রুম্পার ময়নাতদন্তে ধর্ষণের আলামত মেলেনি

প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রুবাইয়াত শারমিন রুম্পা
রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার ময়নাতদন্তের আংশিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। তবে তিনি খুন হয়েছিলেন, নাকি আত্মহত্যা করেছেন সে রিপোর্ট পাওয়ার জন্য আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ। তিনি জানান, ময়নাতদন্তের সময় যেসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছিল পরীক্ষার জন্য। তার মধ্যে মাইক্রোবায়োলজিক্যাল রিপোর্ট এসেছে, সেখানে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। বাকি দুটি রিপোর্ট পেতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। গত ৪ ডিসেম্বর রাত পৌনে ১১টার দিকে সিদ্ধেশ্বরীর ৬৪/৪ নম্বর বাসার নিচে রুম্পার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আলামত সংগ্রহ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, মৃতু্যর আগে ধর্ষিত হয়েছিলেন। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্ট অনুযায়ী মেরুদন্ড, বাম হাতের কনুই ও ডান পায়ের গোড়ালি ভাঙা। মাথা, নাক, মুখে জখম এবং রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল। বুকের ডান দিকে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাটি রহস্যজনক হওয়ায় রমনা থানার এসআই আবুল খায়ের সেই রাতেই অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর ১১ ডিসম্বের রুম্পার বন্ধু আব্দুর রহমান সৈকতকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এরপর ১২ ডিসেম্বর সৈকতকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ৪ ডিসেম্বর বিকালে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসের বাইরের রাস্তায় রুম্পাকে সৈকতের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল। এরপর রাতে তার লাশ পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সৈকত জানান, ওইদিন দেখা হওয়ার পর সম্পর্ক নিয়ে কথা উঠলে কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য রুম্পাকে অনুরোধ করা হয়। এতে তাদের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এরপর রুম্পা ওই ভবনের ছাদে উঠে আত্মহত্যা করেন। যদিও কয়েকমাস আগে থেকেই রুম্পাকে এড়িয়ে চলছিলেন সৈকত। সৈকতের এমন বক্তব্যে কোনো প্রমাণ না থাকায় ধারণা করা হচ্ছে, তার সহযোগীরা রুম্পাকে হত্যা করে লাশ ছাদ থেকে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় রুম্পার এক বান্ধবীর সঙ্গে সৈকতের কথোপকথনের অডিও ক্লিপ পাওয়া গেছে। সেখানে সৈকতকে বলতে শোনা যায়, '৪ তারিখে আমার একটা ফ্রেন্ডের বার্থডে ছিল। আমাকে ইনভাইট করা হয়েছিল আমাদের ফ্রেন্ডের মাধ্যমে। দেন আমি ওইখানে গেছিলাম আর কি। আমি তো রুম্পাকে বুঝায়ে বলছি যে আমাদের মধ্যে রিলেশন সম্ভব না।' রুম্পার পরিবারের সদস্যরা জানান, দুটি টিউশনি করতেন রুম্পা। ঘটনার দিন সন্ধ্যার আগে বাসা থেকে টিউশনি করতে বেরিয়েছিলেন। পরে সাড়ে ৬টার দিকে বাসার নিচে এসে ফোন করে পুরনো একজোড়া স্যান্ডেল পাঠিয়ে দিতে বলেন। স্যান্ডেল বদলানোর সময় কানের দুল, আংটি, মোবাইল ফোন দিয়ে আবার বেরিয়ে যান তিনি। এরপর তার লাশ পাওয়া যায়। তদন্ত তদারক কর্মকর্তারা জানিয়েছে, একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে রুম্পাকে সীদ্ধেশ্বরী ওই ভবনের প্রবেশের ফুটেজ দেখতে পাওয়া যায়। রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, 'একটি রিপোর্ট রোববার আমরা হাতে পাবো। শুনেছি তিনি ধর্ষণের শিকার হয়নি। তবে বিষয়টি হত্যা না আত্মহত্যা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এজন্য আমরা ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করব। তবে আমাদের তদন্ত থেমে নেই। দু-একদিনের মধ্যে আমরা এ বিষয়ের সমাধান পর্যায়ে আসতে পারব।'