হরিপুর সীমান্তে দুই বাংলার স্বজনদের মিলনমেলা

পাথরকালী পুঁজা উপলক্ষ্যে প্রতি বছরে এই দিনে দূর দুরান্ত থেকে দু-দেশের স্বজনরা ভীড় জমান

প্রকাশ | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

হরিপুর (ঠাকুরগাঁও) সংবাদদাতা
শুক্রবার ঠাকুরগাঁওয়ের চাপাসার ও রানীশংকৈল উপজেলার কচল সীমান্তের ৩৪৫ ও ৩৪৬ নং পিলার এলাকায় অপেক্ষমাণ স্বজনরা -বিডিনিউজ
ভারতের সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া দু'দেশকে ভাগ করলেও দুই বাংলার হাজারো স্বজনের রক্তের বাঁধন ছিন্ন করতে পারেনি। শুক্রবার ঠাকুরগাঁও জেলার কচল ও চাপাসার এবং ভারতের নাড়গাঁও ও মাকারহাট সীমান্তের কাঁটাতারের এপার-ওপারে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দুই বাংলার হাজারো মানুষের রক্তের টানে উপস্থিতি যেন মিলনমেলায় পরিণত হয়। বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী হিন্দু সম্প্রদায় প্রতি বছর শ্রী-শ্রী জামর কালির জিউ (পাথরকালী) পূজা উপলক্ষে মেলা উদ্‌যাপন করে থাকেন। আর এ পূজা উপলক্ষে প্রতি বছরের এই দিনে দূরদূরান্ত থেকে দু-দেশের স্বজনরা ভিড় জমায় ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা চাপাসার ও রানীশংকৈল উপজেলার কচল সীমান্তের ৩৪৫ ও ৩৪৬ নং পিলার এলাকায়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শুক্রবার সকাল থেকে দূরদূরান্ত থেকে দু-দেশের স্বজনরা সীমান্তে সমবেত হয়েছেন। স্বজনদের সাথে দেখা ও কথা বলার জন্য সকাল থেকে সীমান্তের এপার-ওপারে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে দু-দেশের হাজারো মানুষকে। শেষপর্যন্ত দুপুর ১২টায় দু-দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সহযোগিতায় কাঁটাতারের এপার-ওপারে দাঁড়িয়ে স্বজনদের দেখা ও কথা হয় একে অপরের সঙ্গে। আদান-প্রদান হয় নানা রকম খাদ্য ও পণ্য সামগ্রী। স্বজনদের সাথে দেখা করতে আসা রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বাসিন্দা জাহানারা বেগম (৫৫) জানান, এবার দেখা করেছেন তার ছোট ভাই মজিবুর রহমানের সঙ্গে। ২৩ বছর আগে সেফালীর বিয়ে হয় ভারতের মাল্‌দা জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার আন্ধারু গ্রামে। বিয়ের পর এই প্রথম ভাই ও ভাবির দেখা পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তার ভাই ও ভাবি এবং তাদের ছেলেমেয়েদের কাপড় এবং খাদ্য সামগ্রী ও ইলিশ মাছ দিয়ে বেশ আনন্দ পেয়েছেন তিনি। ভারতের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে আসা দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার জয়ীতা রাণী (৪৫) জানান, '২০ বছর আগে আমার ছোট বোন কমলারাণীর বিয়ে হয় ভারতের গোয়ালপুকুর থানার পাঁচঘরিয়া গ্রামে। বিয়ের পর আর কথা হয়নি তার সাথে। কিন্তু আজ বোনের সাথে কাঁটাতারের এপার-ওপারে দাঁড়িয়ে কথা বলে এবং কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে খাদ্য সামগ্রী ও কাপড়চোপড় দিতে পেরে মনে বড় আনন্দ পেয়েছি। মিলনমেলায় ঘুরতে আসা অনেকেই তাদের আত্মীয়স্বজনদের সাথে দেখা করেন, কথা বলেন ও জিনিসপত্র আদান-প্রদান করেন। হরিপুর থানার অফিসার ইনচার্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্জ আমিরুজ্জামান বলেন, কড়া প্রহরা সত্ত্বেও অনেকে কাঁটাতারের এপার-ওপারে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন স্থানে কথা বলেছেন ও খাদ্য বিনিময় করেছেন। এ ব্যাপারে শ্রী-শ্রী জামর কালির জিউ (পাথরকালী) পূজা কমিটির সভাপতি নগেন কুমার পাল বলেন, এবার স্থানীয় প্রশাসন, বিজিবি ও বিএসএফর পক্ষ থেকে সীমান্তে কঠোর নজরদারি থাকা সত্ত্বেও অন্য বছরের তুলনায় এবার দু-দেশের স্বজনরা সহজেই কাঁটাতারের এপার-ওপারে দাঁড়িয়ে কথা বলেছেন ও খাদ্য বিনিময় করেছেন।