৪০ বছরেও এত ভয়াবহ পোড়া দেখিনি : সামন্তলাল

কেরানীগঞ্জে পস্নাস্টিক কারখানায় আগুন

প্রকাশ | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ডা. সামন্ত লাল সেন
কেরানীগঞ্জের পস্নাস্টিক কারখানায় পুড়ে যাওয়া কর্মীদের ভয়াবহ অবস্থায় চিকিৎসকরাও আঁতকে উঠেছেন। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, 'দেশে এখন পর্যন্ত যত আগুনে দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে সর্বোচ্চ বা বেশি মাত্রায় পোড়া রোগী এসেছে কেরানীগঞ্জের পস্নাস্টিক কারখানার অগ্নিকান্ডের পর। ৪০ বছরের অভিজ্ঞতায় এত ভয়াবহ আগুনে পোড়া দেখিনি।' শুক্রবার সকালে রাজধানীর বার্ন ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র চিকিৎসাধীন কেরানীগঞ্জের পস্নাস্টিক কারখানায় অগ্নিদগ্ধদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি যায়যায়দিনকে এসব কথা বলেন। এ সময় রোগীদের সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে এমন আগুনে পোড়া রোগী আছে যাদের মুখ পর্যন্ত চেনা যাচ্ছে না। ডা. সামন্ত লাল সেন আরও বলেন, এখানে ভর্তি হওয়া অগ্নিদগ্ধদের পোড়ার ক্ষত এত ভয়াবহ যে বৃহস্পতিবার একজন রোগী মারা গেছে যাকে তার স্ত্রী পর্যন্ত তাকে চিনতে পারেননি। তার সম্পূর্ণ মুখ বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। পরে তার হাতের কাটা দেখে তাকে শনাক্ত করতে পেরেছেন স্ত্রী। আরেকজন রোগী আব্দুর রাজ্জাক যার শরীরের শতভাগ পুড়ে গেছে। সে অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছ, যেকোনো সময় তার অবস্থার অবনতি হতে পারে। তাছাড়া বিশ্বের কোথাও শতভাগ পোড়া রোগীদের বাঁচানো সম্ভব হয় না। আমরা চেষ্টা করছি বাকিটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে চিকিৎসা যেন সঠিকভাবে হয়। আমারাও রোগীর স্বজনদের সবসময় সবকিছু জানাচ্ছি। চিকিৎসাও সঠিকভাবে হচ্ছে। সরকার ব্যয়ভার বহন করছে। আর এ পর্যন্ত শতকরা ৬০ ভাগ পোড়া রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে ঢামেকের পুরাতন বার্ন ইউনিট থেকে এখানে স্থানান্তর করা ১২ জনের মধ্যে ১০ জন জীবিত আছেন। যাদের শ্বাসনালিসহ শরীরের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ মারাত্মকভাবে পুড়ে গেছে। তবে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে ভর্তি থাকা ৮ জন শঙ্কামুক্ত। তাদের শরীরে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পুড়েছে। অপরদিকে, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যে ১০ জন ভর্তি রয়েছে এদের কেউই শঙ্কামুক্ত নয়। ইনহ্যালেশন বার্ন হওয়ায় তাদের প্রত্যেককেই লাইফসাপোর্টে রাখা হয়েছে। কারখানা সিলগালা: এদিকে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পস্নাস্টিক কারখানাটি সিলগালা করে দিয়েছে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত দেবনাথ কারখানাটি সিলগালা করেন। এর আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান। গত বুধবার বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ার হিজলতলা এলাকার প্রাইম পেস্নট অ্যান্ড পস্নাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের কারখানাটিতে ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে এখন পর্যন্ত ১৩ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে একজন ঘটনাস্থলে এবং ১২ জন হাসপাতালে মারা গেছেন। চিকিৎসকরা বলেন, দগ্ধ লোকজনের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। কারখানাটি সিলগালা করে ইউএনও অমিত দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। অগ্নিকান্ডে নিহত লোকজনকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া নিহত লোকজনের দাফনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা এবং আহত ব্যক্তিদের ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকা জেলার প্রশাসক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, আবাসিক এলাকায় এ ধরনের কারখানা থাকার কথা নয়। এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে এ রকম নন কমপস্নায়েন্স কারখানা আর আছে কি না, খোঁজা হচ্ছে। মানুষের জীবনের ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে শিল্প ও কল-কারখানা সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। তিনি গ্যাস ও বিদু্যৎ সংযোগ দেওয়ার আগে কারখানাগুলো কী ধরনের, তা যাচাই করে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।