আইইডিসিআরের গবেষণা

অপব্যবহারে কার্যকারিতা হারাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক

প্রকাশ | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের প্রতীকী ছবি
সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে বেশিরভাগ প্রাণসংহারি জীবাণু। এর মানে হলো- উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করেও এসব জীবাণু ধ্বংস বা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। এর ফলে বছরে কয়েক লাখ মানুষের মৃতু্য ঘটছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০৫০ সালে বিশ্বে এক কোটি মানুষের মৃতু্য ঘটবে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করা জীবাণুর মধ্যে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া অন্যতম। ই-কোলাই হলো একটি গ্রাম নেগেটিভ, রড-আকৃতির, কোলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া। এরা সচরাচর উষ্ণ রক্তের প্রাণীর শরীরে বাস করে। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এসব তথ্য দিয়েছে। সম্প্রতি 'ফাইন্ডিংস ফ্রম অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সার্ভিলেন্স ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের ৯টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাণসংহারী জীবাণুর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। গবেষণা দলের প্রধান আইইডিসিআরের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রিন্সিপাল সায়েন্টেফিক অফিসার ডা. জাকির হোসেন হাবিব জানান, ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া প্রায় সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এই জীবাণু সাধারণত তিন ভাবে মানবদেহে সংক্রমণ ঘটিয়ে মানুষের মৃতু্য ঘটায়। এটি মূত্রনালির মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটিয়ে, যে কোনো কাটা বা ক্ষত স্থানে সংক্রমণ ঘটিয়ে এবং আইসিইউতে থাকা রোগীর শরীরে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটিয়ে মৃতু্যর দিকে ধাবিত করে। অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর মধ্যে ইমিপেনেম ৯০ শতাংশ, অ্যামিকাসিন ৮০ শতাংশ, নাইট্রোফুরানটন ৭৭ শতাংশ, জেনটামাইসিন ৭০ শতাংশ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে ই-কোলাই। এমনকি পঞ্চম প্রজন্মের অ্যান্টিবায়োটিক সেফিপিম ৪৫ শতাংশ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে এই জীবাণু। সেফিপিম হলো সেফালোস্প্রিন গ্রম্নপের সর্বাধুনিক অ্যান্টিবায়োটিক। এটি বাজারে এসেছে মাত্র বছরখানেক। এরই মধ্যে ই-কোলাই এ ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করা শিখে গেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় পিডিআর বা প্যান ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স। এছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে মূত্রনালির সংক্রমণ ঘটনানো জীবাণু 'প্রটিয়াস', 'সিউডোমোনাস এরোজিনোসা', 'অ্যাসাইনোটা ব্যাক্টর', টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েডের জীবাণু 'সালমোনেলা' রক্ত আমাশার জীবাণু 'সাইগেলা' কলেরার জীবাণু 'ভাইব্রো কলেরা'। ডা. জাকির জানান, এসব জীবাণুর কোনটি এমডিআর বা মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স, কোনটি এক্সডিআর বা এক্সটেনসিভ ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স। অর্থাৎ যে রোগই হোক না কেন নিশ্চিন্তে ওষুধ থাওয়ার মতো অবস্থা এখন আর নেই। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, 'জীবাণুর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠা অত্যন্ত আতঙ্কের বিষয়। একজন মানুষ হাসপাতালে সংক্রমিত অবস্থায় থাকবে অথচ কোন ওষুধই তার কাজে আসবে না। এর চেয়ে নির্মম খবর আর কিছুই হতে পারে না। তাই এ বিষয়ে সর্বোচ্চ জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।' সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স অবস্থা থেকে দেশকে ও দেশের মানুষেকে নিরাপত্তা দিতে হলে অবশ্যই নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা বন্ধ করতে হবে। জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের প্যাকেট লাল রংয়ের করা যেতে পারে। যাতে করে প্যাকেট দেখে সবাই বুঝতে পারে এটা অ্যান্টিবায়োটিক। এটি ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কেনা বা বিক্রি নিষিদ্ধ। এছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের প্যাকেটে কমপক্ষে ততোগুলো ওষুধ রাখতে হবে যাতে একটি কোর্স সম্পন্ন হয়। তাহলেও অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কিছুটা হলেও এড়ানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এখন স্বাস্থ্যব্যবস্থায় মহা আতঙ্কের নাম। অপব্যবহারের কারণে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। ভয়ংকর ব্যাপার হলো, যারা মৃতু্যবরণ করছে, তাদের শরীরে পাওয়া ব্যাকটেরিয়াগুলোর ৭০-৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স থেকে। এটা হচ্ছে আমাদের জন্য ভয়ংকর খবর। যা থেকে সহজেই প্রতীয়মান হয়, দেশজুড়ে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের অবস্থা খুবই খারাপ। ধারাবাহিকভাবেই গত ১৫ বছর থেকে দেখা যাচ্ছে, দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে আসছে।