দুই বোতাম চেপে ইভিএমে ভোটের প্রচারণা শুরু

প্রকাশ | ০৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রথমবারের মতো ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৫৪ লাখ ভোটারের ভোট ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে নিতে ব্যাপক প্রচারের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইভিএম দেখভালের দায়িত্বে থাকা ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি উইং) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, 'ভোটাররা যাতে ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়ে পুরো ধারণা পান, সেজন্য বিভিন্ন স্থানে প্রচারপত্র বিলি করা হবে। তাতে লেখা থাকবে মাত্র দুই বোতাম চেপেই কী করে এ যন্ত্রে ভোট দিতে হয়।' ৩০ জানুয়ারি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে মোট তিনজন প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে। ইভিএমে পছন্দের প্রতীকের পাশে সাদা বোতাম চেপে প্রার্থী বাছাই করতে হয়। এরপর সবুজ বোতামে চাপ দিলেই ভোট নিশ্চিত হয়ে যায়। মেশিনে ভোট দেওয়ার এ প্রক্রিয়া যে সহজ ও নির্ভরযোগ্য- সে বিষয়েই প্রচারে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান। সাইদুল ইসলাম বলেন, ভোটারদের সচেতন করার জন্য প্রচারের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি সব কেন্দ্রে ইভিএম প্রদর্শন ও ভোট দেওয়ার নিয়ম জানিয়ে প্রচার চালানো হবে। ২৮ জানুয়ারি হবে 'মক ভোটিং' বা ইভিএমে ভোট দেওয়ার মহড়া। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া প্রতি কেন্দ্রে সেনাবাহিনীর দুই সদস্যের কারিগরি টিম রাখা হবে। উত্তর ও দক্ষিণ সিটি মিলিয়ে প্রায় ২৬০০ কেন্দ্র, এর মধ্যে ১৪ হাজার ৬০০ বা তার বেশি ভোটকক্ষ থাকবে। দুই সিটির জন্য সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার ইভিএম প্রস্তুত রাখছে ইসি। ইভিএম প্রকল্পের অপারেশন পস্ন্যানিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার ইনচার্জ স্কোয়াড্রন লিডার কাজী আশিকুজ্জামান জানান, ৩০ জানুয়ারি ভোট সামনে রেখে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় ইভিএম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। ইভিএম কতটা নির্ভরযোগ্য? বরাবরের মতো এবারও ইভিএমে ভোট গ্রহণের বিরোধিতায় সরব হয়েছে বিএনপি। দলটির নেতাদের সন্দেহ, যন্ত্রে ভোট গ্রহণ হলে 'ম্যানিপুলেট' করার এবং ফলাফল 'নিয়ন্ত্রণ' করার সুযোগ থেকে যাবে। তবে নির্বাচন কমিশন বরাবরই বলে এসেছে, ইভিএমে বরং কারচুপির সুযোগ কমবে। ইভিএম প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন- ইভিএমে ইন্টারনেট সংযোগ থাকে না, ফলে হ্যাক করার সুযোগ নেই। জালভোট দেওয়া, কেন্দ্র দখল করে ভোট দেওয়া, একজনের ভোট আরেকজন দেওয়া, একবার ভোট দিয়ে থাকলে দ্বিতীয়বার ভোট দেওয়ার সুযোগ ইভিএমে নেই। নির্ধারিত সময়ের আগে মেশিন চালু হওয়ার সুযোগ নেই বলে ভোট গ্রহণ শুরুর সময়ের আগে অবৈধভাবে ভোট দেওয়া বা নেওয়ার সুযোগ নেই। পাসওয়ার্ড সংরক্ষিত বলে প্রিজাইডিং অফিসার/সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ছাড়া অন্য কারো পক্ষে মেশিন চালু করা সম্ভব না। ইভিএম ছিনতাই করে নিলেও অবৈধভাবে ভোট দেওয়া যাবে না। বায়োমেট্রিক তথ্য যাচাই ও ভোটারের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক বলে কেন্দ্র দখল বা পছন্দমত প্রিজাইডিং অফিসার/সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ করেও কারচুপি করার সুযোগ নেই। ভোট গ্রহণের পরপরই স্বল্প সময়েই কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা যায়। ভোট শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফলাফল মুদ্রণ ও বিতরণ করা সম্ভব। মেশিন ব্যবহারে সম্পূর্ণ লগ সংরক্ষণ করা হয়। ইভিএমে ভোট হয় যেভাবে যন্ত্রে ভোট গ্রহণ নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইভিএম মেলারও আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন। এ যন্ত্রে আঙুলের ছাপ, ভোটার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা স্মার্ট পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভোটার শনাক্ত করা হয়। নির্দিষ্ট কেন্দ্রের ভোটকক্ষে একজন পোলিং অফিসার ভোটার ভেরিফিকেশনের কাজটি করেন। ডেটাবেইজে ভোটার বৈধ বা অবৈধ হিসেবে শনাক্ত হলে মনিটরের মাধ্যমে তা দেখতে পান পোলিং এজেন্টরা। ভোটার বৈধ হলে মেশিনে ভোটারকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। ভোটার সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছে গেলে গোপন কক্ষে থাকা ব্যালট ইউনিটে ব্যালট ইসু্য করা হয়। ভোটার পছন্দের প্রার্থী ও প্রতীক বেছে নিয়ে ব্যালট ইউনিটের সাদা বোতামে চাপ দিলে প্রতীক সিলেক্ট হবে। ওই ব্যালট ইউনিটে সবুজ রংয়ের ঈঙঘঋওজগ বোতামে চাপ দিলে তার ভোট দেওয়া হয়ে যাবে।