আমরণ অনশনে অসুস্থ শতাধিক পাটকল শ্রমিক

খুলনায় একজনের মৃতু্য

প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
১১ দফা দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো বৃহস্পতিবার আমরণ অনশন করছেন পাটকল শ্রমিকরা। ছবিতে অনশনরত চট্টগ্রামের আমিন জুট মিলের শ্রমিকরা -যাযাদি
বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধসহ ১১ দফা দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, অনশন করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মারা গেছেন খুলনা পস্নাটিনাম জুটমিলের শ্রমিক আবদুস ছাত্তার। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়েছেন। খুলনা ও রাজশাহীতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় কয়েকজন শ্রমিককে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ক্রমেই এ সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন নেতারা। আমাদের আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর: রাজশাহী : আমরণ অনশন করতে গিয়ে বুধবার রাত থেকে সকাল পর্যন্ত চারজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যাদের মধ্যে দুইজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর দুইজনকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। অসুস্থরা হলেন, আসলাম হোসেন (৬৫), মোস্তাফিজুর রহমান (৪০), সাইদুর রহমান (৫৫) ও আব্দুল গফুর (৪৮)। এদের মধ্যে আসলাম হোসেন ও আব্দুল গফুরকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাজশাহী জুট মিলসের সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জিলস্নুর রহমান জানান, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির সিদ্ধান্ত বাতিল, কাঁচা পাট কিনতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, অবসরে যাওয়া শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধসহ ১১ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত তাদের এ কর্মসূচি চলবে। খুলনা : খুলনার খালিশপুর (সাবেক পিপলস) জুট মিলের শ্রমিকরা জানান, মঙ্গলবার থেকে ১১ দফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন খুলনা অঞ্চলের ৯টিসহ দেশের অন্যান্য স্থানের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে তারা এ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। কর্মসূচির পর ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পর বুধবার দিবাগত রাতে খুলনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান পাটকল সিবিএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখতে। এ সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নে সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু শ্রমিকরা গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চরম অবহেলার মধ্যে দিয়ে মিলের উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু শ্রমের মজুরি পাচ্ছেন না। আমরণ অনশন করছেন ক্রিসেন্ট, খালিশপুর, দৌলতপুর, পস্নাটিনাম জুবিলি, স্টার, আলিম, ইস্টার্ন, কার্পেটিং ও জেজেআই জুট মিলের শ্রমিকরা। তারা জানান, শ্রমিকরা নিজেদের কাঁথা-কম্বল নিয়ে অনশনে নেমেছেন। সমস্যার সমাধান করতে যদি মরতে হয়, তবুও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা ঘরে ফিরবে না। নরসিংদী : ১১ দফা দাবি আদায়ে টানা তৃতীয় দিনের মতো পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন চলছে। অনশনে ১১ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে শুরু হওয়া অনশন বৃহস্পতিবারও অব্যাহত রয়েছে। এদিকে অসুস্থ হয়ে পড়া শ্রমিকদের হাসপাতালে নিতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে জরুরি ভিত্তিতে একটি অ্যাম্বুলেন্স আমরণ অনশন মঞ্চের পাশে রাখা হয়েছে। অনশনে ইউএমসি জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শফিকুল ইসলাম মোলস্না, সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন, কাউছার আহাম্মেদ, সুমন খন্দকার, জাকির হোসেন, নন সিবিএ পরিষদের সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান, মোশারফ হোসেন, কাউয়ুম প্রধান, শামসুল আরেফিন, ইসা হাবিব রিপন সরকারসহ ঐক্যপরিষদের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ইউএমসি জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শফিকুল ইসলাম মোলস্না বলেন, তিনদিন ধরে অনশন চলছে। এতে শ্রমিকরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে ১১ জন শ্রমিক না খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে নন সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা বশির আহাম্মেদ বিলস্নাল মিয়া, মো. আলী হোসেন, মো. রুবেল মিয়া, মো. রব মিয়াসহ পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।