প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনায়

রেলপথ নিমাের্ণ রেকডর্ খরচ করতে চায় রেল মন্ত্রণালয়!

প্রস্তাবিত ২২৫ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ নিমাের্ণ মোট ব্যয় নিধার্রণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত রেলপথ নিমার্ণ ব্যয়ের অধের্কই অপচয় হবে বলে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন

প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডুয়েল গেজ রেলপথ নিমাের্ণ ব্যয় বৃদ্ধির রেকডর্ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। প্রতি কিলোমিটার রেলপথ নিমাের্ণ কয়েক গুণ বেশি ব্যয়ের প্রস্তাব করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এর আগে এত বেশি ব্যয়ে রেলপথ নিমার্ণ হয়নি। ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের আখাউড়া থেকে সিলেট সেকশনের মিটার গেজ রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর’ প্রকল্পের ক্ষেত্রে এমন নজিরবিহীন প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ নিমাের্ণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯ কোটি ৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত ২২৫ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ নিমাের্ণ মোট ব্যয় নিধার্রণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত রেলপথ নিমার্ণ ব্যয়ের অধের্কই অপচয় হবে বলে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রকল্প বাস্তবায়নের পদ্ধতি পরিবতর্ন করে ব্যয় কমানোর সুপারিশ করেছে কমিশন। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে এর আগে একাধিকবার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। সভা শেষে পরিকল্পনা কমিশন সেক্টর ডিভিশনের নিজস্ব মতামত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পাঠিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বতর্মানে সিলেট-আখাউড়া রুটে মিটার গেজ রেলপথ আছে। এ রেলপথের পাশ দিয়ে সমান্তরাল ০ দশমিক ৬৭ মিটার দূরত্ব দিয়ে একটি আলাদা লাইন টেনে দিলেই ডুয়েল গেজ রেলপথ হয়ে যাবে। ফলে মিটার গেজ ও ব্রড গেজ ট্রেন চলতে পারবে এ রুট দিয়ে। এ পদ্ধতিতে রেলপথ নিমার্ণ করলে ৭ হাজার ৮৫২ কোটি টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কিন্তু রেলপথ মন্ত্রণালয় সমস্ত রেলপথ ভেঙে নতুন করে নিমার্ণ করতে চায়। ফলে ব্যয় বেশি হবে কয়েকগুণ। বিদ্যমান মিটারগেজ রেলপথ ভেঙে ফেলার ফলে প্রতি কিলোমিটার পর বাইপাস লাইন নিমার্ণসহ আলাদা ডুয়েল গেজ রেলপথ নিমার্ণ করতে হবে। ফলে ব্যয় হবে ১৫ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। ফলে প্রতি কিলোমিটার রেলপথ নিমাের্ণ ব্যয় হবে ৬৯ কোটি ৮ লাখ টাকা। এর আগে তিনটা ডুয়েল গেজ রেলপথ নিমার্ণ করা হয়েছে। কিন্তু এত বেশি ব্যয় চাওয়া হয়নি। কিন্তু এবার চোখ কপালে ওঠার মতো ব্যয় চাওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত প্রকল্পে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ৫৩৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ঈশ্বরদী থেকে পাবনার ঢালারচর পযর্ন্ত নতুন রেলপথ নিমার্ণ প্রকল্প চলমান আছে। এ রুটের মোট দৈঘর্্য ৭৮ দশমিক ৮০ কিলোমিটার। ফলে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়ছে মাত্র ৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ৩৩৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পযর্ন্ত রেলপথ নিমার্ণ’ প্রকল্প চলমান আছে। এ রুটের মোট দৈঘর্্য ২৩ দশমিক ৯০ কিলোমিটার। ফলে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়ছে ১৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ১৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটার গেজ রেললাইনের সমান্তরাল ডুয়েল গেজ রেললাইন নিমার্ণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ রুটের দৈঘর্্য ২১ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার। ফলে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় হয়েছে মাত্র ৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অথচ প্রস্তাবিত প্রকল্পের ব্যয় সমজাতীয় প্রকল্পের তুলনায় ৭ গুণ বেশি। এ ব্যয় প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে না। ফলে বিষয়টি নিয়ে আরও সভা হবে বলে জানায় পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্প প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে পরিকল্পনা কমিশনের এক ঊধ্বর্তন কমর্কতার্ বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে কয়েক দফা সভা হয়েছে। এটা একটা অপচয়ের প্রকল্প। এমন ব্যয় আগে কখনো ধরা হয়নি। মিটার গেজ রেলপথের পাশ দিয়ে একটা লাইন টেনে দিলেই ডুয়েল গেজ হয়ে যায়। কেন বিদ্যমান মিটার গেজ লাইনটি ভেঙে নতুন করে ডুয়েল গেজ করব? এটা সরকারি অপচয় ছাড়া কিছু নয়। আমি মিটার গেজ রেলপথটি না ভেঙে ডুয়েল গেজ করার পক্ষে। এতে করে ১৫ হাজার ৭০৫ কোটি টাকার প্রকল্পটি ৭ হাজার ৮৫২ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব। জনগণের অথর্ অপচয়ের কোনো অথর্ নেই! অন্যদিকে রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদ্যমান মিটারগেজ রেখে ডুয়েল গেজ করা সম্ভব নয়। সবকিছু ভেঙে ফেলে নতুন করে ডুয়েল গেজ করতে হবে। কারণ প্রস্তাবিত ডুয়েল গেজের নকশা আলাদা। বিদ্যমান মিটার গেজের সমস্ত ব্রিজ-কালভাটর্ ভেঙে নতুনভাবে নিমির্ত হবে। প্রস্তাবিত ডুয়েল রেলপথটি চওড়া হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে ১০ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা ঋণ দেবে চীন সরকার। চীন থেকে নেয়া ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে সাভির্স চাজর্সহ ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ হারে। ২০১৫ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর চায়না রেলওয়ে ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো গ্রæপ কোম্পানির সঙ্গে এ প্রকল্পের বিষয়ে একটা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর ফলেই ব্যয় নিধার্রণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি চলতি সময় থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, বিদ্যমান মিটার গেজ লাইন রেখে ডুয়েল গেজ করা সম্ভব নয়। কারণ, নতুন ডুয়েল গেজে নকশার পরিবতর্ন হবে। আগের রেল ট্র্যাকে দুটা ¯িøপার আছে, কিন্তু নতুন রেল ট্র্যাকে তিনটা ¯িøপার থাকবে। বিদ্যমান মিটার গেজ রেললাইন থেকে ডুয়েল গেজ আরও চওড়া হবে। সুতরাং নতুন করেই ডুয়েল গেজ রেলপথ নিমার্ণ করতে হবে। ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সচিব বলেন, চীনের সঙ্গে জিটুজি পদ্ধতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। তারাই ব্যয় নিধার্রণ করেছে।