অপরাধীদের অভয়ারণ্য বিমানবন্দর সড়ক

প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বিমানবন্দর সড়কের দুই পাশে সুরক্ষিত এলাকা। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে চওড়া ব্যস্ত সড়ক। সড়কের পাশে দৃষ্টিনন্দন সরু ফুটপাত। তবে বিমানবন্দর সড়কের ফুটপাতে পথচারীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। আলোক স্বল্পতার কারণে সন্ধ্যার পর এলাকাটি আলো-আঁধারিতে ঢেকে যায়। উপরন্তু শীতের ঘন কুয়াশা এলাকায় ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি করে। সুযোগ নেয় মাদকসেবী, ছিনতাইকারী ও ভবঘুরে অপরাধী। তাদের দৌরাত্ম্যে একের পর এক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে সেখানে। বনানী বাসস্ট্যান্ডের পর থেকে বিমানবন্দর সড়কের ফুটপাত অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আতঙ্ক নিয়ে পথচারীদের চলাচল করতে হয়। গত ৫ জানুয়ারি কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং হত্যাচেষ্টা করে মজনু নামে মাদকাসক্ত এক ব?্যক্তি। এরপরই এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সন্ধ?্যার পর বনানী রেলস্টেশন থেকে বিমানবন্দর স্টেশনের দিকে রেল লাইন ধরে হেঁটে দেখা যায়, প্রধান সড়কেও নেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। সড়কের আশপাশ অন্ধকার। রেল লাইনে ও সড়কের পাশের ঝোঁপের মধ্যে জড়ো হয়ে বসে আছে ভবঘুরে ও যৌনকর্মীরা। কেউ কেউ নেশা করছে। আবার অনেকেই অসামাজিক কাজে লিপ্ত। এই এলাকায় ১০ বছর ধরে বাস করছেন এক ভবঘুরে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কমলাপুর, বনানী এবং বিমানবন্দর স্টেশনের অনেক ভবঘুরের আস্তানা এটি। নেশা করার পাশাপাশি এ পথে যারা সন্ধ্যার পর যাতায়াত করে তাদের টার্গেট করে ছিনতাই করা হয়। ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মোবাইল, হাতঘড়ি, গলার চেইন, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিস কেড়ে নেয়া হয়। অনেকেই আবার অন?্য জায়গায় অপরাধ করে এখানে এসে আশ্রয় নেয়। রায়হান উলস্নাহ নামে এক পথচারী বলেন, 'এ পথ দিয়ে চলাচল করতে ভয় লাগে। ভবঘুরে, নেশাখোররা যেন পুরো রেল লাইন অপরাধের আখড়া বানিয়ে ফেলেছে। ভয়ে কিছু বলতেও পারি না। শেওড়া, কালশী, জোয়ার সাহারার বাসিন্দাদেরই বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।' স্থানীয়রা বলছেন, মূলত সন্ধ্যার পর ভবঘুরেরা এখানে বেশি আসে। বনানী থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত আট কিলোমিটারের এই সড়কটিতে যানবাহন নির্বিঘ্নে যাতায়াত করলেও পথাচারীরা পড়েন বিপদে। ফুটপাতজুড়ে আছে সৌন্দর্যবর্ধনের বাতি, যা পর্যাপ্ত নয়। গাড়ির আলোই পথচারীদের ভরসা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকার অন্য প্রধান সড়কে ৫২ ফিট পরপর লাইট থাকলেও এ সড়কে আছে ৮৪ ফিট পর। গুলশান জোনের উপপুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে বলেন, 'এলাকাটি সংরক্ষিত। বিশেষ করে বিভিন্ন বাহিনীর অফিস, বাসাবাড়ি। পাশেই রয়েছে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা। তারপরও পুলিশের নিয়মিত টহল থাকে। ইতোমধ্যে অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে এসব স্থানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হচ্ছে।' র্ যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান সরওয়ার বিন কাশেম সাংবাদিকদের জানান, বিমানবন্দর সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি জন?্য এক প্রকার ঝোঁপঝাড় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে ইতোমধ?ে্য উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। পুরো রেল লাইন এলাকায় ছিল অপরাধীদের আনাগোনা। ভবঘুরেদের কারণে এই এলাকায় প্রতিনিয়ত ছিনতাই, চুরিসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।