দেশের প্রথম তারবিহীন শহর হচ্ছে সিলেট!

প্রকাশ | ০৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সিলেট শহর
যাযাদি ডেস্ক খুঁটি নেই। একসঙ্গে বিদু্যতের তারও নেই। নেই তারের ঘিঞ্জি পরিবেশ। তারপরও আলো ঝলমলে সিলেট! এ যেন সিলেটের আরেক নতুন সৌন্দর্য, নতুন পরিবেশ। এমন দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যের দেখা মিলবে কেবল সিলেটেই! সারাদেশে এই প্রথম সিলেটের বিদু্যৎ লাইন গেল ভূগর্ভে। আর সিলেট নগরের হযরত শাহজালাল (রা.)-এর দরগাহ সড়ক এই জঞ্জাল থেকে প্রথম মুক্ত হলো। অথচ একদিন আগেও প্রতিটি খুঁটিতে বৈদু্যতিক লাইনের সঙ্গে মাকড়সা জালের মতন ঝুলছিল টেলিফোন লাইনসহ অন্যান্য ক্যাবল লাইন। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক প্রথম ভূগর্ভে দিয়ে বিদু্যৎ সরবরাহ চালু হয়েছে। বিদু্যতের খুঁটি ও তারের জঞ্জাল মুক্ত হওয়ায় বাড়তি সৌন্দর্য বেরিয়েছে এই এলাকার। ফলে সিলেটকে ডিজিটাল সিটি করার লক্ষ্যে কাজ একধাপ এগুলো বলে মনে করছেন নগরের বাসিন্দারা। বিদু্যৎ লাইন মাটির নিচে নেওয়ার পর সোমবার দিন থেকে রাত অব্দি খুঁটি সরানোর কাজ করেন বিদু্যৎ বিভাগের লোকজন। এরপর বেরিয়ে আসে খুঁটিহীন নগরের সৌন্দর্য। আর সরকারের এই উদ্যোগকে আরেকটি নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখছেন সিলেটের মানুষ। এই সৌন্দর্যকে ধারণ করতে ছবি তুলে অনেকে নিজেদের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেছেন। প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মন্তব্য। আহাদ আম্বিয়া খোকন নামে ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, পুণ্যভূমি সিলেট থেকে শুরু হলো ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা। এজন্য প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নগরপিতাকে ধন্যবাদ জানান। নগরের দরগাহ গেট এলাকার বাসিন্দা আশরাফ হাসান কামরান তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, সিলেট শহরের দরগাহ গেট এলাকা বৈদু্যতিক খুঁটিবিহীন হওয়াতে ডিজিটাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। প্রকল্প পরিচালক কে এম নাজিম উদ্দিন বলেন, এটা সিলেটবাসীর জন্য পরম সৌভাগ্যের। সিলেটের মানুষের জন্য যেটা করা দরকার আমরা একাগ্রতার সঙ্গে করে যাচ্ছি। সিলেটের মেয়রও দিনরাত উপস্থিত থেকে কাজের তদারকি করছেন। সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেটকে স্মার্টনগরে রূপ দিতে তারের জঞ্জাল (বৈদু্যতিক লাইন) পাতালে নেওয়া হচ্ছে। আর পাতাল বৈদু্যতিক লাইন নির্মাণের ফলে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবে সিলেটবাসী। ভূগর্ভস্থ বৈদু্যতিক লাইন নির্মাণ তার নির্বাচনী প্রতিশ্রম্নতির একটি ছিল বলেন তিনি। এ প্রকল্প শেষ হলে পর্যায়ক্রমে পুরো নগরীর বৈদু্যতিক লাইন আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২ ফেব্রম্নয়ারি নগরের আম্বরখানায় ভূ-গর্ভ বৈদু্যতিক লাইন কাজের উদ্বোধন করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভলপমেন্টের অর্থায়নে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরে ৭ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ বিদু্যৎলাইন নির্মাণ করা হবে। প্রায় ৫শ' আরএম স্কয়ার ক্যাবল ক্যাপাসিটির তার নগরের ইলেক্ট্রিক সাপস্নাইস্থ বিদু্যৎ সাবস্টেশন কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে ভূগর্ভস্থ বিদু্যৎ সরবরাহের লাইন আম্বরখানা হয়ে যাবে চৌহাট্টায়। সেখান থেকে একটি লাইন যাবে নগরীর জিন্দাবাজার হয়ে সিটি কর্পোরেশন ও সিলেট সার্কিট হাউজ পর্যন্ত। আরেকটি লাইন যাবে চৌহাট্টা থেকে রিকাবীবাজার হয়ে ওসমানী হাসপাতাল পর্যন্ত। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া কাজ ২০১৯ সালের মার্চে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর দীর্ঘায়িত হয়ে ২০২০ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, ২০৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেটে বিদু্যতের ডিভিশন-১,২,৩,৪ এলাকায় নয়টি সাবস্টেশন হবে। বিভাগে অত্যাধুনিক অন্তত ২৫টি সাবস্টেশন হবে। নগরের ভূগর্ভ লাইনসহ সিলেট বিভাগে বিদু্যৎ উন্নয়নের কাজ চলছে। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে ৩৩ কেভি ২ কিলোমিটার, ১১ কেভি ২৫ কিলোমিটার, চার কেভি ১৮ কিলোমিটার ভূগর্ভ লাইন, ১১ দশমিক ৪ কেভি উপকেন্দ্র, বিদু্যৎবিভাগ সিলেটের চারটি ডিভিশনে ট্রান্সফরমার স্থাপন, ১১ কেভি লাইন ২০২ কিলোমিটার নতুন, সংস্কার ৩৫৬ কিলোমিটার, ১১ দশমিক ৪ কেভি নতুন ১৭৭ কিলোমিটার, সংস্কার ২২৮ কিলোমিটার, চার কেভি নতুন লাইন ৩৪৯ কিলোমিটার এবং ৩৫০ কিলোমিটার সংস্কার কাজ করা হবে।