রাজধানীতে বিএনপির উত্তাপহীন বিক্ষোভ

প্রকাশ | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রোববার রাজধানীর মতিঝিলে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল -যাযাদি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রোববার দেশের বিভিন্ন জেলা সদরে বিক্ষোভের কর্মসূচি পালিত হলেও ঢাকা মহানগরে তেমন কোনো কর্মসূচি পালন করেননি দলের নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগরে থানায় থানায় কর্মসূচি পালনের ঘোষণার পাশাপাশি সফলের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা থাকলেও আমলে নেয়নি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এরপরও আগামীকাল একই ধরনের কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে শীর্ষ নেত্রীর মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগরে থানায় থানায় এবং সারাদেশে জেলা সদরে বিক্ষোভের কর্মসূচির ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ কর্মসূচি সফলের ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয় কেন্দ্র থেকে। নগরের শীর্ষ নেতারা থানা নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে দেন প্রতিটি থানা বিক্ষোভ মিছিল করার জন্য। কিন্তু বিগত বছরগুলোর মতো ঢাকা মহানগরে গতকালের কর্মসূচিও হয়েছে একই কায়দায়। বেশ কয়েকটি থানা নেতারা বিগত দিনের মতো কয়েকজন কর্মী নিয়ে একটি ছবি তুলে তা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়ার মধ্যেই নিজেদের কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রাখে। ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচি চিত্র দেখার জন্য গতকাল নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরেও কোনো বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি চোখে পড়েনি। তবে নগর নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, থানায় থানায় কর্মসূচি হচ্ছে। গ্রেপ্তার ও পুলিশ এবং ক্ষমতাসীনদের হামলার ভয়ে নেতাকর্মীরা সাবধানতার সঙ্গে এসব কর্মসূচি পালন করেছেন। এ জন্য তেমন উত্তাপ চোখে পড়েনি। কিন্তু রাজধানীতে বিএনপি ঘোষিত সব ধরনের কর্মসূচি হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, থানায় থানায় কর্মসূচিগুলো সব সময় একই ফরমেটে পালন হয়ে থাকে। এসব কর্মসূচি সফলে একটি ব্যানার ও হাতেগোনা কয়েকজন নেতাকর্মী বা ভাড়াটের প্রয়োজন হয়। থানার সবচেয়ে নিরাপদ একটি স্থান একটি ছবি তোলার মধ্যেই এই কর্মসূচির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকে। অন্যদিকে কেন্দ্র থেকে থানা বিএনপির দপ্তরে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বলা আছে, মিছিলে কারা অংশ নিচ্ছে এবং একটি ছবি কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য। আর সেই সব বিষয়গুলো কেন্দ্রে এলে তা একত্রে করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আকারে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো হয়। সঙ্গে এসব ছবি পাঠানো হয় দলের হাইকমান্ডের কাছে। মূলত অধিকাংশ থানায় কোনো কর্মসূচি হয় না। গতকাল নগরীর অধিকাংশ থানা এলাকায় উত্তাপ ছড়ানোর মতো বিএনপির কোনো কর্মসূচি না হলেও সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর বিএনপি-দক্ষিণের দপ্তর সম্পাদক সাইদুর রহমান মিন্টু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রায় সব থানায় বিশাল মিছিল হয়েছে বলে দাবি করা হয়। বলা হয়, পুলিশি বাধার মধ্যে ও বিভিন্ন থানার নেতৃবৃন্দ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কর্মসূচি সফল করেন। কর্মসূচি চলাকালে বিভিন্ন স্থান থেকে হামলা চালিয়ে শাহবাগ থানা বিএনপির নেতা মো. রফিক, মো. আসিফ, মইন, হৃদয়সহ পাঁচজন, মো. লিমন, রহিমসহ পুলিশ ১০/১২ জনকে গ্রেপ্তার করে এবং পুলিশি হামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ ১২/১৩ জন আহত হন। আরও বলা হয়, শাহবাগ, চকবাজার, কোতোয়ালি, কদমতলী, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর লালবাগ, শাহজাহানপুর, মুগদা, কলাবাগান, ধানমন্ডি, পল্টন, সবুজবাগ, ওয়ারী ও সূত্রাপুরসহ সব থানায় মিছিল হয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার মিছিলের বর্ণনায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যাত্রাবাড়ী থানার সভাপতি আলহাজ নবীউলস্নাহ নবীর নেতৃত্বে একটি মিছিল শহীদ ফারুক রোড থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে অন্যদের মধ্যে অংশ নেন যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী। এ মিছিলের সত্যতা যাচাইয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় রোববার বিএনপির কোনো মিছিল হয়নি। এর অনুমতির জন্য বিএনপির কোনো নেতাও তার সেঙ্গ কথা বলেননি। বিএনপির দাবি সঠিক নয়। দক্ষিণের মতো ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির পক্ষ থেকে দপ্তর সম্পাদক এবিএমএ রাজ্জাক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সব থাকায় মিছিল হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এদিকে কর্মসূচির পর বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের আক্রমণে কোতোয়ালি থানা বিএনপি নেতা লিমন, চকবাজার থানা বিএনপির নেতা আতিক, মঈন, হৃদয়সহ ৫ জন এবং শাহবাগ থানার আবদুর রশিদ, সুমন, শাকিল, সুজনসহ ১০/১২ জন আহত ও শাহবাগ থানা বিএনপির মো. রফিক নামে একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আগামীকাল মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে মহানগর ও জেলা সদরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন তিনি।