। উলেস্নখ্য, রেলের অর্গানোগ্রামে জনবল ৪০ হাজার ১১২। এর মধ্যে পদ শূন্য রয়েছে ১৬ হাজার ২৩০। শূন্য পদের মধ্যে ১৩ হাজারই কারিগরি পদ। যাদের ট্রেন চালানো, লাইন দেখাশোনা বা সিগন্যালের কাজে প্রয়োজন হয়। জানা গেছে, গত ২১ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে রেলওয়ের ১৯৮৫ সালের জারি করা নিয়োগবিধি অনুযায়ী নন-গেজেটেড পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট ১৯৭৫ সালে ২০ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল এবং ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত জারি করা ১৬৬টি অধ্যাদেশ বাতিল করেছে। তাই ১৯৮৫ সালে জারি করা নন-গেজেটেড রেলওয়ে নিয়োগবিধি বাতিল হয়ে গেছে। আর জনপ্রশাসনের এ চিঠির পর থেকে রেলের চতুর্থ শ্রেণির টেকনিক্যাল নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। জানা গেছে, বিভিন্ন রুটে নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। এছাড়া নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়ায় নিরাপদ রেল সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রেলের প্রবিধানমালায় জনবল ৫০ হাজার ২৪১ জন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জনবল সংকটের কারণে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে রেলের কার্যক্রম। ইতোমধ্যে প্রায় একশ' স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। লাইন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খালাশি, ওয়েম্যান, পয়েন্টসম্যান, ইলেকট্রিকম্যানসহ চতুর্থ শ্রেণির সব টেকনিক্যাল পদ শূন্য রয়েছে। এমনকি সারাদেশে বৈধ এক হাজার ৪১২টি লেভেল ক্রসিংয়ের ৯৪৬টিতেই গেটম্যান নেই। আরও জানা গেছে, চতুর্থ শ্রেণির খালাসি, ওয়েম্যান, পয়েন্টসম্যান, ইলেকট্রিকম্যানসহ চতুর্থ শ্রেণির পদকে প্রশিক্ষণ ও পদোন্নতি দিয়েই রেলে কারিগরি পদগুলো তৈরি হয়। এই খালাসি নিয়োগেই প্রচুর মামলা রয়েছে। প্রতিবার নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হলেও অস্থায়ীভাবে চাকরিপ্রাপ্তরা স্থায়িত্বের আশায় মামলা করেন। সেগুলো সুরাহা হওয়ার আগেই হয়তো আবারো দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি বা অন্য কোনো ত্রম্নটির অভিযোগে ফের মামলা চলেছে। ফলে সময়মত নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন নিয়োগ হওয়া অল্প কিছু লোককে কারিগরি পদে নিতে নিতেই অনেকে আবার চলে যাচ্ছেন অবসরে। এ ব্যাপারে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগ বিধিমালা বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে। সেক্ষেত্রে চলমান সব নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু চতুর্থ শ্রেণির পদের মধ্যে অফিস সহায়ক, দারোয়ান, সুইপার, মালি ছাড়া রেলে সব পোস্টই টেকনিক্যাল। তাই দ্রম্নত নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার ব্যাপারে জনপ্রশাসন ও আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া হবে। এছাড়া চলমান নিয়োগ যাতে ব্যাহত না হয় সে ব্যাপারেও জনপ্রশাসন ও আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চাওয়া হবে। এছাড়া দুই-এক মাসের মধ্যে রেলওয়ের নতুন নিয়োগ বিধি তৈরি করা যায় কিনা- তারও প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে বলে তিনি জানান। জানা গেছে, ২০১১ সালে একটি পৃথক রেল মন্ত্রণালয় গঠনের মাধ্যমে রেলকে গণপরিবহণের নিরাপদ বাহন হিসেবে তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের পর থেকে রেলে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। বর্তমানে ৪৫টি চলমান প্রকল্পে খরচ করা হচ্ছে ৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি। আসছে নতুন কোচ এবং ইঞ্জিন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়োগ বন্ধের নির্দেশ দেয়ায় রেল চলাচলে নিরাপত্তা ব্যাহত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।